ব্রাহমা গরু কেন এত জনপ্রিয়
বিশ্বজুড়ে গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে ব্রাহমা জাতের গরু দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এদের বড় আকার, শান্ত স্বভাব ও উচ্চমানের মাংসের জন্য খ্যাতি আছে। এসব কারণেই খামারি ও গরুর মাংস খেতে যারা পছন্দ করে, তাদের কাছে আকর্ষণীয় এ জাত। কিন্তু কী কারণে ব্রাহমা গরু এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দিনে দিনে?
প্রথমে জানা যাক ব্রাহমা জাতের গরুর ওজনের দিকে। একটি খামারের পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা ষাঁড়ের ওজন ৮৮৭ কেজি থেকে ১২ শ কেজি বা ২ হাজার পাউন্ড হয়ে থাকে। আর ব্রাহমা গাভির ওজন ৪৫০ থেকে ৬৭৫ কেজি বা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে। জন্মের সময় একটি শিশু ব্রাহমা বাছুর ৬০ থেকে ১০০ পাউন্ড ওজনের মধ্যে হয়ে থাকে। আর কিছু ব্রাহমার ওজন আরও বেশি হয়। ব্রাহমার উচ্চতায় ১২৮ থেকে ১৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
ব্রাহমা জাতের গরু স্বভাবে খুবই শান্ত। এ ছাড়া এই জাতের গরু বুদ্ধিমান, কৌতূহলী এবং কিছুটা লাজুক স্বভাবের। এরা প্রায়ই এদের আশেপাশের বিষয়ে বেশ আগ্রহী এবং নতুন জিনিসের প্রতি কৌতূহলি হয়। মাঝেমধ্যে লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি করলেও খুব সীমিত। এ ছাড়া মালিক ও রাখালের কথা বা নির্দেশ বুঝতে পারে। বলা যেতে পারে এক ধরনের প্রভুভক্ত গরু এরা।
ব্রাহমা জাতের গরু গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আদর্শ। তাই এটি অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জনপ্রিয়। সে দিক থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের খামারিদের কাছেও এটি জনপ্রিয় ব্রিডগুলোর একটি।
ব্রাহমা জাতের গরু চামড়ার রঙের দিক থেকেও অনন্য। এদের গায়ের রং যে কারোরই চোখে পড়বে। তিনটি রঙের গরু সচরাচর দেখা যায়। এর মধ্যে একটি সোনালি রং বা ব্রোঞ্জ রং থেকে শুরু করে গাঢ় লাল পর্যন্ত। আরেকটি সাদা থেকে হালকা বা গাঢ় ধূসর রঙের। অন্যটি রূপালি রঙে জন্মগ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে গাঢ় কালো রঙে পরিণত হয়। এদের মাথার শিংয়ের পাশের রং, গলার নিচে ঝোলা চামড়ার রং, কুঁজের রং ও আকার চোখে পড়ার মতো। এটিও একটি এদের জনপ্রিয়তার কারণ।
ব্রাহমা জাত হলো আমেরিকায় উদ্ভাবিত একটি গরুর জাত। যা মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পরিচিত। ১৮৮৫ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ভারতীয় গরুর জাতের সংকরায়ণ করে এই জাতটি তৈরি করা হয়েছিল। মাংসের স্বাদের জন্যও পছন্দের শীর্ষে এরা। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় গরুর জাত।
ব্রাহমা জাতের গরু গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আদর্শ। তাই এটি অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জনপ্রিয়। সে দিক থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের খামারিদের কাছেও এটি জনপ্রিয় ব্রিডগুলোর একটি। যেহেতু এদের জাতটি অন্যান্য গরুর তুলনায় অনেক উন্নত সেহেতু এই জাতটি বিভিন্ন রোগ ও পরজীবীর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধী; খুব কমই রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। আর এরা খুব কম সময়ে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করতে যথেষ্ট। দুধের উৎপাদন ক্ষমতার দিক থেকে এটি শীর্ষস্থানীয় না হলেও, ব্রাহমা গরুর দুধ ভালো মানের হয়।
ব্রাহমা গরুর মাংস, দুধ, চামড়া এবং অন্যান্য উপাদানের জন্য একটি মূল্যবান উৎস। এদের পরিবেশগত সহনশীলতা, শান্ত স্বভাব এবং উন্নত জাত তৈরির ক্ষমতা এদেরকে খামারি ও ভোক্তাদের কাছে এত জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সূত্র: ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া,ভিএইট, ব্রাহমা অর্গ