দুপেয়ে প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম পাখি উটপাখি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখির তালিকায়ও একে স্থান দিতে হবে। তবে পাখি হলেও এরা উড়তে পারে না। কিন্তু প্রচণ্ড বেগে দৌড়াতে পারে। বলা হয়, দ্রুতগতির এই পাখি বিপদ দেখলে বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে রাখে। মাথা বালুর মধ্যে লুকিয়ে রাখলেই বিপদ কেটে যাবে, এই আশায় এমন করে উটপাখি। তবে মাথা বালুর মধ্যে থাকলেও পুরো শরীর থাকে বাইরে।
ইন্টারনেট ঘাঁটলে কিছু কিছু ওয়েবসাইটে উটপাখি নিয়ে এমন রোমাঞ্চকর তথ্য পাওয়া যাবে। তবে ওপরে উটপাখির লুকানোর যে পদ্ধতিটার কথা বললাম, তা সম্পূর্ণ ভুয়া। উটপাখি লুকানোর জন্য মোটেও এমনটা করে না। কারণ, বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে দিলে তো শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে সেখানেই ভবলিলা সাঙ্গ হবে। এতটা বুদ্ধ নিশ্চয়ই ওরা নয়। তাহলে এই মিথটার উত্তপত্তি হলো কীভাবে?
এই প্রশ্নের বেশ কয়েকটা উত্তর আছে। আমেরিকান অস্ট্রিচ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বাচ্চা প্রজননের সময় উটপাখি ৬-৮ ফুট প্রশস্ত ও ২-৩ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে বালুর মধ্যে। সেখানেই ডিমগুলো নিরাপদে রাখা হয়। এরপর পুরুষ ও স্ত্রী উটপাখি পালা করে ডিমের আশপাশে পাহারা দেয়। এই পাহারার কাজ করার সময় দিনে কয়েকবার উটপাখি তাদের ডিমগুলো নিজেদের ঠোঁট ব্যবহার করে ঘুরিয়ে দেয় এবং বারবার পরীক্ষা করে। আসলে নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য উটপাখি বারবার ডিমগুলো দেখে এবং সাজিয়ে রাখে। তখন দূর থেকে উটপাখি দেখা গেলেও গর্তটা দেখা যায় না। শুধু মনে হয় ওরা মাথাটা বালুর মধ্যে গুঁজে দিয়েছে। এই বিভ্রান্তির সঙ্গে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটাও ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, বালুর বালুর মধ্যে তো আর খাবার লুকানো থাকে না যে সে জন্য মাথা গুঁজবে। নিশ্চয়ই ভয়ে লুকানোর চেষ্টা করেছে। এভাবে এক কান দুই কান করে বিষয়টা প্রচলিত হয়ে গেছে। আর এখন ইন্টারনেটের যুগে মিথ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগে না।
মিথটি চালু হওয়ার এটি মাত্র একটা কারণ। আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, উঠপাখির মাথা এদের শরীরের তুলনায় অনেক ছোট। ফলে দূর থেকে শরীর দেখা গেলেও মাথাটা দেখা যায় না। এ অবস্থায় মাথা নিচের দিকে রাখলে মনে হয়, বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে দিয়েছে। আবার বালুর রঙের সঙ্গে উটপাখির মাথা ও গলার রঙের কিছুটা মিল রয়েছে। তাই মানুষ আরও সহজে বিভ্রান্ত হয়।
এবার ভেবে দেখো তো, তুমি কি কখনো একটা বিড়ালের ভয়ে লুকিয়ে থাকবে? মোটেই থাকবে না। কোনো প্রাণীর ভয়ে উটপাখির লুকিয়ে পড়ার ব্যাপারটাও অনেকটা এমন। ব্যাখ্যা করছি।
একটা উটপাখির ওজন হয় প্রায় ১৫০ কেজি। এমন ওজনদার একটা পাখিকে লড়াইয়ে হাড়িয়ে দেওয়ার মতো প্রাণী খুব কম আছে। তা ছাড়া বিপদ দেখলে বালুর মধ্যে মাথা না গুঁজে তো দৌড় দিতে পারে। ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগে এরা দৌড়াতে পারে। তাহলে এই সহজ উপায়গুলো বাদ দিয়ে কেন ওরা বালুতে মুখ গুঁজবে? প্রশ্নই ওঠে না।
শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য উটপাখির অনেক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। শত্রুর ভয়ে বালুর নিচে মাথা গোঁজার কোনো কারণ নেই।
আবার ধৈর্যের কথা যদি বলো, তাতেও উঠপাখির কোনো সমস্যা নেই। এরা প্রয়োজনে টানা ১৬ কিলোমিটার পথ ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। ফলে দৌড়ে এদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা খুব প্রাণীই রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো চিড়িয়াখানার তথ্যমতে, ৯ ফুটের উটপাখির লাথিতে সিংহও কাবু হয়ে যেতে পারে। ফলে দেখা যাচ্ছে, শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য উটপাখির অনেক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। শত্রুর ভয়ে বালুর নিচে মাথা গোঁজার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া এরকম মাথা গুঁজে যে বেশি সময় বাঁচা যাবে না, তা আগেই বলেছি।
তাই উটপাখির মাথা গোঁজার এই বিষয়টা স্রেফ মিথ। এর কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, স্যান ডিয়াগো জু ডট অর্গ