১৫ দিনের মধ্যে শিশু-কিশোরদের ঘুমের সাইকেল ঠিক করতে যা করতে হবে
রাতে ঘুম না হলে সকালটা ভালো কাটতে চায় না। সারাদিন ক্লান্তি লাগে, মেজাজ থাকে খিটখিটে। স্কুলে গিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া যায় না। এসব সমস্যার মূল কারণ পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। অথচ নিয়ম মেনে চললে রাতের ঘুম হতে পারে দারুণ আরামদায়ক।
কিশোর-কিশোরীদের সুস্থ থাকার জন্য এবং পড়াশোনায় ভালো করতে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ শিশু পর্যাপ্ত ঘুমায় না। এতে সারাদিন চোখে চোখে ঘুম ঘুম ভাব থাকে। ঘুমের অভ্যাস ঠিক করতে এখানে শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু সহজ পরামর্শ রইল। এগুলো মেনে চললে মোটামুটি ১৫ দিনের মধ্যে শিশু-কিশোরদের ঘুম ঠিক হয়ে যাবে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাও
নিয়ম মেনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করা খুবই জরুরি। প্রতিদিন যদি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাও এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠো, তাহলে শরীর নিজেই এই ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। এতে সহজেই ঘুম আসে এবং সকালে উঠতেও সমস্যা হয় না। তোমার যদি প্রতিদিন সকাল সাতটায় উঠতে হয়, তাহলে অন্তত রাত নয়টা-দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। নয়তো প্রয়োজনীয় ১০ ঘণ্টার ঘুম পূর্ণ হবে না।
ঘুমানোর আগে রিল্যাক্স থাকা জরুরি
রাতের ঘুম ভালো করতে চাইলে ঘুমের আগে কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে রিল্যাক্স করো। রিল্যাক্স মানে তোমার মন যাতে কিছু নিয়ে চিন্তিত না থাকে। হয়তো সকালে ৭টায় ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ করতে হবে, এটা নিয়ে তোমার মধ্যে টেনশন কাজ করতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে বাড়ির কাজ শেষ করে রাখতে পারো। এক ঘণ্টা আগে থেকে যে নিজেকে রিল্যাক্স করার কথা বলেছিলাম, সেই এক ঘণ্টার প্রথম ২০ মিনিটে পরের দিনের কাজ কিছুটা গুছিয়ে রাখতে পারো। যেমন স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো, পরদিনের পোশাক ঠিক করে রাখো যাতে হাতের কাছেই থাকে। এতে সকালে সময় বাঁচবে এবং মনের ওপর চাপও কম পড়বে। এরপরের ২০ মিনিট নিজেকে দাও। দাঁত ব্রাশ করতে পারো, হাত মুখ ধুয়ে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নাও। আর শেষ ২০ মিনিটে একটু আরামদায়ক কিছু করতে পারো। যেমন একটা গল্পের বই পড়তে পারো কিংবা শুনতে পারো হালকা গানও। এতে মন শান্ত হবে এবং ঘুম আসতে সুবিধা হবে।
বিকেলে চা, কফি বা ড্রিংকস না খাওয়া
দিনের যেসব অভ্যাসের কারণে তোমার ঘুম নষ্ট হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম ড্রিংকস ও চা-কফি। এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। বিকেলের পর চা, কফি, চকোলেট বা সফট ড্রিংকস খাওয়া কমাতে হবে। কারণ, এতে ক্যাফেইন থাকে, যা ঘুমের শত্রু। শরীরচর্চা করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কিন্তু ঘুমানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারী ব্যায়াম করলে ঘুম আসতে দেরি হয়। রাতে ঘুমানোর আগে ফোন, ট্যাব বা ভিডিও গেম থেকেও দূরে থাকা জরুরি। এসব ডিভাইসের আলো মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে। রাতকেও দিন বলে মনে হয়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
প্রতিদিন একভাবে ঘুমাও
অনেকে মনে করে, শুক্রবার ছুটি আছে তাহলে বৃহস্পতিবার একটু দেরি করেই ঘুমাই। কিন্তু এটা ঠিক নয়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। হঠাৎ ছুটির দিনে বেশি বা কম ঘুমালে ঘুমের চক্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে। টানা ৬ দিন নিয়ম মেনে যা অর্জন করেছ, তা শেষ হয়ে যাতে পারে এই একদিনের অনিয়মে। তাই ছুটির দিনেও চেষ্টা করো তোমার নির্ধারিত রুটিন বজায় রাখতে।
তবে এত কিছু পরেও যদি তোমার ঘুম না আসে, তাহলে বিছানায় শুয়ে দুশ্চিন্তা না করে অন্য কিছু করো। অনেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুম না এলে দুশ্চিন্তা করে। এ কারণে ঘুম আরও দেরিতে আসে। ধরো, তোমার আগামীকাল সকালে পরীক্ষা। তাই তুমি ঠিক করলে আজ একটু দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু বিছানায় শুয়ে দেখলে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের চেয়ে ১ ঘণ্টা বেশি কেটে গেছে কিন্তু তুমি এখনো ঘুমাতে পারোনি। তখন তোমার মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু হবে। আসলে তখন মনে প্রশ্ন জাগে, আমি কি আগামীকাল ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারব? আর এভাবেই শুরু হয় দুশ্চিন্তা। তাই এমন দুশ্চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ো।
এরপরেও যদি তোমার ঘুম না আসে তাহলে বৃথা ঘুমানোর চেষ্টা করো না। উঠে একটু বসে থাকো। একটা গল্পও পড়তে পারো। অথবা হাঁটাহাঁটি করতে পারো পাঁচ মিনিট। দেখবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।
আর ঘুম ঠিকমতো হলে মন থাকবে ফুরফুরে। ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া যাবে ভালোভাবে। শরীরও ভালো থাকবে। তাই ঘুমকে অবহেলা না করে নিয়ম মেনে ঘুমাও। এতে তোমার মন ও শরীরসহ সবকিছু চলবে ঠিকঠাক!
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র, হেলথলাইন ডটকম ও মায়োক্লিনিক ডটকম