জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এই পরিবর্তনকে ঠেকাতে কাটা পড়ছে ১৫৮টি চেরি ব্লসমগাছ। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের পুনরুদ্ধার প্রকল্প সমুদ্রের পাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল পুনর্গঠন করবে। কাজ শেষ হলে আবার ২৭৪টি নতুন চেরিগাছ লাগাবে।
এই বসন্তে ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের প্রিয় এই চেরি ব্লসমগাছের বয়স হবে দুই দশকের বেশি। এই বসন্তে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্বাভাবিক শীত পড়েছে ওই এলাকায়। ফলে জোয়ার আসে এমন নদী বা সমুদ্রতীরের চারপাশের চেরি ফুল ১৭ মার্চে ‘পিক ব্লুমে’ (সর্বোচ্চ ফুল ফোটার দিন) পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক বছরের তুলনায় এক থেকে তিন সপ্তাহ আগে ফুলগুলো ফুটে গেছে।
এই বসন্তের ন্যাশনাল চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল শেষ হওয়ার পর ৩ হাজার ৭০০টি থেকে ১৫৮টি চেরিগাছ কেটে ফেলা হবে। নতুন করে দেয়াল তৈরি হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনার বিরুদ্ধে এই এলাকাকে শক্তিশালী করবে। শুধু চেরি ব্লসমগাছ কাটা হবে না, অন্য প্রজাতিসহ কাটা হবে প্রায় ৩০০ গাছ। প্রকল্পটি শেষ হলে অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে মোট ২৭৪টি নতুন চেরি ব্লসমগাছ রোপণ করা হবে। মোট ৪৫৫টি গাছ লাগানো হবে।
এই নির্মাণকাজ করবে ফেডারেল সরকার। তিন বছরে খরচ হবে ১১৩ মিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যতে প্রায় ১০০ বছরের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়াকে সহ্য করবে এই দেয়াল। এই এলাকার চারপাশের জমি গত শতাব্দীতে প্রায় পাঁচ ফুট ডুবে গেছে। পানির স্তর বেড়েছে এক ফুটের বেশি। সমুদ্র অববাহিকার পানি জোয়ারে বেড়ে যায়। মেরু অঞ্চলের বরফগলা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে পানির উচ্চতা বাড়ছে। উচ্চ জোয়ারের সময় এই এলাকার ভ্রমণকারীরা বলেছেন, ডুবে যাওয়া ফুটপাত, বেঞ্চ ও গাছ দেখেছেন। উচ্চ জোয়ারে দিনে প্রায় দুবার এ ঘটনা ঘটে।
জোডি অ্যাক্সিন নামের এক দর্শনার্থী বলেছেন, ‘২০ বছর আগে যেখানে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছিল, সেটা এখন পানির নিচে। পুরো রাস্তা, পুরো জায়গাটাই এখন পানির নিচে।’
১৫৮টি কাটা গাছের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত গাছ, ২৫ বছর বয়সী স্টাম্পি বুড়িয়ে গেছে। ২০২০ সালে এই চেরি ব্লসমগাছটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল জরাজীর্ণ আকৃতির জন্য। আংশিক পচা এই গাছের মাত্র কয়েকটি শাখা টিকে আছে। তবে স্থানীয় মানুষের কাছে গাছটি সেলিব্রিটির মর্যাদা অর্জন করেছে। মানুষ গাছটি দেখতে আসে। গাছটিকে ভালোবাসে। স্টাম্পি জোয়ারের লোনাপানি থেকে রক্ষা পায় না। উচ্চ জোয়ারের সময় (পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়) এই গাছের কাণ্ড কয়েক ইঞ্চি পানির নিচে ডুবে যায়। বারবার পানি জমে থাকায় গাছটি ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই গাছটির অবস্থা এত জীর্ণ।
অপসারণের জন্য ঠিক করা গাছগুলো কত পুরোনো, তা ঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে চেরিগাছগুলো ১৯১২ সালে জাপান থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখানে স্টাম্পি হারিয়ে যাবে না। এই গাছ কলম করে রাখা হবে। দেয়াল তৈরি হলে নতুন সুরক্ষিত এলাকায় রোপণ করা হবে। আইকনিক চেরি ব্লসমগাছের নতুন আরেক প্রজন্ম বেড়ে উঠবে এই সমুদ্রতীরে।