ভ্রমণের প্রতি লুইসা ইউয়ের আকর্ষণ ছোটবেলা থেকে। ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম বিদেশ ভ্রমণ করেন। সে বয়সেই তাঁর স্বপ্ন ছিল বিশ্বের সব দেশ ঘুরে বেড়ানোর। ১৯৪৪ সালে ফিলিপাইনের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন লুইসা। এরপর ১৯৬৭ সালে ২৩ বছর বয়সে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ফিলিপাইন ছেড়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটবেলার সেই ভ্রমণের ইচ্ছাকে পূরণের জন্য বেরিয়ে পড়েন তিনি। মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব অঙ্গরাজ্যই ঘুরে ফেলেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও উৎসাহিত করে। তিনি ঠিক করেন, বিশ্বের সব দেশ ঘুরে দেখবেন। তারপরই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে।
এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে প্রথম দেশ হিসেবে জাপান ভ্রমণে যান লুইসা। জাপানের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করে। প্রথম ভ্রমণ শেষে তিনি বুঝতে পারেন, বিশ্ব ভ্রমণের জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হবে। সাধারণ পরিবারের সন্তান তিনি। ভ্রমণের অর্থ জমানো বেশ কঠিন ছিল তাঁর জন্য। পড়া শেষে কর্মজীবন শুরু করেন লুইসা। কাজ করতেন চিকিৎসা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি একজন ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে শুরু করেন তাঁর দ্বিতীয় ক্যারিয়ার। এভাবেই শুরু করেন অর্থ জমানো। ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ভ্রমণ নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয় লুইসার। ভ্রমণের জন্য অর্থ সঞ্চয় হতে থাকে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকেন তিনি।
এভাবে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন লুইসা। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ৭৯ বছর বয়সে সার্বিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে যাত্রা শেষ করেছেন তিনি। বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণকারী নারী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। গত ৫০ বছরে লুইসা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় প্রতিটি কোণায় পা রেখেছেন। ইতালির মতো মনোরম ইউরোপীয় দেশ থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের মতো রহস্যময় এশিয়ান দেশ ভ্রমণের তালিকায় ছিল। লিবিয়ার উত্তপ্ত আফ্রিকান ভূমি থেকে ঐতিহাসিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান ঘুরেছেন তিনি। নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতিসংঘের স্বীকৃত সদস্য ১৯৩টি দেশে ভ্রমণ শেষ করেছেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে লুইসা তাঁর স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বকে ঘুরে দেখার। আমি স্বপ্ন দেখেছি বলেই আজ সফল। ইচ্ছা পূরণের জন্য স্বপ্ন দেখে যেতে হবে সব সময়।’ তিনি বিভিন্ন দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে অন্যদের ভ্রমণে অনুপ্রাণিত করেছেন। তরুণ ভ্রমণকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেকেই পা বাড়াতে হবে সবার আগে। কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করে থেমে থাকলে চলবে না।’ সাইবেরিয়া ভ্রমণ শেষে তাঁর বন্ধুরা ও বিভিন্ন সংস্থা বিশ্ব ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে সম্মাননা দেন। তিনি ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে সব দেশ ভ্রমণের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
লুইসা ইউ নিঃসন্দেহে একজন অদম্য নারী, যিনি সাহস, দৃঢ়তা ও ভ্রমণপিপাসু মনোবলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন পূরণ অসম্ভব নয়। ভ্রমণকালে বিভিন্ন জনপদের মানুষের সঙ্গে মিশে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনধারা অনুভব করেছেন। নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নিজেকেই অগ্রসর হতে হবে, এমনটাই জানান দিয়েছেন তিনি।