দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ১১৪ বছর বয়সী নাগরিক হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরার মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের ১১১ বছর বয়সী জন আলফ্রেড টিনিসউড এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ। ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের যাবতীয় রেকর্ড নথিবদ্ধকারী সংস্থা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্বীকৃতি দেয়।
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন-মারা গেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী পুরুষ)
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জন আলফ্রেডকে দেওয়া সনদে উল্লেখ করেছে, বিশ্বের জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি (পুরুষ) হলেন জন টিনিসউড (যুক্তরাজ্য, জন্ম আগস্ট ১৯১২), যাঁর বয়স ১১১ বছর ২২২ দিন। সাউথপোর্ট, মার্সিসাইড, যুক্তরাজ্য, ৪ এপ্রিল ২০২৪–এ যাচাই করা হয়েছে।
জন টিনিসউডকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় ছিল জাপানের ১১২ বছর বয়সী গিসাবুরো সোনোবে। তবে এ বছরের ৩১ মার্চ তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের সম্মান অর্জন করেন জন টিনিসউড। আর বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। যিনি সম্প্রতি নিজের ১১৭তম জন্মদিন উদ্যাপন করেছেন।
টাইটানিক ডুবেছিল যে বছর, অর্থাৎ ১৯১২ সালের ২৬ আগস্ট জন্ম তাঁর। ইংল্যান্ডের উত্তর–পশ্চিমের শহর লিভারপুল জনের জন্মস্থান। এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর বয়স ১১১ বছর ২২৪ দিন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের রেকর্ড অনুযায়ী, জাপানের জিরোইমন কিমুরা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বয়সী পুরুষ। যিনি ২০১৩ সালের ১২ জুন ১১৬ বছর বয়সে মারা যান।
জন টিনিসউড বর্তমানে সাউথপোর্টের একটি কেয়ার হোমে থাকেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মাধ্যমে জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার পর ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অফিশিয়াল বিচারক মেগান ব্রুস তাঁর দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে আরও জানতে ও তাঁকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে যান ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে। কেয়ার হোমে কর্মীরা তাঁকে ‘এ বিগ চ্যাটারবক্স’ বলে ডাকেন। মেগান ব্রুস জনের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দেখা করেন তাঁর সঙ্গে। জন টিনিসউড ইতিমধ্যেই প্রপিতামহ হয়েছেন।
১১১ বছর বয়স হলেও জন টিনিসউড অন্যদের মতোই নিজে দৈনন্দিন কাজ নিজেই করতে পারেন। তিনি সকালে বিছানা থেকে উঠে রেডিওতে খবর শোনেন। এ ছাড়া নিজের অর্থ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করেন।
জনের মতে, ‘তাঁর এই দীর্ঘায়ুর রহস্য হলো শুধু সৌভাগ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুমি দীর্ঘদিন বাঁচো কিংবা স্বল্পদিন বাঁচো, এর ওপর কারও হাত নেই।’ তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি কোনো নিয়ম মেনে খাবার খেতেন? তার উত্তরে তিনি জানান, ‘প্রতি শুক্রবার মাছ ও চিপস খাওয়ার বাইরে তিনি কোনো নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করতেন না। কেয়ার হোমে যা অন্যরা খেত, আমিও তা–ই খেতাম।’ এ ছাড়াও জন জীবনে কখনো ধূমপান করেননি।
জীবনের প্রথম থেকেই ফুটবল ক্লাব লিভারপুলের একজন সমর্থক জন। তিনি তাঁর ক্লাব লিভারপুলের এখন পর্যন্ত জেতা আট খেলার আটটি এফএ কাপ এবং উনিশটি লিগ টাইটেলের মধ্যে ১৭টিরই সাক্ষী। জন দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন। তাঁর যখন ২৭ বছর, তখন তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ফাইন্যান্স বিভাগে যোগ দেন। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সে যুদ্ধে হিসাব ও নিরীক্ষা, আটকে থাকা সৈন্যদের শনাক্ত, খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থায় কাজ করেন। বর্তমানে জন একমাত্র বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের জন্য জনের উপদেশ হলো, ‘সব সময় চেষ্টা করবে নিজে নতুন কিছু শেখার এবং অন্যকে নতুন কিছু শেখানোর। তোমার যা আছে, তা দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করো, না হলে তা সফল হবে না।’