বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এক বিখ্যাত লেখক। নাম জঁ পল সার্ত্রে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৪ সালে। সে বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। তাঁর লেখাগুলো ছিল আইডিয়ায় ভরপুর। লেখার মধ্যে ছিল স্বাধীনতার চেতনা আর সত্যের অনুসন্ধান। যেগুলো পরে মানুষের জীবনে অনেক প্রভাব রেখেছে।
জঁ পল সার্ত্রে নোবেল কমিটির কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটা সময়মতো পৌঁছায়নি। দেরি হয়েছিল। সুইডিশ একাডেমি লেখকের সেই চিঠি বছর চারেক আগে প্রকাশ করেছে। জঁ পল সার্ত্রে চিঠি লিখে সুইডিশ একাডেমিকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যেন নোবেল পুরস্কার না দেওয়া হয়। পুরস্কার দেওয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন। কিন্তু চিঠি পাওয়ার আগেই নোবেল কমিটি বিজয়ী হিসেবে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জঁ পল সার্ত্রে মনে করতেন, লেখকের শুধু শব্দ বা লেখার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে। লেখকের রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাহিত্যিক অবস্থান প্রকাশ পাবে লেখার মাধ্যমে। তাঁকে যদি সম্মাননা দেওয়া হয়, তাহলে পাঠকের ওপর চাপ তৈরি হবে, যা তিনি চান না। তাই ফিরিয়ে দেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।
সুইডিশ একাডেমি ৫০ বছর ধরে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন বা বাছাইয়ের সব তথ্য গোপন করে রাখে। তাই এই চিঠির কথা জানতে লেগে গিয়েছিল ৫০ বছর।
নোবেলের ইতিহাসে ১৯৭৩ সালের শান্তি পুরস্কার ছিল সবচেয়ে বিতর্কিত। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছিল। লে দুক তো ভিয়েতনামের বিপ্লবী ও কূটনীতিবিদ ছিলেন। প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারি প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ছিল, ৮০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেওয়া, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত, দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন, দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থান করার চুক্তি। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও দুই পক্ষই চুক্তি ভঙ্গ করে হামলা চালায়। যুদ্ধ থামেনি দাবি করে লে দুক তো নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। হেনরি কিসিঞ্জার ও লি ডাক থোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির দুই সদস্য প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। কারণ, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ভিয়েতনামে যুদ্ধ চলছিল।
কিসিঞ্জার ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। অনেকেই সমালোচনা করতেন যে কিসিঞ্জার পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন। অন্যদিকে লে দুক তো পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ, ভিয়েতনামে তখনো শান্তি ফেরেনি। শান্তি পুরস্কার গ্রহণের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি বলে দাবি ছিল তাঁর।
পরে ১৯৭৫ সালে উত্তর ভিয়েতনাম ভিয়েতনামের সাইগন ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম দখল করলে যুদ্ধ শেষ হয়।