কিশোর-কিশোরী কনডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কি না, কীভাবে বুঝবেন
বয়ঃসন্ধিকাল কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এর মধ্যে কনডাক্ট ডিজঅর্ডার (Conduct Disorder) একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা, যা কিশোর-কিশোরীর সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কনডাক্ট ডিজঅর্ডার একটি আচরণগত সমস্যা, যা সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়। যাদের মধ্যে এ সমস্যা দেখা যায়, তাদের সামাজিক বিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে তাদের অনেক সময় ‘Delinquent’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
লক্ষণ
১. নিয়ম ভঙ্গ করা: স্কুল ফাঁকি দেওয়া, মা–বাবার অনুমতি ছাড়া বাইরে রাত কাটানো ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া।
২. প্রতারণামূলক আচরণ: মিথ্যা বলা, অন্যের জিনিস চুরি করা ও প্রতারণা করা।
৩. আক্রমণাত্মক আচরণ: অন্যদের মারধর করা, হুমকি দেওয়া ও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন।
৪. সম্পত্তির ক্ষতি: অন্যের সম্পত্তির ক্ষতি করা, ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো ইত্যাদি।
কারণ
এ সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি জিনগত, পরিবেশগত ও মানসিক নানা কারণে হতে পারে। পরিবারের দ্বন্দ্ব, শৈশবে অবহেলা, শাস্তিমূলক শাসন, পারিবারিক সহিংসতা বা বিচ্ছেদ এ সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কৈশোরে মাদকাসক্তি অথবা খারাপ বন্ধুমহলে জড়িয়ে ‘গ্যাং’ তৈরির কারণে অনেকেই আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন হয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. মনোচিকিৎসা: কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি (CBT) বা অন্যান্য সাইকো থেরাপির মাধ্যমে আক্রান্ত কিশোরদের আচরণ পরিবর্তন করা সম্ভব।
২. ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিশেষত যদি এটি অন্য মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়।
৩. পারিবারিক সহায়তা: মা-বাবার সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করা গেলে এ সমস্যা কমানো সম্ভব।
৪. স্কুল ও সমাজের ভূমিকা: স্কুলে পরামর্শমূলক কার্যক্রম ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিশোরদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
কৈশোরে কনডাক্ট ডিজঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগ বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল