রাজা তুতেনখামেনের মৃত্যুরহস্য
মিসরের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজা তুতেনখামেন। তাঁর মৃত্যুরহস্য নিয়ে প্রচুর আলোচনা আছে। তবে নিশ্চিত করা যায়নি, ঠিক কীভাবে মারা গিয়েছিলেন রাজা তুতেনখামেন। কয়েকটি অনুমান আছে। ১০১ বছর আগে তুতেনখামেনের সমাধি খুঁজে পাওয়ার পর মিসরের রাজাদের ইতিহাস চিরতরে বদলে গেছে। তার আগে থেকেই অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল, কীভাবে মারা গিয়েছিলেন রাজা তুতেনখামেন।
তুতেনখামেনের সমাধিস্থল থেকে রত্নালংকার আবিষ্কারের পর বোঝা গেছে, কেমন রাজকীয় শাসক ছিলেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান তুতেনখামেন। এর মধ্যে শেষ ১০ বছরই তিনি ছিলেন মিসরের শাসক। ৪ নভেম্বর ১৯২২ খুঁজে পাওয়া যায় তুতেনখামেনের বিখ্যাত সমাধি। প্রাচীন মিসরের মানুষের গড় আয়ু কম ছিল। বর্তমান সময়ের মতো স্বাস্থ্যসেবা তখন ছিল না। তবে তুতেনখামেন যে বয়সে মারা যান, প্রাচীন মিসরেও তা ছিল তরুণ বয়স।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অনুসন্ধানকারী গবেষক কার্টার তুতেনখামেনের সমাধির খোঁজে আবার নিবিড় অনুসন্ধান শুরু করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তিনি ‘ভ্যালি অব কিংস’ নামের একটা জায়গায় রাজা ষষ্ঠ রামসেসের সমাধির প্রবেশদ্বারের কাছে পাথরের নিচে চাপা পড়া একটি সিঁড়ি আবিষ্কার করেন। এই সিঁড়ি থেকে পাথর সরিয়ে পাওয়া যায় তুতেনখামেনের সমাধির বন্ধ দরজা। দরজা খুলে খুঁজে পাওয়া যায় চারটি সমাধিকক্ষ। চতুর্থ কক্ষে ছিল তুতেনখামেনের মমি করা মৃতদেহ।
তুতেনখামেনের জীবন ও সমাধি নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে গুজব প্রচারিত হয়, তা হলো তুতেনখামেনের অভিশাপ। তুতেনখামেনের শবদেহকে বিরক্ত করলে বরণ করে নিতে হবে মৃত্যু। সমাধি খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে তুতেনখামেন নিয়ে অনেকগুলো ধারণা ও গুজবের সমাধান হয়। গালগল্প আর গুজব থেকে সঠিক তথ্যগুলো ছেঁকে বের করেন অনুসন্ধানকারীরা।
জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০৫ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করেন তুতেনখামেন। আগে কোনো সমাধিতে পাওয়া যায়নি, এমন সব বহুমূল্যের উপকরণ ও সম্পদ দিয়ে সমাধিটি সাজানো ছিল। বহু বছর আগে মারা যাওয়া কারও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। তুতেনখামেনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একই রকম।
আবিষ্কারের পর তুতেনখামেনের মমিটির এক্স-রে, সিটি স্ক্যান ও ডিএনএ টেস্ট করেছেন গবেষকেরা। দেখা গেছে, তুতেনখামেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আরও কিছু অসুস্থতা ছিল তাঁর। যেমন হাতের তালু ফেটে গিয়েছিল। মৃত্যুর আগে তাঁর পা–ও ভেঙে যায়। এ তথ্য থেকে তুতেনখামেনের স্বাস্থ্যের একটি চিত্র পাওয়া যায়। তবে ঠিক কী কারণে তিনি মারা যান, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, এমন কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কারের সময় তাঁর মাথায় একটি সোনার মুখোশ পরানো ছিল। কফিনের ভেতরে ও বাইরে ছিল প্রচুর হীরা-জহরত। পরে মাথা কেটে মুখোশটি খোলা হয়।
মিসরে খুঁজে পাওয়া সমাধিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ সমাধি রাজা তুতেনখামেনের। কিছু গবেষক দাবি করেন, তাঁর রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব ছিল। তাঁরা মনে করেন, তুতেনখামেনের মা–বাবা পরস্পর ভাই–বোন হওয়ায় জিনগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁর। এ কারণেও তাঁর মৃত্যু হতে পারে। তবে নিশ্চিত করা যায়নি।