মঙ্গলে পাওয়া গেছে তরল পানির মহাসাগর

মঙ্গল গ্রহ

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্বের সন্ধান করে চলেছেন। আর সেই সন্ধানে বিজ্ঞানীরা আরও একটি ধাপ এগিয়েছেন। সম্প্রতি মঙ্গলে তরল পানির সাগরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আমাদের ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। এই আবিষ্কারের ফলে মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে। এই গবেষণার ফলাফল ১২ আগস্ট প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস) জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে মঙ্গল গ্রহে প্রচুর তরল পানি রয়েছে। তাঁদের মতে, এই পানি মঙ্গল গ্রহের পুরো পৃষ্ঠতলকে প্রায় এক মাইল গভীর পানিতে ডুবিয়ে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই তরল পানির সাগরে পাওয়া যেতে পারে মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে ও সান দিয়েগোর বিজ্ঞানীরা এক যৌথ গবেষণায় মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠতলের নিচে এই বিপুল পরিমাণ তরল পানির অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তাঁরা এই লাল গ্রহের পাথুরে পৃষ্ঠতলের নিচে এই খোঁজ চালালেন? তাঁরা মূলত এই গবেষণার জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগৃহীত সিসমিক ডেটা থেকে মঙ্গল গ্রহের ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ও উল্কার প্রভাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গভীর জলাশয়ের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ জলাধার ও তেলক্ষেত্র খুঁজে বের করতে যে শিলা পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেন, সেই একই ধরনের মডেল ব্যবহার করে মঙ্গল গ্রহের ভূত্বকের ক্ষুদ্র ফাটল ও ছিদ্রগুলোয় এই গভীর জলাশয়ের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন

গবেষকেরা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৫ থেকে শুরু করে ২০ কিলোমিটার নিচে পানি আছে বলে ধারণা করছেন। কিন্তু এই পানিতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের এখনকার প্রযুক্তি যথেষ্ট নয়। তাই ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ বসবাস করতে গেলে এই পানি তাঁদের খুব একটা বেশি কাজে লাগবে না। যদিও এই পানি আমাদের কাজে লাগবে কি না, তা নিশ্চিত নয়, তবু এই আবিষ্কার মঙ্গল গ্রহের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য দিয়েছে। আর যদি ভবিষ্যতে এই পানি ব্যবহার করতে পারি, তাহলে হয়তো মঙ্গলে অন্য কোনো জীবন আছে কি না, তা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীরা নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগৃহীত সিসমিক ডেটা থেকে মঙ্গল গ্রহের ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ও উল্কার প্রভাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গভীর জলাশয়ের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি বার্কলির পৃথিবী ও গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল মাঙ্গা। তিনি গবেষণা সম্পর্কে বলেন, পৃথিবীতে যেভাবে গভীর সমুদ্র বা খনির মতো জায়গায় জীবন থাকে, তেমনি মঙ্গলের ভূগর্ভস্থ সাগরেও জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। কারণ, আমরা জানি যে পানি জীবনের জন্য খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলে এখন পর্যন্ত জীবন পাওয়া যায়নি। তবে এমন জায়গা থাকতে পারে, যেখানে জীবন থাকার সম্ভাবনা আছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে কোটি কোটি বছর আগে গ্রহটিতে পানি ছিল। সে পানি প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে উধাও হয়ে যায়। হয়তো গ্রহটির পৃষ্ঠের নিচে এখনো বরফ আকারে পানি রয়েছে। এ ধারণা থেকেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন এই তরল পানির সাগর। তাঁরা মনে করেন, মঙ্গলের চৌম্বকক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া, কোনো বড় উল্কা আঘাত করার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এত বিশাল পরিমাণ পানি হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল, সেটি ছিল একটি বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবং মঙ্গল গ্রহের ভেতর কী আছে, তা জানতে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের পাঠানো তথ্য ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ল্যান্ডার ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মঙ্গলে ছিল। ল্যান্ডারটির তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের ভেতরের গঠন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন।

সূত্র: ফোর্বস, লাইভ সাইন্স

আরও কিআ

আরও পড়ুন