প্রাথমিক গণিত
পূর্ণসংখ্যা কী
গণিত আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। গণিতে ভালো করতে হলে এর ভিত্তি মজবুত হতে হবে। ভিত্তি দুর্বল হলে গণিত দেখলে ভয় লাগে। তোমাদের গণিতভীতি দূর করতে এবং ভিত্তি মজবুত করতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘প্রাথমিক গণিত’।
আগের পর্বে আমরা প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক সংখ্যা শিখেছিলাম। ১, ২, ৩, ৪, ৫…ইত্যাদি হলো প্রাকৃতিক সংখ্যা। মানে ১ থেকে যত সামনের দিকে যাবে, সবই প্রাকৃতিক সংখ্যা। আর স্বাভাবিক সংখ্যা মানে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫…। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সংখ্যার আগে ০ বসালেই তা স্বাভাবিক সংখ্যা। এখন বলো তো, ০-এর আগে কী আছে? নিচের সংখ্যারেখাটা দেখেও বলতে পারো।
স্বাভাবিক সংখ্যা ও এদের বিপরীত সংখ্যা
দেখতেই পাচ্ছ ০-এর আগে -১ আছে। এটাকে বলে মাইনাস ১। তারও আগে আছে মাইনাস ২। ০ থেকে ২-এর দূরত্ব ডানে যতটা, মাইনাস ২ বাঁয়ে ততটা। কারণ মাইনাস ২ হলো ২-এর বিপরীত। একইভাবে ৩-এর বিপরীত মাইনাস ৩, চারের বিপরীত -৪ ইত্যাদি। তাহলে বলো তো, শূন্য কি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক? মানে ওটা কি ১-এর দিকে নাকি মাইনাস ১-এর দিকে?
আসলে কোনোটিই না। ০ আছে ধনাত্মক ও ঋণাত্মকের একদম মাঝে। শূন্য নিজেই এক ধরনের সংখ্যা। শূন্যের ডানে যত সংখ্যা আছে সব ধনাত্মক সংখ্যা, আর বাঁয়ের সব সংখ্যা ঋণাত্মক।
ধনাত্মক, শূন্য ও ঋণাত্মক সংখ্যা মিলে হলো পূর্ণসংখ্যা। অর্থাৎ পূর্ণসংখ্যা মানে (১, ২, ৩,…), ০ ও (-১, -২, -৩,...)।
এবার হিসেব করে দেখ, ০ থেকে যেকোনো সংখ্যা আর ওই সংখ্যার বিপরীত সংখ্যার দূরত্ব সমান। ০ থেকে ৬ পর্যন্ত মোট ৬ ঘর এবং ৬-এর বিপরীত মাইনাস ৬ পর্যন্তও ৬ ঘর।
আরেকটা কথা তোমাদের জানিয়ে রাখা ভালো, ধনাত্মক সংখ্যা বোঝাতে সংখ্যার আগে যোগ চিহ্ন (+) দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন +৬ লেখার দরকার হয় না। ৬ মানেও যা, +৬ মানেও তাই। সংখ্যার আগে কোনো চিহ্ন না থাকা মানে ওটা ধনাত্মক সংখ্যাই। তবে কেউ যদি ‘+’ চিহ্ন ব্যবহার করে, তাতে ভুল হবে না।
এখন তুমি বলো তো, ৮-এর বিপরীত সংখ্যাটা কী হবে? তুমি হয়তো খুব সহজে বলে দেবে মাইনাস ৮। উত্তর ঠিকই আছে। কিন্তু কেউ যদি এটা বুঝতে না পারো, তাহলে সংখ্যারেখায় প্রথম ০ থেকে ৮ পর্যন্ত গুনে দেখ কত ঘর হয়। এরপর ০ থেকে তত ঘর বাঁয়ে গুনলেই ওই ৮-এর বিপরীত সংখ্যা পেয়ে যাবে।
আচ্ছা, এবার মাইনাস ৪-এর বিপরীত সংখ্যা বলো তো। এটাও সংখ্যা রেখার সাহায্যে গুনে দেখতে পারো। অনেকে ভাবতে পারো, এই সহজ জিনিস কেন বারবার বলছি! ওই যে শুরুতে যে বলেছি, গণিতের বেসিক বা ভিত্তি মজবুত করতে হবে, আমরা সেই বেসিক নিয়েই আলোচনা করছি। ধীরে ধীরে সবই শিখব।
তাহলে মাইনাস ৪-এর বিপরীত সংখ্যা খুঁজতে হলে প্রথমে -৪ থেকে ০ পর্যন্ত কত ঘর হয়, তা খুঁজে বের করতে হবে। গুনে দেখ চার ঘর হয়। এবার তাহলে ০ থেকে ডানে ওই চার ঘর যেতে হবে। সঠিকভাবে গুনে চার ঘর এগোলে সেখানে দেখতে পাবে ৪ লেখা আছে। অর্থাৎ, -৪ এর বিপরীত হলো ৪।
এবার তোমরা খাতায় সংখ্যারেখা এঁকে -৪, -২, ৩ ও ৫ চিহ্নিত করো।
দেখো তো, ওপরের লাল চিহ্নের মতো জায়গায় তুমিও চিহ্নিত করেছ কি না। যদি আমার সঙ্গে তোমার মিলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে তুমি গণিতের বেসিক ভালোভাবেই শিখছ।
আচ্ছা সংখ্যারেখার দুই পাশে ওমন তির চিহ্ন দেওয়া কেন জানো? ওটার মানে ৬-এর পরে আরও সংখ্যক সংখ্যা আছে। এর বাঁ পাশে মাইনাস ৬-এর আগে আরও অসংখ্য সংখ্যা আছে। থ্রি ডট (…) দিয়েই একই কথা বোঝায়। ওপরের এই সংখ্যারেখাটাই হলো পূর্ণসংখ্যা।
আজ এখানেই শেষ। আগামী পর্বে শিখব মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা। ততক্ষণ ভালো ও সুস্থ থেকো।