একটি নতুন টি–শার্ট কিনলে কী হয়
এখন অনলাইনে জামাকাপড় কেনা খুব সহজ। ওয়েবসাইটে যাও। পছন্দ করো। কার্টে যোগ করো। অর্ডার করে দাও। তোমার বাসার দরজার সামনে কাপড়টি হাজির হয়ে যাবে। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়, এই কাপড় অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তোমার ঘরের দরজায় এসেছে। চলো, ধাপে ধাপে চিন্তা করি।
ধরি, তুমি একটি টি–শার্টের বিজ্ঞাপন দেখে পছন্দ করলে। কেনার জন্য অনলাইনে অর্ডার করে হাতে পেলে পরদিন। অনলাইনে অর্ডার করার জন্য ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়েছে। তোমার কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। অন্যদিকে টি–শার্টের কাপড় তৈরি হয়েছে সুতা বুনে। সুতা তৈরি হয় তুলা থেকে। প্রাকৃতিক গাছপালা পরিষ্কার করে জমিতে তুলা চাষ করা হয়। এর জন্য তুলাবীজ রোপণ, সার দেওয়া, যত্ন নেওয়া এবং ফসল তোলার মতো কাজ করতে হয়েছে।
যেকোনো ফসল লাগানো, সার দেওয়া ও ফসল কাটার জন্য প্রতিটি ধাপেই সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়। এগুলো তৈরিতে এককালীন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়েছে। কারখানায় টি–শার্টটি তৈরির সময় স্টিলের যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করে সুতা থেকে কাপড় তৈরি করা হয়েছে। কাটা, সেলাই, রঙের ছাপ, ইস্তিরি ও প্যাকেজিং করতে হয়েছে।
একটি সুতির টি–শার্ট বানাতে দরকার হয় প্রায় ২ হাজার ৭০০ লিটার পানি! পৃথিবীর ৯৭ শতাংশ পানি লবণাক্ত। ২ শতাংশ পানি বরফ হিসেবে জমাট হয়ে আছে। আর মাত্র ১ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য। এর মধ্যে ৭০ ভাগ খরচ হয় কৃষিকাজে। একটি কম টি-শার্ট বানালে বেঁচে যাবে একজন মানুষের ৯০০ দিনের খাবার পানি!
একটি ভালো কারখানায় শ্রমিকদের জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। স্টোরেজের জন্য গুদাম ঠান্ডা বা গরম করা লাগে। এটি তৈরি হয়ে গেলে টি-শার্টটি পাইকারি বা কারখানা থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছে পাঠাতে হয়। এ জন্য পণ্যবাহী জাহাজ, বিমান বা ট্রাক, গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি ব্যবহার করে ঘরের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। প্রতি পদক্ষেপেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। যদি ক্রেতা টি–শার্টে কোনো অসুবিধা খুঁজে পান বা পণ্যটি পছন্দ না হয়, তখন বাধে নতুন বিপত্তি। বিক্রেতার কাছে টি-শার্টটি ফেরত পাঠানো হয়। ভুল সাইজ বা কাপড়ের মান বা রঙের দুর্বলতার কারণে টি-শার্টটি বাতিল হতে পারে। এই রিভার্স প্রক্রিয়ায় আরও কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এখানেই শেষ না। বছরখানেকের মধ্যে শার্ট ব্যবহার শেষ হয়ে গেলে ফেলে দেওয়া হয়। টি-শার্টটি ময়লার গাড়ি ঘুরে মাটিতে চলে যাবে। ধীরে ধীরে পচে যাবে। এই টি–শার্টের কথা ভুলে যাওয়ার অনেক অনেক পরে এটি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করবে।
সব মিলিয়ে ফ্যাশনশিল্প প্রতিবছর প্রায় এক বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই–অক্সাইডের সমতুল্য গ্যাস নির্গত করে। এ রকম ধাপে ধাপে চিন্তা করলে একধরনের অপরাধবোধ কাজ করতে পারে। প্রয়োজন না থাকার পরও একটি টি–শার্ট পছন্দ হলো আর অর্ডার দিয়ে দিলাম, এ রকম করতে অস্বস্তি লাগতে পারে।
সারা বিশ্বের শিল্প থেকে নির্গমনের উত্স হিসাব করলে প্রতিবছর ৫১ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস কীভাবে তৈরি হচ্ছে, তা দেখানো সম্ভব। এগুলোর মধ্যে জীবনযাপনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে এমন অনেক কিছুই আছে। শিল্পবিপ্লব শুরু হয়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়া শুরু করেছে অনেক দিন হলো। একইভাবে আরেকটি শিল্পবিপ্লব আনা প্রয়োজন। যেটি হবে সবুজ শিল্পবিপ্লব। পৃথিবীকে বাঁচাতে এর প্রয়োজন হবে। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ ইত্যাদি সবুজ শিল্পবিপ্লবের চালিকা শক্তি হবে।
টি-শার্ট কেনার এই ধাপগুলো দেখায়, জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে পরস্পরের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অপ্রয়োজনীয় পোশাকের ব্যাপারে নতুন করে ভাবলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখা যাবে।