হুইসেলব্লোয়ার। বাংলা করলে দাঁড়ায়, তথ্য ফাঁসকারী। তবে বোঝানো হয় অন্যায় বা অবিচারের তথ্য ফাঁসকারীদের। মার্কিন সিভিক অ্যাকটিভিস্ট র৵ালফ নাদের ১৯৭০–এর দশকে শব্দটার প্রচলন করেন। ‘ইনফরমার’ বা ‘স্নিচ’—এ রকম কিছু শব্দের মাধ্যমে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তথ্য ফাঁসকারীদের বোঝানো হতো। হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলেন কেউ, কিংবা জানিয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে। এ রকম মানুষদের বলা হয় ইনফরমার। এসব থেকে আলাদা করতেই এই নতুন শব্দ।
হুইসেলব্লোয়ার উইলিয়াম মার্ক ফেল্ট
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির নাম শুনেছ? ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত কেলেঙ্কারি হিসেবে খ্যাত এ ঘটনা। সেটা ১৯৭২ সালের কথা। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মূল রাজনৈতিক দল দুটি—ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি। নিক্সন ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির সদস্য। ওই সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান কার্যালয় ছিল ওয়াটারগেট অফিস বিল্ডিং। সামনে নির্বাচন। রিপাবলিকানরা তখন ভাবলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান কার্যালয়ে আড়ি পাতবেন। সেটা তাঁরা করলেনও বেশ সফলভাবে। এর পেছনে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মদদ ছিল। এ ঘটনা কে যেন ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নেস্টাইনকে জানিয়ে দেন। পত্রিকাটি এ খবর প্রকাশ করে। যিনি জানান, তাঁর নাম হিসেবে পত্রিকায় লেখা হয় একটি কোড ওয়ার্ড—ডিপ থ্রোট।
এরপর তোলপাড় হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। তদন্ত হয়। দোষী প্রমাণিত হন রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো এই গোপন তথ্য ফাঁসকারীর পরিচয় জানা যায়। উইলিয়াম মার্ক ফেল্ট ভ্যানিটি ফেয়ারকে জানান, ‘আমিই সেই ডিপ থ্রোট।’ ওই সময় তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর। এফবিআই তখন এতটা স্বাধীন ছিল না। যে কারণে ফেল্ট গোপনে ওভাবে তথ্য ফাঁস করতে বাধ্য হন।
একজন হুইসেলব্লোয়ারের কাজ কত তাৎপর্যপূর্ণ, এর উজ্জ্বল উদাহরণ উইলিয়াম ফেল্ট।