বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ালেখা করলে সবচেয়ে ভালো মনে থাকে। এ কারণে আমরা অনেকেই পরীক্ষার আগে দ্রুত ঘুমিয়ে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রিভিশন দিই। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধারণা ভুল। বরং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অঙ্ক করলে সবচেয়ে ভালো মনে থাকে।
এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিসেস্টারের নিউরোসায়েন্সের সাইকোলজি অ্যান্ড বিহেভিয়ার বিভাগের লেকচারার জেইন স্পিলার। তাঁর গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে রয়েল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে।
জেইন স্পিলার যুক্তরাজ্যের ১৮৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের নিয়ে এই গবেষণা করেছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রত্যেকে ১৮-৪০ বছর বয়সী। তিনি প্রত্যেককে কিছু গুণ করতে দেন। ২২ থেকে ৩৩ সংখ্যার মধ্যে কোনো একটাকে ৬, ৭, ৮ কিংবা ৯ দিয়ে গুণ করতে বলেন। যেমন ২৫-কে ৮ দিয়ে গুণ করতে হবে। গবেষকেরা দেখতে চেয়েছিলেন, কতটা দ্রুত শিক্ষার্থীরা (সবাই শিক্ষার্থী ছিল না) গুণ করতে পারে।
এ জন্য গবেষকেরা প্রথমে রাত ৮টা থেকে রাত ১০.৪৫ পর্যন্ত তাদের গুণের নানা কৌশল শেখান। তারপর পরের দিন সকালে নেন পরীক্ষা। এরপর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেন। পরের সপ্তাহে ঠিক একইভাবে আবার অংশগ্রহণকারীদের আরও কৌশল শিখিয়ে পরীক্ষা নেন। তবে এবার সময় বদলে যায়। সকাল ৭.৩০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের কৌশল শেখানো হয়। পরীক্ষা নেওয়া হয় দিনের শেষে, অর্থাৎ বিকাল কিংবা সন্ধার দিকে। তবে উভয় পরীক্ষায় শেখানোর পর অন্তত ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
মজার বিষয় হলো, যারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কৌশল শিখে সকালে পরীক্ষা দিয়েছে, তারা পেয়েছে গড়ে ২০.৭ নম্বর। কিন্তু যারা সকালে শিখে বিকেলে পরীক্ষা দিয়েছে, তারা পেয়েছে গড়ে ১৮.৫ নম্বর।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তাই রাতে ভালো ঘুম হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া, আমাদের ঘুমের একটা সার্কেল বা চক্র আছে। সেই চক্র ঠিক না রাখলে ভালো ঘুম হয় না। যেমন, কেউ যদি প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমিয়ে সকাল ৬টায় ওঠে, তাহলে এটা তার ঘুমের চক্র। প্রতিদিন এই সময়েই ঘুমিয়ে পড়া ভালো। আবার কেউ যদি রাত দুইটায় ঘুমিয়ে সকাল সাতটায় ওঠে, তাহলে সেটাও তার ঘুমের চক্র। কে কখন ঘুমাচ্ছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার ঘুমের চক্র ঠিক আছে কি না। তাই পরীক্ষার সময়েও এই চক্র পরিবর্তন করা ঠিক নয়।
সবশেষ কথা, এই গবেষণাটা করা হয়েছে মাত্র ১৮৪ জনকে নিয়ে। হতে পারে ১ লাখ মানুষ নিয়ে গবেষণা করলে ফলাফল ভিন্ন হবে। তা ছাড়া নম্বরের পার্থক্যও খুব বেশি নয়। তাই রাতে পড়বে নাকি সকালে, তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। যে যেভাবে পড়ে অভ্যস্ত, সেভাবে পড়তে পারো। আর রাতে তো সবাই এমনিতেই পড়ে। ফলে ভয়ের কিছু নেই।
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র, কসমস ম্যাগাজিন, ফিজিক্স ডট অর্গ