ধরো, তুমি একটি ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলে। প্রতিযোগিতার শর্ত হচ্ছে, তুমি কেবল সবুজ রং ব্যবহার করতে পারবে। কী আঁকবে তুমি? গাছগাছালি, বনজঙ্গল, লতাপাতার বাইরে সবুজ রং দিয়ে আর কী আঁকা যায়?
রঙিন প্রাণিকুলের অনেকেই কিন্তু বেঁচে থাকার সুবিধার জন্য সবুজ রং ধারণ করে। এই যেমন শিকারিদের চোখ এড়িয়ে চলার জন্য সবুজ রং কার্যকর। কারণ, যেকোনো বুনো পরিবেশের সঙ্গে সবুজ রং মিলে যায়। এভাবে সবুজ প্রাণীদের লুকিয়ে থাকা সহজ হয়। একই কারণে এসব প্রাণী শিকার করার সময়ও সুবিধা পায়। ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থেকে অতর্কিত হামলা করতে পারলে শিকারে সফলতার হার বাড়ে।
সবুজ রঙের প্রাণীদের পরিচিতি কম হলেও সংখ্যা ভালোই। চলো, প্রাণিকুলের এমন পাঁচটি সদস্যের সঙ্গে পরিচিত হই, যারা সবুজ রঙে অনন্য সুন্দর!
গ্রিন মাম্বা
পৃথিবীর অন্যতম বিষধর সাপ গ্রিন মাম্বা। দেখতে আকর্ষণীয় এই সাপ উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের। আফ্রিকায় সচরাচর তিন প্রজাতির গ্রিন মাম্বা পাওয়া যায়। জেমসনস গ্রিন মাম্বা, পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিন মাম্বা এবং পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিন মাম্বা। একটি গ্রিন মাম্বা সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গ্রিন মাম্বারা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে শিকারের অপেক্ষায়। সুযোগ পেলেই এরা আকস্মিক আক্রমণ করে শিকারকে পুরো গিলে ফেলে। এদের প্রধান খাদ্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ছোট আকারের পাখি।
ওয়েলিংটন গ্রিন গেকো
নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠীর লোকজন এই সরীসৃপকে ‘মোকো কাকারিকি’ নামে চেনে। ওয়েলিংটন গেকো পাওয়া যায় নিউজিল্যান্ডের উত্তরে দ্বীপাঞ্চলে। এই সবুজ সরীসৃপের মুখ নীল আর শরীরজুড়ে ছোট সাদা বিন্দুর মতো দাগ আছে। এরা ৪৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। সূর্যের আলো পছন্দ করলেও এরা রাতে ছোট পোকামাকড় শিকার করে খায়। আকারে ছোট হলেও ওয়েলিংটন গ্রিন গেকো বেশ আক্রমণাত্মক। এরা উত্তেজিত হলে নিজেদের নীল মুখ খুলে কর্কশ শব্দ করে।
আনডুলেট ট্রিগারফিশ
অনেক সময় মানুষ শখ করে ট্রিগারফিশ অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখে। এই প্রজাতির মাছ সাধারণত আক্রমণাত্মক হয়। তাই এদের বড় আকারের অ্যাকুয়ারিয়ামে একা রাখতে হয়। অবশ্য ট্রিগারফিশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মাছ। মানে এই মাছ কনকনে ঠান্ডা পানিতে থাকতে পারে না। এরা কেবল উষ্ণ পানির অ্যাকুয়ারিয়ামেই থাকতে পারে। ট্রিগারফিশ দেখতে খানিকটা চ্যাপ্টা। এদের সবুজ রঙের গায়ে কমলা রঙের দাগ দেখা যায়। মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে, যা দিয়ে সমুদ্রে তারা সামুদ্রিক আর্চিন, ঝিনুক ও শেওলা খেয়ে বেঁচে থাকে।
লুনা মথ
একধরনের নিশাচর রেশম পোকা হলো লুনা মথ। এই পোকার ফ্যাকাশে সবুজ ডানা, লম্বা লেজ আর মাথায় অ্যানটেনা থাকে। অন্যান্য রেশম পোকার চেয়ে লুনা মথ আকারে বড় হয়। কিন্তু মানুষ এই পোকা খুব কমই দেখতে পায়। এদের জীবনকাল ৭ থেকে ১০ দিন। এই পোকা জীবনের সিংহভাগ কাটায় বংশবৃদ্ধি করে। একটি স্ত্রী লুনা মথ মারা যাওয়ার আগে গাছের পাতায় প্রায় ২০০টি ডিম পাড়ে।
এমারেল্ড ট্রি বোয়া
এমারেল্ড ট্রি বোয়া কোরালাস ক্যানিনাস নামেও পরিচিত। এই সাপ কিন্তু বিষধর নয়। কিন্তু এরা খ্যাপাটে ধরনের। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করে। এদের মূলত পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকায়। উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের এই সাপ অসাধারণ শিকারি। একটি এমারেল্ড ট্রি বোয়া চার থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের লেজ শিকারকে খুব শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে পারে। আর গায়ের রং সাহায্য করে বড় শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে। অবশ্য জন্মের সময় এদের গায়ের রং সবুজ থাকে না। জীবনের প্রথম বছরে এই সাপের শরীর উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হয়।
এ ছাড়া ময়ূর আর সবুজ টিয়া পাখিকে তো সবাই চেনে। প্রাণিকুলের এমন আরও সদস্য আছে, যারা সবুজ রঙের। আড়ালে থাকা এসব প্রাণীর সম্পর্কে জানতে পারলে রোমাঞ্চ লাগে, তা–ই না?