জাবি শিক্ষার্থীরা দূর করল ২৮ বছরের জঞ্জাল
জাহাঙ্গীরনগরের একমাত্র সুইমিংপুলটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়টির জিমনেসিয়ামের পেছনে। পরিত্যক্ত পুলটি তৈরির পর থেকে ব্যবহৃত হয়নি বললেই চলে। অনেকের মুখে শোনা যায়, সুইমিংপুলটি সংস্কার করতে যে বাজেট বরাদ্দ ছিল, তা দিয়ে তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র। তৈরির পর থেকেই পুলটির দিকে নজর নেই কারও। হঠাৎ দেখলে সুইমিংপুলটিকে ডাস্টবিন ভেবেও ভুল করতেন অনেকে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবর্জনা জমে দুর্গন্ধে বেশ শোচনীয় অবস্থা ছিল। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মামুরের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী উদ্যোগ নিলেন পুলটিকে উদ্ধার করার।
ক্যাম্পাসে আঁকিয়ে হিসেবে আবদুল্লাহ মামুর পরিচিত। যাত্রীছাউনি, ব্রিজ, জাকসু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়াল রঙিন হয়ে আছে চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থীর আঁকায়। ফলে মামুর যখন সুইমিংপুলটির সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন, সঙ্গে পেয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। সবাই মিলে নেমে পড়েন পরিত্যক্ত পুলটিকে বদলে দিতে।
কাজটা বেশ কঠিন। প্রায় ২৮ বছর ধরে এখানে কারও হাত পড়েনি। পুলটি পরিষ্কার করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আবর্জনা সরিয়ে পরিষ্কার করলেই কেবল জায়গাটা আঁকার উপযোগী হবে। এ সময় এগিয়ে এলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৫১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফারভিদ মিরাজ ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রাদারহুড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। মামুর আর তাঁর সহযোগীদের নিয়ে প্রথমে পুলটি পরিষ্কার করা শুরু করে তারা। জমে থাকা পানি থেকে জাল দিয়ে ময়লা তোলা, পুলের আশপাশের আগাছা সরিয়ে দেয়ালগুলো পরিষ্কার করা—অল্প সময়ের মধ্যে দারুণভাবে কাজগুলো করে ব্রাদারহুড। পুল রাঙানোর কাজ শুরু হয় এর পরপরই।
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মিলিয়ে পুলটি বেশ বড়। স্বাভাবিকভাবেই বড় পুলের দেয়ালে আঁকতে দরকার অনেক টাকার রং। কয়েকজন শিক্ষার্থীর পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। কাজটি সমাধা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সবাই মিলে অর্থ দিয়ে রং আর সরঞ্জামাদি কেনার ব্যবস্থা করে ফেলেন। এরপর শুরু হয় আঁকাআঁকি।
দিন-রাত চলে আঁকাআঁকি। দিনের রোদ, রাতের শীত কিংবা মশার উপদ্রব—সবকিছু ছাপিয়ে সুইমিংপুলকে রঙিন করে তোলেন আঁকিয়েরা।
সব মিলিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ পরিশ্রমের পর শেষ হয়েছে কাজ। ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরা পুলটির চেহারাই বদলে গেছে। এ খবর পৌঁছে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও। দল বেঁধে সবাই ছুটে আসছেন সুইমিংপুলে। রঙিন পুল দেখে অভিভূত হচ্ছেন তাঁরা।