না ঘুমিয়ে কি কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে
পৃথিবীতে নানা ধরনের প্রাণী আছে। কোনোটা উল্টো হয়ে ঝুলে ঘুমায়, কোনোটা ঘুমায় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আবার কোনোটা কাদার নিচে মুখ লুকিয়ে ঘুমায়। তবে যে যেভাবেই ঘুমাক না কেন, প্রাণীরা ঘুমায়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এমন কোনো প্রাণীর খোঁজ পাননি, যেটা একেবারেই ঘুমায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঘুম কি বেঁচে থাকার জন্য সত্যিই দরকারি?
ঘুম আমাদের জন্য কতটা জরুরি, তা আমরা সবাই জানি। এক রাত ঠিকমতো ঘুম না হলে ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা হলে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের মতো নানা সমস্যা হতে পারে। তাই সব প্রাণীই কমবেশি ঘুমায়। কিন্তু ঘুমের আসল কাজটা কী? ঘুম কি মস্তিষ্কের ক্ষত সারাতে পারে? নাকি এটি শরীরের শক্তি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয়? গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলও ঘুমের কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঘুমের আসল উদ্দেশ্য এখনো একটা রহস্য।
আরেকটি আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ফ্রিগেটবার্ড যখন উড়তে থাকে, তখন দৈনিক মাত্র ৪২ মিনিট ঘুমায়। অথচ মাটিতে থাকলে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়! তাহলে কি কম ঘুমানো সম্ভব, যদি শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়? হলেও হতে পারে।
প্রাণীদের আসলেই ঘুম প্রয়োজন কি না, তা ১৮৯০-এর দশকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন এক রুশ চিকিৎসক। তাঁর নাম মারি দে মানাসেইন। ঘুমের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিনি এক অদ্ভুত পরীক্ষা চালালেন। পরীক্ষার কথাটা জেনে এখন তোমাদের খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু কাজটা ওই চিকিৎসক করেছিলেন। তিনি কয়েকটা কুকুরছানাকে একটানা জাগিয়ে রাখেন। কয়েক দিন ঘুমাতে না পেরে ছানাগুলো মারা যায়! পরে তিনি একই পরীক্ষা চালান ইঁদুর ও তেলাপোকার ওপর। সেগুলোও পর্যাপ্ত ঘুম না পেয়ে মারা যায়। কিন্তু এই পরীক্ষা করেও তিনি ঘুমের সঙ্গে প্রাণীদের সম্পর্ক খুঁজে পাননি।
প্রাণীদের জন্য ঘুম যে জরুরি, তা এখন নিশ্চিত। পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই যেগুলো একেবারে না ঘুমিয়ে দিব্যি টিকে থাকতে পারে। তবে কিছু প্রাণী আশ্চর্যজনকভাবে কম ঘুমিয়েও বেঁচে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রাণীদের পর্যবেক্ষণ করলে ঘুমের আসল রহস্য বের করা যেতে পারে।
সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ফলের মাছি প্রায় ঘুমায়ই না! গবেষকেরা খেয়াল করলেন, কিছু স্ত্রী মাছি প্রতিদিন মাত্র ৭২ মিনিট ঘুমায়, যেখানে অন্য মাছিরা ঘুমায় ৩০০ মিনিট। এমনকি একটি মাছি মাত্র ৪ মিনিট ঘুমিয়েও দিব্যি বেঁচে ছিল!
প্রাণীদের আসলেই ঘুম প্রয়োজন কি না, তা ১৮৯০-এর দশকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন এক রুশ চিকিৎসক। তাঁর নাম মারি দে মানাসেইন। ঘুমের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিনি এক অদ্ভুত পরীক্ষা চালালেন।
গবেষকেরা এরপর আরও একটি চমকপ্রদ পরীক্ষা চালান। তাঁরা কিছু মাছির ৯৬ শতাংশ ঘুম কেড়ে নিলেন। অর্থাৎ, যে মাছিটা সাধারণভাবে ১০০ মিনিট ঘুমাত, সেটাকে মাত্র ৪ মিনিট ঘুমাতে দেওয়া হতো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, এদের জীবনকাল স্বাভাবিক মাছিদের মতোই ছিল! রুশ কুকুরছানাদের মতো এরা মারা যায়নি। তাহলে কি ঘুম আসলে এতটা জরুরি নয়, যতটা আমরা ভাবছি?
কিছু পাখি খুব কম ঘুমিয়েও বেশ ভালোভাবে কাজ চালিয়ে নিতে পারে। ২০১৬ সালে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক নিলস রাটেনবার্গ খেয়াল করলেন, বড় সামুদ্রিক পাখি গ্রেট ফ্রিগেটবার্ড একটানা উড়তে উড়তে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়! এই পাখিদের মস্তিষ্কে বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে দেখা গেছে, এরা উড়তে উড়তে খুব কম সময়ের জন্য একটু ঘুমিয়ে নেয়। অবশ্যই তা হালকা ঘুম।
অন্যান্য পাখিরাও এমনভাবে ঘুমাতে পারে। যেমন সুইফট পাখি টানা ১০ মাস পর্যন্ত উড়তে পারে! হয়তো এরাও উড়তে উড়তে একটু ঘুমিয়ে নেয়। তবে সুইফট পাখির ওড়ার সময় ঘুমানোর কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
কিছু পাখি খুব কম ঘুমিয়েও বেশ ভালোভাবে কাজ চালিয়ে নিতে পারে। ২০১৬ সালে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক নিলস রাটেনবার্গ খেয়াল করলেন, বড় সামুদ্রিক পাখি গ্রেট ফ্রিগেটবার্ড একটানা উড়তে উড়তে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়!
আরেকটি আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ফ্রিগেটবার্ড যখন উড়তে থাকে, তখন দৈনিক মাত্র ৪২ মিনিট ঘুমায়। অথচ মাটিতে থাকলে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়! তাহলে কি কম ঘুমানো সম্ভব, যদি শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়? হলেও হতে পারে। কারণ, এটা শুধু একজন গবেষকের অনুমান। এর কোনো প্রমাণ নেই।
তবে একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে প্রাণীদের ঘুম অবশ্যই দরকার। সেটা কম বা বেশি হতে পারে, কিন্তু ঘুমাতে হবে। তবে আসলেই কতটা ঘুম দরকার, তা এখনো রহস্য! বিজ্ঞানীরা হয়তো ভবিষ্যতে এর উত্তর বের করতে পারবেন।