মার্চ মাসের কিআড্ডায় অংশ নিতে গত ১৬ মার্চ দুপুরে কিআর পাঠকেরা ভিড় করে কিশোর আলোর কার্যালয়ে। সভা শুরু হয় বেলা তিনটায়। শুরুতেই চলে বই নিয়ে আলোচনা। বইমেলা তো বেশ কয়েক দিন আগেই শেষ। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে সবাই আলোচনা করছিল।
আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক এবং প্রথমার কর্মকর্তা মেরিনা ইয়াসমিন। মেরিনা ইয়াসমিন কিআর পাঠকদের সঙ্গে নিজের ছেলেবেলার গল্প করেন। শৈশবে বইয়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী আর স্কুলের লাইব্রেরিয়ান হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। বইয়ের প্রকাশনা নিয়ে কথা উঠতেই কিশোর আলোর শিশু-কিশোরদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘কে কে লেখক হতে চাও?’ বেশ কয়েকটা হাত উঠল। ভালো লেখক কীভাবে হওয়া যায়, তা নিয়ে বেশ কিছু সময় আলোচনা হলো। এরপর প্রশ্ন ওঠে, ‘নন-ফিকশন কি পড়তে হবে? পড়লে কতটুকু?’ তুমুল আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, সব ধরনের বই পড়তে হবে; হোক ফিকশন বা নন–ফিকশন। তবে পড়তে হবে ভালোবেসে। আনিসুল হক ও মেরিনা ইয়াসমিনের মতে, বইটা যতই বিখ্যাত হোক না কেন, পছন্দ না হলে পড়ার দরকার নেই। পাশাপাশি কবিতাও পড়তে হবে। আনিসুল হকের মতে, সবার কমপক্ষে ৩০টি ভালো কবিতা মুখস্থ থাকা উচিত। সভায় একজন পাঠক কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়।
আনিসুল হক ও মেরিনা ইয়াসমিনকে বিদায় জানানোর পর স্বাগত জানানো হয় এবারের সভার নতুন সদস্যদের। তারা বেশির ভাগই এসেছে কিশোর আলোর মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে। একজন নাকি এসেছে বিকেলের পড়া ফাঁকি দিতে! এবার সভায় দেখানো হয়েছে শর্টফিল্ম ‘পিচ্চু’ ও ‘স্ন্যাক অ্যাটাক’। শর্টফিল্ম দেখে সবাই আনন্দ পেয়েছে।
কথায় কথায় উঠে আসে জোকের প্রসঙ্গ; পোকা নয়! কৌতুক। রসিকতা করারও যে নিয়মকানুন আছে, তা প্রথমবারের মতো জানতে পারে মিটিংয়ের সদস্যরা। কিআ সভার সঞ্চালক পাভেল মহিতুল আলমের মতে, সব বিষয় নিয়েই কৌতুক করা যেতে পারে, কিন্তু কোন কৌতুক কোথায় বলা উচিত, সেটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে, এই কৌতুক কোথায় কেমন প্রভাব ফেলছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকলে সেই কৌতুক পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক হাবীবুল মোস্তফা উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন জাপানে। তাঁকে শুভকামনা জানিয়ে কেক কাটা হয়।
প্রতিবারের মতো এবারও আলোচনা হয় নতুন সংখ্যা নিয়ে। আড্ডাটাই যেহেতু কিশোর আলোর, কিআ নিয়ে আলোচনা তো থাকবেই! কার এবার কী ভালো লাগল বা লাগল না, কোথায় ভুল ছিল, এসব নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। উপস্থিত পাঠকেরা সবাই এবারের সংখ্যার লেখা, ফিচার, গল্প, সবকিছু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও গরমিল একটা জায়গায়—প্রচ্ছদটা একটু বেশিই হলুদ হয়ে গেল না? সবারই মনে হয়েছে, প্রচ্ছদে আরও রঙের প্রয়োজন ছিল। প্রচ্ছদ পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভুল ধরার খেলা। এবারের সংখ্যায় কোথায় কী ভুল আছে, তা বের করার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আলোচনা শেষে ছিল কুইজ। প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে তিন বন্ধু জিতে নেয় পুরস্কার। এত কিছুর মধ্যে ছবি আঁকায় ব্যস্ত ছিল কিশোর আলোর সবচেয়ে খুদে সদস্যরা। ভালো ছবি আঁকলেই যে রয়েছে পুরস্কার, তা তো তারা মিটিংয়ের শুরুতেই জেনে গেছে।
আলোচনা শেষে একসঙ্গে সবাই আনন্দ নিয়ে ইফতার করে। ইফতার করার পর সবাই বাড়ির পথ ধরে মিষ্টি কিছু স্মৃতি সঙ্গে করে।