আন্দোলন করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী পড়তে যাচ্ছেন অক্সফোর্ডে
ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির (এসএইউ) পিএইচডি শিক্ষার্থী ছিলেন ভীমরাজ। তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরামের দলিত সম্প্রদায়ের এই শিক্ষার্থী গত বছর নভেম্বর মাসে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থীদের ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানোর আন্দোলনে। আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকেসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। অভিযোগ আনে শৃঙ্খলাভঙ্গের। বহিষ্কৃত সেই শিক্ষার্থী ভীমরাজ এখন পিএইচডি করতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, অক্সফোর্ডই বিশ্বের সেরা বা ১ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়।
চেন্নাইয়ের দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ভীমরাজ। বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার, আর মা গৃহিণী। চার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চেন্নাই থেকে কাঞ্চিপুরাম চলে আসেন ভীমরাজের মা–বাবা। ২০১৭ সালে তামিলনাড়ুর ড. আমবেদকার ল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করেন ভীমরাজ। এরপর সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক আইনে করেন স্নাতকোত্তর। স্নাতকোত্তর চলাকালীনই উত্তীর্ণ হন ভারতের ইউজিসি-এনইটি আয়োজিত জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পরীক্ষায়। ড. আমবেদকার ল ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন তিনি।
বহিষ্কৃত হওয়ার পর নানা আলোচনা শেষে কোনো উপায় না দেখে ভীমরাজ ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড কাস্টের (এনসিএসসি) কাছে এসএইউর বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানির অভিযোগ জানান। এ ছাড়া দিল্লি হাইকোর্টেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। মামলার শুনানি শুরু হবে আগামী ২ আগস্ট।
তবে এরই মধ্যে অক্সফোর্ড ইন্ডিয়া সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের দেওয়া রতনশা বোমানজি জাইওয়ালা বৃত্তি পান ভীমরাজ। এই বৃত্তির মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের এমফিল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন তিনি। বৃত্তির আওতায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ২৬ হাজার ৪৫০ পাউন্ড (প্রায় ৩৭ লাখ বাংলাদেশি টাকা) মওকুফ হলেও ভিসা, স্বাস্থ্যবিমা, বিমানভাড়াসহ অন্যান্য খরচের জন্য ভীমরাজের প্রয়োজন ছিল আরও ২০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি টাকা)।
উপায়ান্তর না দেখে, সাধারণ মানুষের কাছে অর্থায়নের সাহায্য চাইতে শুরু করেন ভীমরাজ। তাতে কারও কারও কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হলেও অনেকেই এগিয়ে আসেন তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য। যার ফল জানে এখন সবাই। গোটা ভারতের ৬০০ দাতার কাছ থেকে ভীমরাজের থলিতে জমা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ রুপি। তামিলনাড়ুর অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আদাভ আর্জুন একাই দিয়েছেন ৫ লাখ রুপি।
শুরু থেকেই ভীমরাজের পড়াশোনার মুখ্য বিষয় ছিল ভারতীয় আইন ও দলিত সম্প্রদায় প্রথার নানা দিক নিয়ে। সম্প্রদায়ভিত্তিক বৈষম্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা আছে তাঁর। অক্সফোর্ডের এমফিল প্রোগ্রামে ভীমরাজ কাজ করবেন ভারতের আইনে পরিবেশ বিপর্যয় কীভাবে দলিত সম্প্রদায়ের জীবনব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা নিয়ে। মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কীভাবে দলিত সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং তার সমাধান বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন তিনি।
সূত্র: দ্য নিউজ মিনিট, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস