আমরা প্রায়ই পৃথিবীকে সবচেয়ে অদ্ভুত ও রহস্যময় গ্রহ হিসেবে মনে করি। কিন্তু মহাবিশ্বে অনেক এমন অদ্ভুত গ্রহ রয়েছে, যা আমাদের কল্পনার বাইরে। মঙ্গল গ্রহ এর মধ্যে অন্যতম। আমাদের সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ এটি। এ লাল গ্রহটি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। আমাদের অনেকের মধ্যেও মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গভীর আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহ আরও বেড়ে যায়, যখন বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির সন্ধান পান।
সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির নাম অলিম্পাস মনস। স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে বোঝা যায় না এটি একটি আগ্নেয়গিরি। মঙ্গলের বিশাল লাল মাটির মাঝখানে অলিম্পাস মনস একটি দ্বীপের মতো উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জানা গেছে, এটি এখন পর্যন্ত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি। আর মঙ্গলের সবচেয়ে উঁচু স্থানও এটি। অনেকেই ভেবে দুঃখ পেতে পারেন, সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরিটি পৃথিবীতে নয়, বরং মঙ্গলে অবস্থিত। এটি নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল গ্রহ ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। যদিও মঙ্গলে মানুষ পাঠানো এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। এ জন্য আমাদের হয়তো আরও কয়েক বছর বা কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে।
অলিম্পাস মনস দেখতে বিশাল ঢালের মতো। আগ্নেয়গিরির লাভা ধীরে ধীরে এই ঢাল বেয়ে নেমে এসে বিশাল পর্বত গঠন করেছে। এই পর্বতের ঢাল খুব বেশি খাড়া নয়। মাত্র ৫ শতাংশ খাড়া। তা ছাড়া মঙ্গলের মহাকর্ষ পৃথিবীর মহাকর্ষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, আগ্নেয়গিরিটি উচ্চতায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার। যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা মাউন্ট এভারেস্টের প্রায় তিন গুণ। ৬০১ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় এটি অবস্থিত। যা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের প্রায় সমান। অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা আগ্নেয়গিরি হলো মাউনা লোয়া। যেটি প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ হাওয়াইয়ে অবস্থিত। সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উঁচু এটি। যদিও এর শিখর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার উঁচু। অর্থাৎ মাউনা লোয়ার বেশির ভাগ অংশই সমুদ্রের নিচে রয়েছে। অলিম্পাস মনসের আয়তন মাউনা লোয়ার প্রায় ১০০ গুণ।
অলিম্পাস মনস দেখতে বিশাল ঢালের মতো। আগ্নেয়গিরির লাভা ধীরে ধীরে এই ঢাল বেয়ে নেমে এসে বিশাল পর্বত গঠন করেছে। এই পর্বতের ঢাল খুব বেশি খাড়া নয়। মাত্র ৫ শতাংশ খাড়া। তা ছাড়া মঙ্গলের মহাকর্ষ পৃথিবীর মহাকর্ষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ কারণে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি থেকে এই ঢাল কিছুটা ভিন্ন। অলিম্পাস মনসের চূড়ায় প্রায় ৮৫ কিলোমিটার চওড়া একটি বিশাল গর্ত রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, গর্তটি আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে থাকা ম্যাগমা চেম্বার ধসে পড়ার ফলে তৈরি হয়েছে। যখন ম্যাগমা বের হয়ে যায়, তখন খালি জায়গাটি ধসে পড়ে। সেখান থেকে এ ধরনের গর্ত তৈরি হয়। এখন অনেকে হয়তো ভাববে এত উঁচু পর্বতের উচ্চতা আসলে মাপা হয়েছে কীভাবে? বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ঘুরতে থাকা একটি উপগ্রহ—মার্স অরবিটার লেজার আলটিমিটার (MOLA) ব্যবহার করে অলিম্পাস মনসের উচ্চতা নির্ণয় করেছেন।
আগ্নেয়গিরিটির বয়স খুব বেশি নয়। এখানে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল আড়াই কোটি বছর আগে। অলিম্পাস মনস থেকে এর চারপাশে তাকালে থারসিস অঞ্চলের অন্যান্য বিশাল আগ্নেয়গিরি দেখতে পাওয়া যায়।
যেহেতু মঙ্গল গ্রহে কোনো মহাসাগর নেই, তাই পৃথিবীর মতো এর একটি নির্দিষ্ট ‘সমুদ্রতল’ নির্ধারণ করা কঠিন। তবে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের জন্য একটি কাল্পনিক ‘সমুদ্রতল’ ধরে নিয়েছেন। যাকে অ্যারিয়েড বলা হয়। এই অ্যারিয়েড মঙ্গলের গড় নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধের সমান। তুলনা করলে দেখা যায় অলিম্পাস মনস অ্যারিয়েডের থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার উঁচু। যদিও এটি মঙ্গলের সবচেয়ে উঁচু পর্বত। মঙ্গলের থারসিস আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল এ আগ্নেয়গিরিটি। আগ্নেয়গিরিটির বয়স খুব বেশি নয়। এখানে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল আড়াই কোটি বছর আগে। অলিম্পাস মনস থেকে এর চারপাশে তাকালে থারসিস অঞ্চলের অন্যান্য বিশাল আগ্নেয়গিরি দেখতে পাওয়া যায়। নাসার তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রায় ১২টি বিশাল আগ্নেয়গিরি রয়েছে। অঞ্চলটি প্রায় চার হাজার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। মঙ্গল গ্রহের কম মহাকর্ষের কারণে এর আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর আগ্নেয়গিরির তুলনায় অনেক বড় হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এই আগ্নেয়গিরি মঙ্গল গ্রহের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে অর্থাৎ ২০০ কোটি বছর ধরে সক্রিয় ছিল।