প্রায় এক হাজার বছরের একটি পুরোনো বীজ থেকে জন্মেছে গাছ। পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে বিজ্ঞানীদের লেগে গেছে প্রায় ১৪ বছর। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে মরুভূমির একটি গুহা থেকে পেয়েছিলেন বীজটি। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেমের কাছে মরুভূমিটির অবস্থান। বীজ পাওয়ার প্রায় ২০ বছর পর ২০১০ সালে তা রোপণ করেন গবেষকেরা। রোপণের পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই গজিয়েছিল পাতা। তা দেখে অবাকই হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, এটা কোনো সাধারণ বীজ নয়, এক হাজার বছরের পুরোনো বীজ। সাধারণত এত পুরোনো বীজ ভালো থাকে না। কারণ, পোকায় কাটে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে এই বীজ গবেষকেরা ভালো অবস্থায় পেয়েছেন। তাই বীজ থেকে গাছ জন্মেছে। গাছটি বর্তমানে প্রায় ১০ ফুট লম্বা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘শেবা’।
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর কমিউনিকেশনস বায়োলজি জার্নালের একটি প্রবন্ধে এ গাছ নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা গাছটির ডিএনএ, রাসায়নিক ও রেডিওকার্বন বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের সাহায্যে পাথর বা এ–জাতীয় বস্তুর বয়স নির্ধারণ করা হয়। গবেষকদের মতে, যে বীজ থেকে শেবা জন্মেছে, তা ৯১৩-১২০২ খ্রিষ্টাব্দের। বর্তমানের ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও জর্ডান অঞ্চলে এ গাছ ছিল। তবে এখন আর এ গাছের দেখা পাওয়া যায় না, পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে শেবা এখন এই প্রজাতির পৃথিবীর একমাত্র গাছ।
বীজ থেকে চারা তৈরির কাজটি করেছেন ইসরায়েলের জেরুজালেমের হাদাসাহ মেডিকেল সেন্টারের গবেষক সারাহ স্যালন ও তাঁর দল। সারাহ স্যালন বলেন, এটি বাইবেলে উল্লিখিত ‘সোরি’ প্রজাতির গাছ হতে পারে। এটি একটা ঔষধি গাছ।’
গাছে ফুট ফুটলে এবং বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার পরে হয়তো গাছটির আসল রহস্য উন্মোচিত হবে। এটি সম্পর্কে জানা যাবে আরও বিশদে। তা ছাড়া হারিয়ে যাওয়া একটি গাছকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনাও তো কম কিছু নয়।
গাছের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে একে কমিফোরা গণের অন্তর্গত বলে চিহ্নিত করেছে বিজ্ঞানী দল। যদিও পরিচিত ২০০ কমিফোরার সঙ্গে এই গাছের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই গণের উদ্ভিদ প্রধানত আফ্রিকা, মাদাগাস্কার ও আরব উপদ্বীপে পাওয়া যায়। কোনো উপায় না পেয়ে বিজ্ঞানীরা গাছের গন্ধ থেকে এর প্রজাতি নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ফুল ফুটলে আরও বিশদভাবে গাছটি সম্পর্কে জানা যাবে।
তবে ফুল ফোটার জন্য অপেক্ষা করে নেই বিজ্ঞানীরা। শেবার পাতা নিয়েও তাঁরা গবেষণা করেছেন। পাতায় ক্যানসাররোধী যৌগ আছে বলে মনে করেন তাঁরা। কারণ, পাতা ও কাণ্ডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ত্বক মসৃণকারী বৈশিষ্ট৵যুক্ত প্রাকৃতিক ও তৈলাক্ত পদার্থ আছে; কিন্তু আসলেই এ গাছের পাতা এমন ঔষধি গুণসম্পন্ন কি না, তা স্পষ্ট করে বলার জন্য আরও গবেষণা দরকার।
তবে প্রজাতি নির্দিষ্ট করে না গেলেও গাছটি তিনটি কমিফোরা প্রজাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ–সম্পর্কিত। সেগুলো হলো সি. অ্যাঙ্গোলেনসিস (C. angolensis), সি. নেগলেক্টা (C. neglecta) ও সি. টেনুইপেটিওলাটা (C. tenuipetiolata)। এ সব কটি প্রজাতিই বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়।
গাছে ফুট ফুটলে এবং বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার পরে হয়তো গাছটির আসল রহস্য উন্মোচিত হবে। এটি সম্পর্কে জানা যাবে আরও বিশদে। তা ছাড়া হারিয়ে যাওয়া একটি গাছকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনাও তো কম কিছু নয়। ঘটনাটা যেন জুরাসিক পার্কের সেই ডাইনোসর ফিরিয়ে আনার মতো। তবে ওগুলো কল্পনা হলেও গাছটি কিন্তু বাস্তবে জন্ম নিয়েছে এবং এখনো মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর বুকে।