পৃথিবীর আকাশে একটা চাঁদই দেখি আমরা। নতুন আরেকটি চাঁদের খবর পেলে তা মেনে নেওয়া কঠিন বটে। তবে অক্টোবরের শুরু থেকে পৃথিবীর আকাশে সত্যিই দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় আরেকটি চাঁদ। এটি আমাদের পরিচিত একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের মতো নয়। এটি একটি ছোট গ্রহাণু। গ্রহাণুটির আকার খুবই ছোট। মাত্র ৩২ ফুট বা ১০ মিটার। অন্যদিকে আমাদের চাঁদের ব্যাস প্রায় ৩ হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার। বোঝা যাচ্ছে কত ছোট এই ছোট্ট চাঁদ।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রিসার্চ নোটস অব দ্য আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি (আরএনএএএস) জার্নালে এই ছোট গ্রহাণু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির নাম দিয়েছেন ‘২০২৪ পিটি৫’। তবে বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘মিনি মুন’ বলেও উল্লেখ করেছেন। পৃথিবীর কক্ষপথে দুই মাস অতিবাহিত করার পর ২৫ নভেম্বর এই গ্রহাণুটি আবার সৌরজগতের নিজস্ব পথে চলতে শুরু করবে।
এই গ্রহাণুটির প্রথম দেখা মেলে গত ৭ আগস্ট। গ্রহাণুটির খোঁজ করেছে নাসার একটি বিশেষ টেলিস্কোপ। যেটির নাম অ্যাস্টেরয়েড টেরিস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট এলার্ট সিস্টেম (এটলাস)। এই টেলিস্কোপটি আকাশে ঘুরতে থাকা ভাসমান বিভিন্ন বস্তু, যেমন গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদি খুঁজে বের করার কাজ করে। বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে কি না এবং যদি আসে তাহলে কতটা কাছে আসবে, সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
২০২৪ পিটি৫ নামক গ্রহাণুটি অর্জুন গ্রহাণু বেল্ট থেকে এসেছে, যেখানে পৃথিবীর অনুরূপ কক্ষপথে ঘুরতে থাকা এ রকম আরো অনেক শিলা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে এই গ্রহাণুগুলোর মধ্যে কিছু আমাদের গ্রহের খুব কাছাকাছি আসে। কখনো কখনো মাত্র ২.৮ মিলিয়ন মাইল বা ৪.৫ মিলিয়ন কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে। গবেষকদের মতে, যদি এই ধরনের একটি গ্রহাণু অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ২০০ মাইল ঘণ্টা বেগে চলে, তাহলে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টানে এটি কিছু সময়ের জন্য কক্ষপথে ঘুরতে থাকে।
২০২৪ পিটি৫ গ্রহাণুর সঙ্গেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। পৃথিবীর দিকে গ্রহাণু আসা খুব সাধারণ ঘটনা। অনেক গ্রহাণুই পৃথিবীর কাছে এসে আবার চলে যায়। কিছু গ্রহাণু আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে বড় আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করতে পারে।
যদি কোনো বড় গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তাহলে নাসা সেটিকে অন্য পথে পাঠিয়ে দেয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় জ্যোতির্বিজ্ঞান পডকাস্টের উপস্থাপক ডক্টর জেনিফার মিলার্ড বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে জানিয়েছেন, ‘এই গ্রহাণুটি ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করবে। আগামী ২৫ নভেম্বর সেখান থেকে বেরিয়ে আবার এর নিজস্ব কক্ষপথে চলে যাবে।’
এই ঘটনাটি একবারে নতুন নয়। এর আগেও পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকা ছোট্ট গ্রহাণু দেখা গেছে। ২০০৬ সালে ‘২০০৬ আরএইচ১২০’ নামের ২০ ফুট চওড়া একটি গ্রহাণু চলে আসে পৃথিবীর কাছে। প্রায় ৯ মাস ধরে আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে এটি। আরেকটি গ্রহাণু হলো ‘২০২০ সিডি৩’। যার দৈর্ঘ্য ছিল ১১.৫ ফুট। ২০২০ সালের মার্চে পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে এটি। তবে বিদায় নেওয়ার আগে এটি তিন বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরেছিল। আবার এমন অনেক গ্রহাণু আছে, যা বারবার পৃথিবীর কাছে আসে। ২০২২ এনএক্স১ গ্রহাণু ১৯৮১ ও ২০২২ সালে দুবার আমাদের গ্রহের মিনি মুন হয়ে উঠেছিল।
বিজ্ঞানীরা এর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, কেউ যদি এবারের মিনি মুন দেখতে না পান। তাহলে অপেক্ষা করতে হবে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞানী আরও জানিয়েছেন, এটি ছোট ও দূরে থাকায় গ্রহাণুর পৃষ্ঠতল সূর্যের আলো খুব কম প্রতিফলিত করে। তাই এটি দেখার জন্য শক্তিশালী টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার প্রয়োজন হবে।
সূত্র: বিবিসি, স্পেস ডটকম