গাছের মালিক কে—এ নিয়ে তর্কাতর্কির ঘটনা আমাদের দেশে ঘটে অহরহ। এমনকি গাছের মালিকানাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ—পত্রিকায় এমন সংবাদও ছাপা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আছে উল্টো নজির। গাছের মালিক স্বয়ং গাছ! বিস্ময়কর হলো, সত্যিই এমন একটা গাছ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এথেনস শহরের ফিনলে স্ট্রিটের একটি ওকগাছের মালিক ওই ওকগাছটিই। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, গাছ কোনো কিছুর মালিক হয় কীভাবে? তা–ও আবার নিজেই নিজের মালিক? সাধারণত সব গাছেরই কোনো না কোনো মালিক থাকে। কোনো গাছের মালিক না থাকলে গাছটির মালিক হয় দেশটির সরকার। তাহলে এই ওকগাছ ব্যতিক্রম হলো কীভাবে?
ফিনলে স্ট্রিটের যে জমির ওপর ওকগাছটি দাঁড়িয়ে আছে, সেটির প্রকৃত মালিক কর্নেল উইলিয়াম এইচ জ্যাকসন। ছোটবেলায় শখের বসে ফিনলে স্ট্রিটে ওকগাছটি লাগিয়েছিলেন জ্যাকসন। শুধু তা–ই নয়, পরম যত্নে গাছটির পরিচর্যা করে গেছেন আজীবন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে জ্যাকসন করেন এক অভাবনীয় কাজ। সাদা ওকগাছটিকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে ওই জমিটুকু লিখে দিয়ে যান গাছটির নামেই। অর্থাৎ, গাছটিকেই তিনি বানিয়ে দেন ওই জমির মালিক। জ্যাকসনের এই উইলের মাধ্যমে চারপাশের আট ফিট জমির মালিক হয়ে যায় ওকগাছ।
জ্যাকসন গাছটির নামে জমিটি লিখে দেন ১৮৯০ সালে। প্রকৃতিপ্রেমী এই ভদ্রলোক মারা যান এর কিছুদিন পরই, ১৯১২ সালে। কিন্তু তত দিনে গাছটির মায়ায় পড়ে যান আশপাশের প্রতিবেশীরাও। তাদের যত্নে দিনে দিনে বেড়ে ওঠে গাছটি। দাঁড়িয়ে থাকে সগৌরবে। ১৯৩২ সালে জ্যাকসনের স্মৃতির সম্মানে গাছটির সামনে বসানো একটি দক্ষিণ ফিনলে স্ট্রিটের একটি ট্রেডমার্কে পরিণত হয় ওকগাছটি।
কিন্তু ১৯৪২ সালে হঠাৎ ভেঙে পড়ে গাছটি। ঠিক কী কারণে যে গাছটি ভেঙে পড়ে গেল, সেটি নিয়ে কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারেনি এথেনস শহরের মানুষ। ঝড়ো বাতাস কিংবা বজ্রপাত, যেকোনো কিছুই হতে পারে গাছটির ভেঙে পড়ার কারণ। কারণ যেটিই হোক, গাছটিকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন সবাই। এখন কী করা যায়?
এই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এথেনস জুনিয়র লেডিস গার্ডেন ক্লাব। গাছটির দেহাবশেষ নিয়ে গিয়ে গাছটির কলম করে চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা করে তারা। মূল গাছটি যেখানে ছিল, সেখানে লাগানো হয় গাছটির চারা। দেখতে দেখতেই বড় হয়ে যায় গাছটি। অল্প সময়েই ধারণ করে মহিরুহের আকার। নতুন গাছটি যেহেতু আগের গাছটিরই বংশধর, ফলে এই স্বাভাবিকভাবেই জমির মালিক হয়ে যায় গাছটি।
বহু বছরের পুরোনো ওকগাছটি এখন এথেনস বাসিন্দাদের কাছে গর্ব। এখনো সবাই মিলে পরিচর্যা করে গাছটির। এমনকি প্রতিবছর গাছটির স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে উৎসবে মাতেন শহরের বাসিন্দারা। পুরো শহরে বপন করেন এই গাছেরই বীজ। বড়দিনের সময় নানা ধরনের রঙিন কাগজ, আলো, খেলনা দিয়ে সাজানো হয় গাছটি।
কে জানত, সাধারণ একটি ওকগাছ হয়ে যাবে একটি শহরের সব মানুষের জন্য গর্ব এবং ভালোবাসার বিষয়!