২০২৪ সালে তোলা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০ প্রাণীর ছবি

প্রকৃতিতে অজস্র সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ফটোগ্রাফাররা প্রাণীর অপূর্ব রূপ ক্যামেরাবন্দী করেছেন। প্রাণীর সৌন্দর্য পুরোপুরি ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে। এই তালিকা কেবল কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাণীর একটি সংকলন, যা ২০২৪ সালে বিশেষভাবে ফটোগ্রাফারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

ফেনেক শিয়াল

ফেনেক শিয়াল বা মরু শিয়াল উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে বসবাসকারী একধরনের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট শিয়াল প্রজাতিও এটি। এই প্রাণীকে সত্যিই অনন্য করে তোলে এদের চোখে পড়ার বৈশিষ্ট্য—বিশাল কান। ফেনেক শিয়ালের গড় আয়ু প্রায় ১২ বছর। বন্য প্রাণী ফটোগ্রাফার সেবাস্তিয়ান গ্যাবরিট ছবিটি তোলেন।

অ্যাডিলি পেঙ্গুইন

অ্যান্টার্কটিকায় বাস করা অ্যাডিলি পেঙ্গুইন, এদের সৌন্দর্যের জন্য অসাধারণ। কিন্তু সৌন্দর্য ছাড়াও এরা পেঙ্গুইনদের মধ্যে অন্যতম হিংস্র শিকারি। চমৎকার সাঁতারু এরা। শিকারের সময় ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বা ৯ দশমিক ৩ মাইল বেগে পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। ছবিটি তোলেন পল সউডার্স। তিনি অ্যান্টার্কটিকার পিটারম্যান দ্বীপে সূর্যাস্তের সময় একটি পাথুরে তীরে এটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।

রাসটি-স্পটেড ক্যাট

রাসটি-স্পটেড ক্যাট (Prionailurus rubiginosus) বিড়াল পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যদের মধ্যে একটি। এই প্রজাতির বিড়াল বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বিড়ালও বটে। বড়, উজ্জ্বল ও হলুদ বর্ণের চোখ এদের। সাধারণত রাসটি-স্পটেড ক্যাটের বিড়ালের ওজন হয় এক কেজি এবং লম্বা হয় ৫০ সেন্টিমিটার। এই বিড়াল খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারণ, এরা ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ঘন বনে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে।

আরও পড়ুন

পান্ডা

পান্ডা বা বৃহৎ পান্ডা, ভালুকের মতো সাদা ও কালো রঙের বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য চীনের উচ্চ পর্বতমালার ঘন বাঁশবনে বাস করে। এদের মজার আচরণ, যেমন গাছ থেকে পড়ে যাওয়া বা বাঁশ খাওয়ার অদ্ভুত ভঙ্গি, বড় আকৃতি এবং লোমযুক্ত শরীর সবাইকে আকৃষ্ট করে। চীনা পান্ডারা দিনে ৩৫ কেজির বেশি খেতে পারে। এই প্রচুর পরিমাণের খাবার খাওয়ার ফলে এদের প্রায়ই মলত্যাগ করতে হয়, এমনকি দিনে ৪০ বার পর্যন্ত!

কোওক্কা

কোওক্কা দেখতে ইঁদুরের মতো হলেও কেবল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে অবস্থিত রটনেস্ট দ্বীপে দেখা যায়। এরা ক্যাঙারু ও ওয়ালাবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই চতুর নিশাচর থলেধারী কোওক্কা এদের শাবকদের থলিতে নিয়ে ক্যাঙারু মতো একইভাবে বহন করে। কোওক্কাদের বিশ্বের সবচেয়ে সুখী চেহারার প্রাণী হিসেবে খ্যাতি আছে। এদের মুখে সর্বদা হাসির ভাব থাকে এবং মানুষের সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে কোওক্কাটি মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে।

আরও পড়ুন

গ্যালাগো

গ্যালাগো শিশু নামেও পরিচিত। কারণ, এদের কান্নার শব্দ মানবশিশুর কান্নার মতো। এরা সর্বভুক প্রাণী। ফল ও পোকামাকড় খায়। বেশির ভাগ সময় গাছে কাটায়। বড় বড় চোখ এদের অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে। ফলে এরা হয়ে উঠেছে আরও চতুর। গ্যালাগো শিকারের খোঁজে কান ইচ্ছেমতো ঘোরাতে পারে। পাঁচ মিটারের বেশি দূরে লাফ দিতে পারে গ্যালাগো।

সুগার গ্লাইডার

অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও শীতল বনের ঘন সবুজের মাঝে উঁচু গাছের ডালে ডালে ঝুলে বেড়ায় সুগার গ্লাইডার। প্রকৃতির অপূর্ব এই সৃষ্টি বাস করে গাছে। গাছ এদের আশ্রয়স্থল ও খাদ্য সংগ্রহের মাধ্যম। সুগার গ্লাইডারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এদের প্যাটাজিয়াম। হাতের কবজি থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বিস্তৃত এই নরম চামড়া প্যারাসুটের মতো কাজ করে। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে ভেসে যেতে সাহায্য করে। এরা সর্বভুক প্রাণী। ফল, ফুল, পোকামাকড় এদের প্রিয় খাবার। সুগার গ্লাইডার সামাজিক প্রাণী। দলে বেঁধে বসবাস করে। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডাক ব্যবহার করে এরা।

লাল পান্ডা

এদের নামে পান্ডা থাকা সত্ত্বেও সাদা-কালো পান্ডার সঙ্গে লাল পান্ডা সম্পর্কিত নয়। তবে এরা সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সমান। আশ্চর্যজনকভাবে, লাল পান্ডা মানুষের কাছে পরিচিত সাদা-কালো পান্ডার অন্তত ৫০ বছর আগে থেকে। এদের লম্বা লাল লেজ ও সুন্দর মুখের জন্য দেখতে একদম টেডি বিয়ারের মতো লাগে। এদের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। কারণ, এরা মূলত রাতের বেলায় সক্রিয় থাকে। জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। লাল পান্ডা এশিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। লাল পান্ডা এদের জীবনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়ে কাটায়।

আরও পড়ুন

অ্যাক্সোলোটল

তালিকায় বেশির ভাগ প্রাণী পশমওয়ালা স্তন্যপায়ী। তবে এই তালিকায় এসেছে এক অসাধারণ উভচর। চারটি পা থাকা সত্ত্বেও অ্যাক্সোলোটল নামক এই স্যালামান্ডার জীবনের পুরো সময় পানির নিচে কাটিয়ে দেয়। এদের সুন্দর চোখ, পালকযুক্ত ফুলকা ও মুখের কোনায় হাসির সামান্য ইঙ্গিত এদেরকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শরীরের অংশ আঘাতে বিচ্ছিন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুনরায় এই অঙ্গ তৈরি করার ক্ষমতা আছে এদের। দেখতে তেমন সুন্দর মনে না হলেও এরা বেশ রহস্যময় প্রাণী।

১০

পিকা

পিকা হলো খরগোশের একটি ছোট আকারের আত্মীয়, যা উত্তর আমেরিকার পাথুরে পাহাড়ে বাস করে। এদের নরম শরীর ও বৃত্তাকার মুখ শুধু সুন্দরই নয়, এরা বেশ চটপটে। কিছু পিকা খুব পরিশ্রমী। শীতের জন্য খাবার সংগ্রহ করে। তবে কিছু অলস পিকা আছে, নিজে সংগ্রহ করার চেয়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খাবার চুরি করতেই বেশি আগ্রহী।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া

আরও পড়ুন

ফিচার থেকে আরও পড়ুন