অবাক হলেও সত্যি, এ আটটি প্রাণী বাস করে আগ্নেয়গিরির পাশে

আগ্নেয়গিরি বা অগ্ন্যুৎপাতের নাম শুনলেই যেখানে আমরা ভয়ে অস্থির হয়ে যাই; সেখানে কিছু প্রাণী আগ্নেয়গিরির আশপাশেই গড়ে তুলেছে তাদের সাম্রাজ্য। কেউবা আয়েশ করে, কেউবা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই কাটাচ্ছে তাদের দিনকাল। শুনতে অবাক লাগছে? চলো, তবে জেনে নিই সেসব প্রাণীর কথা, যারা আগ্নেয়গিরিকে ভালোবেসে তার আশপাশেই কাটিয়ে দিচ্ছে যুগের পর যুগ।

অ্যাক্সোলোটলছবি: ব্রিটানিকা

ভলকানো স্নেইল

ভলকানো স্নেইল
ছবি: দ্য পয়েন্ট

চুম্বক কোনো প্রাণীকে আকর্ষণ করে না। কিন্তু ভলকানো স্নেইল এর ব্যতিক্রম। তুমি যদি একটি চুম্বক ভলকানো স্নেইল বা আগ্নেয়গিরি শামুকের কাছে আনো, তাহলে চুম্বকটি ভলকানো স্নেইলকে আকর্ষণ করবে। কারণ, ভলকানো স্নেইল হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যার শরীর সামুদ্রিক লোহা দিয়ে গঠিত। ভলকানো স্নেইল ৭৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। আরও অবাক করার বিষয় হলো, ভলকানো স্নেইলদের কোনো খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। কারণ, তাদের খাদ্যনালি গ্রন্থিতে একধরনের ব্যাকটেরিয়া বাস করে। আর ভলকানো স্নেইলদের সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়ার রয়েছে এক বিশেষ ধরনের জৈবিক সম্পর্ক। এই ব্যাকটেরিয়াই ভলকানো স্নেইলদের জন্য শক্তি উৎপাদন করে এবং এদের বাঁচিয়ে রাখে। আগ্নেয়গিরি শামুক বা ভলকানো স্নেইল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৮ মাইল নিচে গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্টে বাস করে। এখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অত্যন্ত কম, তবে এটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে ভলকানো স্নেইল বা আগ্নেয়গিরির শামুক।

ফ্লেমিঙ্গো

ফ্লেমিঙ্গো পাখি
ছবি: এএফপি

আফ্রিকার অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হলো তানজানিয়ার ওল ডনিও লেংগাই। এর উত্তর দিকে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত পানির লেক ন্যাট্রন। এর তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। তার ওপর পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে হ্রদে প্রবাহিত সোডিয়াম কার্বনেট ও অন্যান্য খনিজগুলোর কারণে এর পানি অত্যন্ত ক্ষারীয়, যা গাছপালা, প্রাণী ও মানুষের জন্য ব্যবহার অযোগ্য। অথচ এখানেই কিনা যুগের পর যুগ বাস করছে দুই লাখের বেশি ফ্লেমিঙ্গো। এই স্থানটিকেই তারা বেছে নিয়েছে প্রজননের উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে। তবে এই বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য প্রকৃতি তাদের দিয়েছে শক্ত চামড়া আর জল থেকে লবণ অপসারণের এক আশ্চর্য ক্ষমতা। ফলে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই ফ্লেমিঙ্গোরা লেকের পানি থেকে খাবার সংগ্রহ করে রাজার হালে জীবন যাপন করে।

আরও পড়ুন

ভলকানো র‍্যাবিট

ভলকানো র‍্যাবিট
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

এ খরগোশটি টেপোরিঙ্গো বা জাকাতুচে নামেও পরিচিত। ছোট এই প্রাণীটি বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম খরগোশ। এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এরা বিপদের গন্ধ পেলে উচ্চ মাত্রার শব্দ করে একে অপরকে সতর্ক করে। এ–জাতীয় খরগোশের দেখা মিলে কেবল মেক্সিকোতেই। মেক্সিকো সিটির ঠিক উত্তর ও দক্ষিণে যে চারটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, সেখানেই এদের বসবাস। ভলকানো র‍্যাবিট পাথরযুক্ত জায়গা পছন্দ করে। কারণ, এরা পাথরের মধ্যে ছোট ফাটলগুলোতে বাড়ি তৈরি করে। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে আগ্নেয়গিরির এই ছোট প্রাণীটির প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয়।

