সাঁতার কাটা আমাদের অনেকের শখ। মাঝেমধ্যে সুইমিংপুল কিংবা সাগরে শখ পূরণ করতে নামি আমরা। যে সাঁতার জানে, সে নিশ্চিন্তে পানিতে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু যে জানে না, পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার ভয়ে অনেক সময় তার সাঁতার শেখা হয় না। কারণ, পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার ভয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না।
পৃথিবীতে এমন এক সাগর আছে যেখানে সাঁতার না জানলেও সাঁতার কাটা যায়। কেউ চাইলেও ডুবতে পারে না। ইচ্ছা করলে পানিতে ভেসে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা যায়। বাতাসভর্তি রাবারের টিউব যেমন কখনো পানিতে ডোবে না, তেমনি মানুষও এই সাগরে ডোবে না। তুমি চাইলে এখানে ভেসে ভেসে বই পড়তে পারে। ডুবে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। এই সাগরের নাম মৃতসাগর।
প্রশান্ত মহাসাগর, লোহিত উপসাগর, পারস্য উপসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগর। এই সব নাম আমাদের অনেকের জানা। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি হ্রদ রয়েছে যার নাম ‘ডেড সি’ বা মৃতসাগর। তবে সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ। এর অবস্থান জর্ডান ও ফিলিস্তিনের সীমান্তে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার (১,৩৭৮ ফুট) নিচে হওয়ায় এটিই পৃথিবীর নিম্নতম জলাভূমি। এখানে তীরের খনিজ পাথর ধুইয়ে লবণ এসে এই হ্রদে জমা হয়। এভাবে লবণ আরও বাড়ে।
এই হ্রদ ঘিরে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে তৈরই হয়েছে কাহিনি আর গল্প। বিভিন্ন বইয়ে বলা আছে এই সাগরের গল্প। এটি বিশ্বের সবচেয়ে লবণাক্ত হ্রদের একটি।
মৃতসাগর বা মরে যাওয়া সাগর নামটা শুনতে অদ্ভুত। আমরা তো জানি সমুদ্রের পানি মানেই লবণাক্ত। সমুদ্রের আছে নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র। মানে এই পানিতে বাস করে নানা স্তরের জীব। খুব ছোট শেওলা থেকে শুরু করে বিশাল তিমি পর্যন্ত। একে অপরের ওপর নির্ভর করে চলে।
মৃতসাগরের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৩৪.২%। যা সমুদ্রের পানির চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি। এই অত্যধিক নোনতা পানিতে না বাঁচতে পারে কোনো মাছ, না বাঁচতে পারে সাগরের নিচের অন্য কোনো গাছ ও প্রবাল। এই সাগরে কোনো প্রাণের বাস নেই বললেই চলে। এই বিশাল হ্রদে তাই কোনো মাছ নেই। নেই পানির নিচের কোনো গাছপালাও। এ কারণে এই জলভূমির নাম মৃতসাগর। এই হ্রদ কিন্তু মোটেও বিষাক্ত না। অনেকেই ভাবে, নির্ঘাত এই হ্রদের পানি বিষাক্ত। নইলে এতে কোনো মাছ বাঁচে না কেন? আসলে এখানে কোনো প্রাণী নেই, স্রেফ পানির লবণাক্ততার কারণে, অন্য কোনো কারণে নয়।
কিছু মানুষ মনে করে, এর পাশের মাটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। স্বাস্থ্যকর কাদামাটি গায়ে মেখে ভ্রমণকারীরা এখানে রোদ পোহান। মৃতসাগরের চারপাশে ভূমি। কোনো বড় নদী বা সাগরের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ নেই। তাই দিন দিন মৃতসাগরের লবণ বাড়ছে। গভীরতাও কমছে।
মূলত অতিরিক্ত লবণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে যায়। আর কোনো কিছু পানিতে ডোবালে বা ডোবানোর চেষ্টা করলে উপরের দিকে একধরনের চাপ দেয়। যেমন টেনিস বল পানিতে ডোবানোর চেষ্টা করলে ওপরে ভেসে উঠতে চায়। তুমি নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারো। বস্তুর আকৃতি যতটুকু, ততটুকু পানির জায়গা দখল করে। এইটুকু পানির ওজনের তুলনায় বস্তুর ওজন যদি বেশি হয়, তবে বস্তু ডুবে যায়। ওজন কম হলে বস্তু ভেসে ওঠে। ওজন সমান হলে পানির তলেও যায় না, ওপরে ভেসেও ওঠে না। মাঝামাঝি কোনো জায়গায় নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসতে থাকে। এরকম হয় প্লাবতার কারণে। নোনাপানির প্লবতার কারণে এই সাগরে মানুষ ডোবে না।
প্রাচীনকাল থেকে এই হ্রদের লবণাক্ত পানি মিশরের মমি তৈরির জন্য ব্যবহার হয়। সার উৎপাদনের জন্য পটাশ সংগ্রহ করা হয় এখান থেকে। প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই সাগরকে। এই হ্রদ থেকে প্রাপ্ত লবণ ও খনিজপদার্থ বিভিন্ন প্রসাধনী ও সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।