বাংলাদেশের ২০ বছরের অপেক্ষা ফুরিয়ে দিল দেবজ্যোতি

আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদকজয়ী দেবজ্যোতি দাস সৌম্য (মাঝখানে)

আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতেছে দেবজ্যোতি দাস সৌম্য, এই গল্প এখন সবার জানা। ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের কেউ এই প্রথম স্বর্ণপদক জিতল। ফুরোল বাংলাদেশের ২০ বছরের অপেক্ষা। ২০০৫ সালে প্রথম বাংলাদেশ ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন থেকে নিয়মিত বাংলাদেশ দল আন্তর্জাতিক পর্বে অংশগ্রহণ করে। অনেকগুলো পদকও বাংলাদেশের ঝুলিতে এসেছে। তবে স্বর্ণপদক ছিল অধরা। এবার স্বর্ণপদকের সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছে। দেবজ্যোতির হাত ধরে বাংলাদেশ অর্জন করেছে এই সম্মান।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় করা পদকসংখ্যা ৩২। এর মধ্যে দেবজ্যোতির ১টি স্বর্ণপদক। এ ছাড়া বাংলাদেশের আছে রৌপ্যপদক ৬টি, ব্রোঞ্জপদক ২৪টি এবং অনারেবল মেনশন ১টি।

আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড (আইওআই) বেশ জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। বিশ্বের নানা দেশ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এবারের ৩৬তম আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ার আরব একাডেমি ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টে বসেছে এবারের আসর।

আন্তর্জাতিক পর্বে দুই দিন ধরে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন প্রত্যেক প্রতিযোগীকে চারটি করে সমস্যা দেওয়া হয়। সমাধান করার জন্য সময় থাকে পাঁচ ঘণ্টা। এ সময় প্রতিযোগীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে না এবং কোনো বই থেকেও সহায়তা নিতে পারে না। সমস্যার সমাধান করতে হয় প্রোগ্রামিং ভাষা সি অথবা সি++ দিয়ে।

দেবজ্যোতি দাস সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রোগ্রামিংয়ে দেবজ্যোতির পথচলার শুরুটা ছিল একদম সাধারণ। ছোটবেলায় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করত দেবজ্যোতি। একদিন বাসায় কাজিন দীপ্তকে সে দেখল প্রোগ্রামিং করতে। ‘আমিও একটু করে দেখি’—এই বলে শুরু করেছিল দেবজ্যোতি। সেই শুরু। এরপর বেশি দিন লাগেনি ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডের আন্তর্জাতিক পর্বে যেতে। সপ্তম শ্রেণিতে থাকতে প্রোগ্রামিং প্র্যাকটিস শুরু। দ্বাদশ শ্রেণি পড়া শেষ করতে করতে তিনবার আন্তর্জাতিক পর্বে অংশ নিয়েছে সে। দেবজ্যোতি প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ‘পাঁচ বছর ধরে ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং শুরু করি। পরের বছর বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড অব ইনফরমেটিকসে (বিডিওআই) নাম লেখাই এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই। ২০২১ ও ২০২২—এই দুই বছর আমি শুধু চর্চা করেছি। যার ফল এসেছে পরবর্তী বছরগুলোতে। ২০২২ সালে ব্রোঞ্জ, ২০২৩ সালে রৌপ্য আর এ বছর স্বর্ণপদক পেলাম।’

আরও পড়ুন

অবসর সময়ে প্র্যাকটিস করেছে সে। সপ্তম শ্রেণিতে প্র্যাকটিসের জন্য ব্যবহার করত কোডফোর্সেস। এরপর টাফসহ বিভিন্ন অনলাইন জাজে প্র্যাকটিস করেছে, অনলাইনে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। মা–বাবা, ছোট ভাই সব সময় সহায়তা করেছে, উৎসাহ দিয়েছে।

১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর মিসরে বসেছিল এবারের প্রতিযোগিতার মূল আসর, যেখানে বিশ্বের ৯৬টি দেশের ৩৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। দেবজ্যোতি ছাড়াও বাংলাদেশ দলে ছিল জারিফ রহমান, আকিব আজমাইন ও দেশ আচার্য। বাংলাদেশ থেকে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে জারিফ রহমান ও আকিব আজমাইন তূর্য। দলনেতা হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক এম সোহেল রহমান। এবারের আসরে ৩৭৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট পেয়ে ২৫তম স্থান অর্জন করে দেবজ্যোতি। সাফল্যের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও চাপের মধ্যে সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা।

আপাতত পড়ালেখা ও নিজের কিছু প্রকল্পে সময় দিচ্ছে দেবজ্যোতি। আগামী বছর হয়তো শেষবার আইওআইতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে, সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ভবিষ্যতে কী করবে, এখনো ঠিক করেনি, তবে টেকনোলজিতেই থাকবে বলে জানিয়েছে। যারা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়, তাদের জন্য দেবজ্যোতির পরামর্শ, ‘প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে।’

আরও পড়ুন