এক মাসের কম সময়ে আঘাত হেনেছে চারটি ঘূর্ণিঝড়, পঞ্চমটি আসছে
গত চার সপ্তাহের কম সময়ে ফিলিপাইনে আঘাত হেনেছে বড় ধরনের চারটি ঘূর্ণিঝড়। আঘাত হেনেছে টাইফুন তোরাজি, তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ট্রামি, টাইফুন ইনশিং এবং সুপার টাইফুন কং। তোরাজির প্রভাব শেষ না হতেই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় উসাগি ধেয়ে আসছে ফিলিপাইনের দিকে। ফিলিপাইন উপকূলে আঘাত হানা থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থান করছে।
টাইফুন তোরাজির আঘাত থেকে রক্ষা করতে হাজারো মানুষকে বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সোমবার আঘাত হানা ঝড় তোরাজি ছিল দুর্বল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়। তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ঝড়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। রাতের মধ্যেই সমুদ্রের দিকে চলে গেছে ঝড়।
মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে পঞ্চম বড় ধরনের ঝড় আঘাত করতে যাচ্ছে এই দ্বীপপুঞ্জে। মঙ্গলবার নতুন আবহাওয়া সতর্কতা জারি করেছে ফিলিপাইন। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় উসাগি দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূল থেকে মাত্র দুই দিনের দূরত্বে অবস্থান করছে।
তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ট্রামি, টাইফুন ইনসিং এবং সুপার টাইফুন কং-রে এর আঘাতে নিহত হয়েছে ১৫৯ জন। এর দুই সপ্তাহ পর তোরাজির আঘাত হানার আগে ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
ট্রামির সময়েই ঘটেছে অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা। এই ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু করেছিল। ফলে মারাত্মক আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। তোরাজির পরে অবশ্য উল্লেখযোগ্য কোনো বন্যার খবর পাওয়া যায়নি।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় উসাগি ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) বাতাস উত্তর-পূর্ব উপকূলে বড় বড় ঢেউসহ আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এই অবস্থায় সমুদ্রগামী ছোট নৌযানগুলোকে সমুদ্রে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তোরাজির আঘাতে কোনো হতাহতের খবর না জানালেও সরকার জানিয়েছে, প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছে। সিভিল ডিফেন্স অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত সেতু মেরামত, বিদ্যুৎ লাইন পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। ভূমিধস, উপড়ে পড়া গাছ, বিদ্যুত লাইনের কারণে অবরুদ্ধ রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে বন্দরগুলো পুনরায় চালু হয়েছে। প্রায় ৬০০ শহরের মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করলেও ২৯টি শহর এখনও বিদ্যুৎবিহীন আছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উসাগির আঘাতের পর উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় মানই আগামী সপ্তাহে ফিলিপাইনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতি বছর দ্বীপপুঞ্জের এই দেশ এবং এর আশেপাশের জলসীমায় প্রায় ২০টি বড় ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। এর ফলে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী ফিলিপাইন হলো বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই প্রতিবেদনে দেশটিকে ৪৬.৮৬ সূচক স্কোর দেওয়া হয়েছে। এই সূচক দিয়ে বোঝায় দেশটি উচ্চ ঝুঁকি, আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও কাঠামোগত এবং দুর্বলতার কারণে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০ দুর্যোগপ্রবণ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান বা ১ নম্বরে আছে। এই তালিকায় ফিলিপাইনের পরের অবস্থানগুলোতে আছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, মিয়ানমার, মোজাম্বিক, চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঝড়গুলো ক্রমবর্ধমানভাবে উপকূলরেখার কাছাকাছি তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এগুলো আরও দ্রুত তীব্রতর হচ্ছে এবং স্থলভাগে দীর্ঘ সময় ধরে থাকছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান