সাগরতলে অদ্ভুত কিছু নতুন প্রাণী

পাওয়া গেছে একটি আকর্ষণীয় বার্বি-গোলাপি সামুদ্রিক শূকর বা সি-পিগছবি: সায়েন্স অ্যালার্ট

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সাগরের মাত্র পাঁচ শতাংশ অংশ অনুসন্ধান করতে পেরেছেন। এই বিশাল জলরাশিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রহস্যময় প্রাণীর সন্ধান মিলছে। সম্প্রতি সাগরতলে এমন কিছু প্রাণীর দেখা মিলেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই নতুন আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। গবেষকেরা অনুমান করছেন, এই প্রাণীরা হয়তো কোটি কোটি বছর ধরে সমুদ্রের অতলের অন্ধকারে টিকে রয়েছে। সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে আসা এই অজানা প্রাণী নিয়ে আজ আমরা জানব।

মেক্সিকো ও হাওয়াইয়ের মাঝখানে অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় ক্লারিওন ও ক্লিপারটন অঞ্চলে সামুদ্রিক বিজ্ঞানীরা এই প্রাণীগুলো আবিষ্কার করেছেন। মানুষ আগে এগুলো কখনো দেখেনি। এই অদ্ভুত প্রাণীরা অ্যাবিসোপেলাজিক অঞ্চলের অন্ধকারে বাস করে। যেখানে সূর্যের আলো কখনো পৌঁছায় না। সমুদ্রের এই অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪ থেকে ৬ হাজার মিটার বা ১৩ থেকে ২০ হাজার ফুট গভীরতায় অবস্থিত। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে স্থির থাকে। এখানে পানির চাপ ৭৬ এমপিএ (১ এমপিএ সমান প্রতি মিলিমিটার স্কয়ারে এক নিউটন চাপ) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টার পরিচালিত সিবেড মাইনিং অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স টু এক্সপেরিমেন্টাল ইম্প্যাক্ট (স্মার্টেক্স) মিশনে অংশগ্রহণ করছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। যারা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ মিটার গভীরে একটি রিমোটলি অপারেটিং ভেহিকেল বা দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোযান পাঠিয়েছে। এই ডুবোযানের ক্যামেরাতেই মিলেছে এসব প্রাণীর খোঁজ।

সূক্ষ্ম কাচের স্পঞ্জ, একটি কাপ আকৃতির ফিল্টার ফিডার। এই ফিল্টার ফিডার ১৫ হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে!
ছবি: সায়েন্স অ্যালার্ট

অভিযানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল একটি স্বচ্ছ ‘সামুদ্রিক শসা’। যা ‘ইউনিকাম্বার’ নামে পরিচিত। বাইরে থেকে এই প্রাণীর পরিপাকতন্ত্র স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এর একটি দীর্ঘ লেজ রয়েছে, যা সম্ভবত সাঁতার কাটার জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে একটি সূক্ষ্ম কাচের স্পঞ্জ, একটি কাপ আকৃতির ফিল্টার ফিডার। এই স্পঞ্জ ১৫ হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! যা পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘ জীবনযাপনকারী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। আবিষ্কৃত হয়েছে দীর্ঘ শরীরের একটি ‘টানাইড ক্রাস্টেসিয়ান’, যা দেখতে একটি কৃমির মতো। আরও আছে সমুদ্রিক তারা মাছ, প্রবাল এবং ‘অ্যানিমোন’। আরও পাওয়া গেছে একটি আকর্ষণীয় বার্বি-গোলাপি সামুদ্রিক শূকর বা সি-পিগ। যারা ছোট ছোট স্টাবি পা ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়ায়। এদের শরীরের ভেতরে দেখা যায় গোলাপি আভা।

আরও পড়ুন
অভিযানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল একটি স্বচ্ছ ‘সামুদ্রিক শসা’। যা ‘ইউনিকাম্বার’ নামে পরিচিত
ছবি: সায়েন্স অ্যালার্ট

এই অভূতপূর্ব প্রাণীগুলো সম্পর্কে আরও জানতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা করে যাচ্ছেন। তবে এটি স্পষ্ট, সমুদ্রের তলদেশের জীববৈচিত্র্যের প্রতি আরও মনোযোগ এবং সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। গবেষকদের খোঁজাখুঁজির সুবিধার জন্য ক্লারিওন-ক্লিপারটন অঞ্চলটি বর্তমানে গভীর-সমুদ্র খননের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। কিছু পরিবেশবাদী মনে করেন, এর ফলে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়তে পারে। এই অঞ্চলের প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য এদের আবাসস্থল সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে হবে। বর্তমানে এই অঞ্চলের ৩০ শতাংশ সুরক্ষিত। তবে এই সুরক্ষা যথেষ্ট কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রজাতিগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে আরও জানা দরকার।

সূত্র: সায়েন্স এলার্ট, উইকিপিডিয়া

আরও পড়ুন