ইগুয়ানার অজানা ৭

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ডিসকভারি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা ইগুয়ানা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র দেখেছি। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার অধিবাসী এই মিশুক প্রাণীগুলো দলবদ্ধভাবে বাস করে। হলুদ ও ধূসর থেকে শুরু করে উজ্জ্বল সবুজ পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের ইগুয়ানা দেখতে পাওয়া যায়। দেখতে ছোট হলেও আসলে এদের দৈর্ঘ্য ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। অনেক দেশে ইগুয়ানাকে পোষ্য হিসেবে পালন করা হয়।

জীবনকাল বেশ দীর্ঘ

যথাযথ যত্নের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে থাকা ইগুয়ানা ২০ বছর বা এর বেশি সময়ও বাঁচতে পারে
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

ইগুয়ানার জীবনকাল বেশ দীর্ঘ। গড়ে একটি ইগুয়ানা ১২ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। তবে যথাযথ যত্নের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে থাকা ইগুয়ানা ২০ বছর বা এর বেশি সময়ও বাঁচতে পারে। আরও বিরল প্রজাতির যেমন গ্র্যান্ড কেম্যান ব্লু ইগুয়ানা উল্লেখযোগ্য। যেটি বন্য অবস্থায় ২০ থেকে ৪০ বছর এবং পালিত অবস্থায় ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

ইগুয়ানাদের একটি তৃতীয় চোখ আছে

ইগুয়ানার তৃতীয় চোখ অন্যান্য প্রাণীর চোখের মতো শঙ্কু কোষ বা রড কোষ ব্যবহার করে কাজ করে না
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

ইগুয়ানার মাথার ওপরে একটি ফ্যাকাশে স্কেলের মতো দেখতে তৃতীয় চোখ থাকে। এই চোখটি আলোর নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। যা ইগুয়ানাকে ওপর থেকে আসা শিকারি পাখির মতো বিপদগুলো থেকে রক্ষা করে। এটি অন্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর চোখের থেকে ভিন্ন। ইগুয়ানার তৃতীয় চোখ অন্যান্য প্রাণীর চোখের মতো শঙ্কু কোষ বা রড কোষ ব্যবহার করে কাজ করে না। বরং এটি সেন্সরের মতো রাসায়নিক উপাদান শনাক্তের মাধ্যমে বিপদ শনাক্ত করে।

আরও পড়ুন

ইগুয়ানাদের ঠান্ডা অপছন্দ

ঠান্ডা এলাকায় ইগুয়ানা খুব একটা দেখা যায় না
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

সবুজ ইগুয়ানা মূলত মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায়। বেশ কিছুকাল ধরে দক্ষিণ ফ্লোরিডায়ও এরা বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠেছে। কারণ, এসব এলাকা খুব গরম। সারা বছর রোদ থাকে। ইগুয়ানাদের বেঁচে থাকার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন। তাই মধ্য ও উত্তর ফ্লোরিডার মতো ঠান্ডা এলাকায় ইগুয়ানা খুব একটা দেখা যায় না। এরা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো গরম জায়গা বেশি পছন্দ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ও কিসের মতো শহর এলাকা ইগুয়ানাদের জন্য আদর্শ বাসস্থান। এখানকার গরম আবহাওয়া এবং সরাসরি সূর্যের আলো এদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি। তাই এখানে গেলে ইগুয়ানাদের রোদে শুয়ে থাকতে দেখতে পাবে।

ইগুয়ানা চমৎকার সাঁতারু

এরা নোনা পানি ও মিঠা পানিতে সাঁতার কাটতে পারে
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

ইগুয়ানা সাঁতার কাটতে খুবই পারদর্শী। এরা প্রায়ই জলাশয়ের কাছে বাস করে। শিকারিদের থেকে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরা নোনা পানি ও মিঠা পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। এদের লম্বা লেজ এদের পানির নিচে ডুব সাঁতার দিতে বেশি সাহায্য করে। পানির তাপমাত্রা ঠিক থাকলে এরা ২৮ মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে শ্বাস বন্ধ করে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন

ইগুয়ানা খুব দ্রুত দৌঁড়াতে পারে

এই দ্রুত গতি শিকারীদের থেকে বাঁচার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল এদের জন্য
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

ছোট পা থাকা সত্ত্বেও ইগুয়ানারা অবিশ্বাস্য গতিতে দৌড়াতে পারে। কালো স্পাইনি-টেইলড ইগুয়ানার মতো কিছু প্রজাতি ঘণ্টায় ২১ মাইল পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এই দ্রুত গতি শিকারীদের থেকে বাঁচার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল এদের জন্য। বন্য অঞ্চলে সাপ, প্যাঁচা, বাজপাখি ও বিড়ালের মতো অনেক প্রাণী ইগুয়ানা শিকার করে। এই গতিতে দৌড়ালে এদের ধরা কিছুটা মুশকিল শিকারিদের জন্য।

সবজি খুবই পছন্দ

বন্য অঞ্চলে এরা বিভিন্ন ধরনের ফল, পাতা ও শাকসবজি খায়
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

ইগুয়ানারা মূলত তৃণভোজী। বন্য অঞ্চলে এরা বিভিন্ন ধরনের ফল, পাতা ও শাকসবজি খায়। মাঝেমধ্যে শামুক, পোকামাকড় বা পাখির ডিম খেয়ে থাকে। তবে প্রাণীজ প্রোটিন এদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই এদের গাঢ় পাতাযুক্ত সবজি, স্ন্যাপ মটর, গাজর, গোলমরিচ, স্কোয়াশ এবং সামান্য পরিমাণ ফল খাওয়ানো উচিত।

আরও পড়ুন

ইগুয়ানারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে

মাথা নাড়িয়ে ও ঘাড়ের ফ্ল্যাপ নড়িয়ে মনের ভাব বোঝাতে পারে
ছবি : ফ্রি পিক

ইগুয়ানারা সামাজিক প্রাণী। অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, যেকোনো স্থানে একাধিক ইগুয়ানা থাকলে এরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বলা যেতে পারে নিজেদের মধ্যে আওয়াজ করে কথা বলে। আবার এরা মাথা নাড়িয়ে ও ঘাড়ের ফ্ল্যাপ নড়িয়ে মনের ভাব বোঝাতে পারে। যেমন ইগুয়ানারা ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়ে একে অপরকে স্বাগত জানায়। কিন্তু যদি এরা দ্রুত মাথা নাড়ায় বা লেজ চাবুকের মতো নাড়ায় তাহলে বুঝতে হবে এরা রেগে গেছে। এই সময় এদের কাছে যাওয়া উচিত হবে না।

সূত্র: পেটস শিওর, ইগুয়ানা কন্ট্রোল

আরও পড়ুন