এখন থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর পর আগে পৃথিবীতে দেখা গিয়েছিল ধূমকেতুটি। তখন পৃথিবীতে বসবাস করত নিয়ানডার্থাল মানুষেরা। এত বছর পর পৃথিবী থেকে আবার খালি চোখে দেখা যাবে এটি। ধূমকেতুটির নাম সি/২০২২ ই৩। ১ ফেব্রুয়ারি, বুধবার খালি চোখে এটা দেখা যাবে রাতের আকাশে। তবে খালি চোখে দেখার জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকা বাধ্যতামূলক। আজ যেহেতু পূর্ণিমা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই ধূমকেতুটি খালি চোখে দেখার সুযোগ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জুইকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি ২০২২ সালের মার্চে ধূমকেতুটির সন্ধান পায়। এ সময় সূর্যের থেকে ৬৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করছিল এটি। তখনই গবেষকেরা এ ধূমকেতুর নাম দেন সি/২০২২ ই৩।
১২ জানুয়ারি ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল। এ সময় সূর্য থেকে এর দূরত্ব ছিল ৪৮২ মিলিয়ন কিলোমিটার। তবে ১ ফেব্রুয়ারি ধূমকেতুটি যেহেতু পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে, তাই আরও স্পষ্ট দেখা যাবে এটি।
৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতার মান ছিল প্লাস ৪.৬। অর্থাৎ খালি চোখে দেখা যায় এমন সবচেয়ে দুর্বল বস্তুর চেয়ে এটা কিছুটা উজ্জ্বল। পৃথিবীর কাছাকাছি এলে ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতা আরও বাড়তে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, ধূমকেতুটি ওর্ট ক্লাউড নামের একটি এলাকা থেকে এসেছে। ওর্ট ক্লাউড মূলত সৌরজগতের চারপাশে বিশাল গোলক, যেখানে রহস্যময় বরফের বস্তুদের অবস্থান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে, সর্বশেষ এ ধূমকেতু যখন পৃথিবীকে অতিক্রম করেছিল, তখন পৃথিবীতে নিয়ানডার্থালদের বিচরণ ছিল।
ধূমকেতুটি বরফ ও ধূলিকণায় গঠিত। এটি পেছনে সবুজ আভা ছেড়ে যায়। কিন্তু সবুজ আভা ছেড়ে যায় কেন? আসলে ধূমকেতুটি কিন্তু মোটেও সবুজ নয়। কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এর মাথার অংশটি সবুজাভ দেখায়। দুটি কার্বন পরমাণু একসঙ্গে আবদ্ধ হয়ে একটি সাধারণ অণু গঠন করাকে বলে ডায়াটোমিক কার্বন। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এই অণুকে ভেঙে দিলে এটি সবুজ আভা নির্গত করে। বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হয় সেই আভা। এ কারণে ধূমকেতুটি সবুজ দেখায়।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক থমাস প্রিন্স বলেন, ‘ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছে আসায় দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এটির গঠন জানা সহজ হবে। এ ছাড়া এটি আমাদের সৌরজগৎ ও এর বাইরের গ্রহ সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারে।’
এই ধূমকেতু এবার পৃথিবীকে অতিক্রমের পর পুরোপুরি সৌরজগতের বাইরে চলে যাবে। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির দিকে ধূমকেতুটি ক্যাপেলা নক্ষত্রের দিকে যাবে। সেখান থেকে প্রবেশ করবে অরিগা নক্ষত্রমণ্ডলে। পৃথিবী থেকে আবার ৭৪০ হাজার বছর পর দেখা যাবে ধূমকেতুটি। এর গঠন নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।