ইগুয়ানা

ইগুয়ানা
ছবি: ড্রিমস টাইমস

ফার্নান্দিনা দ্বীপ গ্যালাপাগোস আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও পুরোনো। এই দ্বীপেরই বাসিন্দা হলো ইগুয়ানা। মূলত ইগুয়ানা হলো বড় ধরনের টিকটিকি, যাদের লেজসহ দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৬ দশমিক ৫ ফুট পর্যন্ত হয়। এরা আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ আগে থেকেই বুঝতে পারে। ফলে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজারের বেশি ইগুয়ানা অগ্ন্যুৎপাত বা অধিক উত্তাপের সময় ১০ দিনের একটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উপকূলের চূড়া থেকে নিচে নেমে আসে।

অ্যাক্সোলোটল

অ্যাক্সোলোটল
ছবি: ব্রিটানিকা

যদি কিংবদন্তির কথা বলি, তাহলে মেক্সিকান কিংবদন্তিতে অ্যাক্সোলোটল হলো আগুন আর বজ্রপাতের দেবতা। তার মুখাবয়ব যেন মোনালিসার হাসির মতোই রহস্যময়। তবে অ্যাক্সোলোটল আসলে একটি উভচর প্রাণী। মেক্সিকোতে পায়ে হাঁটা মাছ নামেও এদের খ্যাতি রয়েছে। এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, এরা এদের শরীরের প্রায় সব অঙ্গকেই পুনর্গঠিত করতে পারে। ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করে বলি। যেমন ধরো, কোনো মানুষের যদি পা কাটা যায়, তবে সে পা আর পুনর্গঠিত হয় না। কিন্তু অ্যাক্সোলোটল মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে এমনকি মস্তিষ্কের কিছু অংশও পুনর্গঠন করতে পারে।

ভ্যাম্পায়ার গ্রাউন্ড ফিঞ্চ

ভ্যাম্পায়ার গ্রাউন্ড ফিঞ্চ
ছবি: ই বার্ড

ভ্যাম্পায়ার চরিত্রটিকে ভয় পায় না এমন ছেলে-বুড়ো খুঁজে পাওয়া কঠিন। ড্রাকুলা নিয়ে বিখ্যাত সিনেমা ‘নোসফেরাতু’ দেখতেও ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। ভ্যাম্পায়ার যদিও কল্পকাহিনি, ভ্যাম্পায়ার গ্রাউন্ড ফিঞ্চ কিন্তু রূপকথার চরিত্র নয়। দক্ষিণ আমেরিকার গ্যালাপাগোসে উলফের আগ্নেয়গিরির দ্বীপে রয়েছে ভ্যাম্পায়ার চরিত্রের এই পাখি—ভ্যাম্পায়ার গ্রাউন্ড ফিঞ্চ। উলফের এ দ্বীপটি এতটাই গরম আর শুষ্ক যে প্রায়ই এখানে কোনো পানি পাওয়া যায় না। তখন এ পাখিটি তার তীক্ষ্ণ ঠোঁট ব্যবহার করে সামুদ্রিক পাখির শরীর থেকে রক্ত চুষে তৃষ্ণা মেটায়, পরিণত হয় এক জলজ্যান্ত ভ্যাম্পায়ারে।

আগ্নেয়গিরি ও তার আশপাশের সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এখনো টিকে আছে আরও বেশ কিছু প্রাণী। তাদের নিয়ে চলছে নানান গবেষণা। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভলকানো স্নেইল, অ্যাক্সোলোটলের অবিশ্বাস্য ক্ষমতার রহস্য উদ্‌ঘাটনে। আজ যা অজেয়, এই প্রাণীদের দেখানো পথে মানুষও হয়তো একদিন রপ্ত করে নেবে সেই অজেয়কে জয় করার কৌশল।

আরও পড়ুন