সিডনি অ্যাকুয়ারিয়াম: জলজ প্রাণীর দারুণ এক জগৎ!

একটা টানেল ধরে হেঁটে চলেছি। মাথার ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরাট বিরাট হাঙর, স্টিং রে। হাঙরও নানা কিসিমের, তবে সবই বড় বড় আর ভয়ংকর। মনে হচ্ছে, এই বুঝি মাথায় ঠোক্কর দিল। হাঁটাপথের পাশেই আবার ঝাঁক ঝাঁক ছোট ছোট রঙিন মাছ। কত যে রং, কত যে ঢং এসব মাছের, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই হচ্ছে সিডনি অ্যাকুয়ারিয়াম।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের একেবারে পুবে ডারলিং হারবার।

সিডনি গিয়েছিলাম ২০১২ জুলাই মাসে। থাকার হোটেলটি ছিল এই ডারলিং হারবারের পাশেই। প্রতিদিন যেখানে কাজ ছিল, সেখানে যেতে পোতাশ্রয় পেরোতে হতো কাঠের বড় এক সেতু দিয়ে। এই সেতুর একদিকে সিডনি অ্যাকুয়ারিয়াম, ওয়াইল্ড লাইফ আর মাদাম তুসোর জাদুঘর একসঙ্গে; অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান মেরিটাইম মিউজিয়াম।

অ্যাকুয়ারিয়ামে রঙিন মাছ দেখার ব্যাপারে আগ্রহ তো বরাবরেরই। তার মধ্যে সিডনি অ্যাকুয়ারিয়াম বলে কথা। এখানে নাকি আছে রঙিন ক্লাউনফিশ। মনে পড়ে যায় ফাইন্ডিং নিমোর কথা। নিমো নামে সেই ক্লাউনফিশ সিডনি হারবারেই হারিয়েছিল—এমন ঘটনা নিয়ে বিশ্বখ্যাত অ্যানিমেটেড ছবি ফাইন্ডিং নিমোর কাহিনি।

আসা-যাওয়ার পথে একদিন ঢুকে গেলাম সিডনি অ্যাকুয়ারিয়ামে। আরে বাহ! এ তো অন্য এক রাজ্য! বিশাল বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম, রঙিন সব মাছ। আকারে ছোটগুলো যেমন আছে, তেমনি আছে দানবাকৃতির সি লায়ন। কোথাও আছে প্রবাল, কোথাও আবার সিল মাছ আরামসে বসে গোঁফে তা দিচ্ছে। আমার কাছে সবই লাগে বিস্ময়ের মতো।

সিডনি অ্যাকুয়ারিয়ামের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এখানে সাত হাজার প্রজাতির প্রায় ১৩ হাজার জলজ প্রাণী রয়েছে। ১৯৮৮ সালে এটি চালু হয়। তৈরি করতে লেগেছে দুই বছর। এখন অবশ্য এর নাম সি লাইফ সিডনি অ্যাকুয়ারিয়াম। সমুদ্র নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের কাছেও এটি এখন দারুণ এক জায়গা। প্রায় প্রাকৃতিক পরিবেশেই এখানে বাস করে জলের বাসিন্দারা। সিডনি হারবার থেকে ফিল্টার করে ২৬ লাখ লিটার পানি এ অ্যাকুয়ারিয়ামে আনা হয়েছে। টানেল তৈরি করে মাথার ওপর মাছ দেখার যে ব্যবস্থা, সেই টানেলের ছাদ তৈরি হয়েছে ততোধিক চাপ সইতে পারে, এমন অ্যাক্রিলিক কাচ দিয়ে। এতে আছে ৩৩×১৩ মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ওশেন্যারিয়াম।

সি লায়নগুলো কেমন আয়েস করছে দেখ
ছবি: সংগৃহীত

দেখলাম একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে তৈরি করা হয়েছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের পরিবেশ। ছোট, কিন্তু সত্যিকারের আবহটাই ফুটে উঠেছে।

সিডনি অ্যাকুয়ারিয়ামে হাঙরের যে সংগ্রহ আছে, তা পৃথিবীর আর কোথাও একসঙ্গে দেখা যায় না। বিরল জেব্রা হাঙরও আছে।  ডুগনস নামের এক প্রাণী আছে এখানে, যা পৃথিবীতে মাত্র দুই থেকে পাঁচ জায়গায় দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সি লায়নও আছে এতে।

যেতে যেতেই জেলি ফিশ, জীবন্ত রঙিন প্রবালের দেখা মেলে কাচের অ্যাকুয়ারিয়ামে। আর নজর কাড়ে ক্লাউন ফিশ। একেবারে যেন নিমোর তুতো ভাই। হঠাৎ দেখা মিলল ছোটবেলায় ছড়ার বইতে আঁকা ঘোড়া মাছের। দুলকি চালে পানিতে চলছে তার সন্তরণ। পেঙ্গুইন দেখা গেল বেশ কটা, তবে সেগুলো কেন জানি বিষণ্ণ।

ঘোড়া মাছগুলোকে দেখো, মনে হচ্ছে তারা একসঙ্গে নাচ করছে
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম দিকে সিডনি অ্যাকুয়ারিয়ামে কুমির ছিল না। এখন কুমিরের জন্য আলাদা অংশই তৈরি করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রাণী ও মাছ নিয়মিতভাবেই যুক্ত হয় সিডনির এই অ্যাকুয়ারিয়ামে। মাছেদের রঙিন দুনিয়া আরও বর্ণিল, আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি গেলে অবশ্যই একবার ঘুরে এসো এই অ্যাকুয়ারিয়ামে।

(কিশোর নববর্ষ ১৪২০ সংখ্যায় প্রকাশিত)