মাঠে ফুটবলাররা পানি মুখে নিয়ে ফেলে দেন কেন?
ফুটবল খেলায় খেলোয়াড়েরা কত বিচিত্র আচরণই না করেন। কেউ কামড় দেন, কেউ মারেন গুঁতা, কেউ আবার লাথি মারেন প্রতিপক্ষকে। কিন্তু এত সব আচরণের মধ্যে একটা আচরণ অনেক সময় চোখ এড়িয়ে যায়। খেলার বিরতিতে ফুটবলাররা মাঝেমধ্যেই পানি মুখে নিয়ে না গিলে তা ফেলে দেন। এটা কি চোখে পড়েছে তোমার? কিন্তু কেন এমনটা করেন তাঁরা? চলো, জেনে নিই।
এটি ফিজিওলজি ও সাইকোলজির একটি আকর্ষণীয় বিষয়, যেখানে একজন অ্যাথলেটের পারফরম্যান্সের ওপর জটিল প্রভাব ফেলতে পারে।
ফুটবল প্রচণ্ড গতির খেলা। ৯০ মিনিটের এই খেলায় খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। পুরো সময় ছোটাছুটি করতে থাকা খেলোয়াড়েরা সুযোগ পেলে একটু পানি খাবেন, এ আর নতুন কী। কিন্তু টিভিতে আমরা দেখি, খেলোয়াড়েরা পানি না খেয়ে করেন অদ্ভুত এক কাণ্ড। বোতল থেকে মুখে পানি নিয়ে কুলকুচি করে তা ফেলে দেন! আসলে এটা কোনো সাধারণ পানি নয়। তাঁরা মুখে নেন কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ দ্রবণ। অ্যাথলেটরাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এর পেছনের বিজ্ঞানটা কী?
অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ির কারণে লালারসে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লালা ঘন হয়ে যায়, তখন তা গিলতে কষ্ট হয়। কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ দ্রবণ বা চিনিযুক্ত পানীয় মুখে নিলে মস্তিষ্ক এনার্জি পায়, যার কারণে ক্ষণিকের জন্য ক্লান্তির অনুভূতি কমে যায় এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই কৌশলের নাম ‘কার্ব রিনজিং’।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব স্পোর্টস নিউট্রিশন অ্যান্ড এক্সারসাইজ মেটাবলিজম’-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষ ক্রীড়াবিদেরা শর্করা কুলকুচি করে ফেলে দেওয়ার সময় কম ক্লান্তি অনুভব করেন।
২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের এমনটা করতে দেখা গেছে। গবেষকেরা বলেন, কার্বোহাইড্রেটমিশ্রিত পানীয়তে গ্লুকোজ বা মাল্টোডেক্সট্রিন থাকে, যেটা ক্রীড়াবিদদের পরিশ্রমের লেভেলের ধারণা পরিবর্তন করে, যার ফলে কঠোর পরিশ্রম তাঁদের কাছে কম কষ্টদায়ক মনে হয়।
ফুটবল খুবই পরিশ্রমের খেলা। ৯০ মিনিট থেকে আরও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হতে পারে একটি ম্যাচের দৈর্ঘ্য। এ ধরনের খেলার ক্ষেত্রে কার্ব রিনজিং খুব ভালো কাজ করে খেলোয়াড়দের জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেটমিশ্রিত পানি মুখে নিয়ে ফেলে দিলে ২ থেকে ৩ শতাংশ কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা সাধারণ ব্যায়ামের সময় কার্বোহাইড্রেট পানীয় গ্রহণের সুবিধার সঙ্গে তুলনীয়।
থুতু গেলার পরিবর্তে তা ফেলে দিলে অ্যাথলেটদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালজনিত অস্বস্তি এড়াতে সাহায্য করে। খুব ঘনীভূত পানীয় খেলে তা পেটে দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়। যার ফলে পেট ফুলে যেতে পারে, হতে পারে হজমের সমস্যা। ব্যাপারটি নিয়ে এখনো গবেষণা হচ্ছে। তবে ফুটবলসহ অন্য খেলাতেও খেলোয়াড়েরা নিয়মিতই করে চলেছেন কার্ব রিনজিং।
এটি ফিজিওলজি ও সাইকোলজির একটি আকর্ষণীয় বিষয়, যেখানে একজন অ্যাথলেটের পারফরম্যান্সের ওপর জটিল প্রভাব ফেলতে পারে।
কার্ব রিনজিং আইনগতভাবে নিরাপদ। ক্রীড়াবিজ্ঞান বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড় ও কোচরা কার্ব রিনজিং করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
কার্ব রিনজিং নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলেছে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন খেলাধুলায় এর সম্ভাব্য প্রয়োগ ও কার্যকারিতা অন্বেষণ করছেন। এটি আপাতত একজন খেলোয়াড়ের গোপন অস্ত্র হিসেবে রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এটা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।