তুরস্কে পাওয়া গেছে বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার

পাথরটি পাওয়া গেছে দক্ষিণ তুরস্কের গোবেকলি তেপে অঞ্চলেছবি: আইজেনস্টেইন/গেটি ইমেজ

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ক্যালেন্ডার আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তুরস্কের একটি পাথরের স্তম্ভের কিছু চিহ্ন দেখে বিজ্ঞানীরা এই ক্যালেন্ডারের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। তবে এই পাথরস্তম্ভ খুঁজে পাওয়া গেছে আরও অনেক আগে। কিন্তু স্তম্ভে ক্যালেন্ডার আছে এবং এতে কী লেখা আছে, তা নিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিস্তারিত জানিয়েছেন।

পাথরটি পাওয়া গেছে দক্ষিণ তুরস্কের গোবেকলি তেপে অঞ্চলে। বিশ্বের প্রাচীনতম কৃষিকাজগুলো যেখানে শুরু হয়েছিল, এটি তার মধ্যে একটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, তখনকার মানুষ পৃথিবীতে কোনো ধূমকেতু আঘাত হানার তারিখ লিখে রাখতে এই ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল। এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ক্যালেন্ডার।

গোবেকলি তেপে খোদাই করা বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার
ছবি: মার্টিন সোয়েটম্যান

স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে, ১০ হাজার ৮৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ধূমকেতুর একটা টুকরা পৃথিবীতে আঘাত হানে। সেই তারিখ লিপিবদ্ধ করে রাখতেই তখনকার গোবেকলি তেপের মানুষেরা এই ক্যালেন্ডার লিপিবদ্ধ করে রাখেন।

ধূমকেতুর আঘাতের তারিখটি মনে রাখার জন্য এই ক্যালেন্ডার তৈরি হোক বা না হোক, ক্যালেন্ডার অবশ্যই তৈরি করেছিল মানুষ। সেটা যে উদ্দেশ্যেই হোক।

এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন সোয়েটম্যান। তিনি এর আগেও ২০২১ সালে ধূমকেতুর বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। পৃথিবীতে ধূমকেতুর আঘাতের ব্যাপারে এই প্রতিবেদনে লেখা ছিল। তাঁর মতে, এই ধূমকেতুর আঘাতের ফলে পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল বরফযুগ। যদিও সব বিজ্ঞানী তাঁর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেননি। কিন্তু তাতেও ক্যালেন্ডারের বিষয়টি বাদ দেওয়া যায় না। ওটার প্রমাণ এখনো রয়েছে। কী পাওয়া গেছে এই স্তম্ভে, যা দেখে বিজ্ঞানীরা একে ক্যালেন্ডার বলছেন?

আরও পড়ুন

খোদাই করা স্তম্ভটিতে ৩৬৫টি ‘V’ আকৃতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, প্রতিটি চিহ্নের সাহায্যে একেকটি দিন বোঝানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই ক্যালেন্ডারে ১২টি চন্দ্র মাস ও আরও ১১টি অতিরিক্ত দিনের হিসাব রয়েছে। V আকৃতির চিহ্নগুলো ছাড়া একটি বড় পাখির মতো প্রাণীর গলায় V আকৃতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, ওই চিহ্নের সাহায্যে তখনকার গ্রীষ্মের অলৌকিক নক্ষত্রমণ্ডলকে বোঝানো হয়েছে। বড় পাখিটির পাশে আরও কিছু ছোট পাখির আকৃতিও রয়েছে। সেগুলো সব দেবতাদের প্রতিনিধিত্বকারী চিহ্ন হতে পারে। কারণ, সে সময় মানুষ দেব-দেবীতে বিশ্বাস করত।

গোবেকলি তেপে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ। এতে ভি-আকৃতির চিহ্ন ও পাখির আকৃতি দেখা যাচ্ছে।
ছবি: ক্রিস ম্যাকগ্রাথ/গেটি ইমেজ

ধূমকেতুর আঘাতের তারিখটি মনে রাখার জন্য এই ক্যালেন্ডার তৈরি হোক বা না হোক, ক্যালেন্ডার অবশ্যই তৈরি করেছিল মানুষ। সেটা যে উদ্দেশ্যেই হোক। এবং এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো ক্যালেন্ডার। হয়তো ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা কিংবা প্রত্নতত্ত্ববিদেরা আরও পুরোনো কোনো ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করতে পারেন। কিন্তু যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন তুরস্কের এই ক্যালেন্ডারই প্রাচীনতম ক্যালেন্ডারের স্বীকৃতি নিয়ে থাকবে।

সূত্র: স্পেস ডট কম

আরও পড়ুন