ছোটবেলা থেকেই আমরা জলদস্যুদের নিয়ে নানান গল্প শুনেছি। অনেক সিনেমায় জলদস্যু দেখেছি। এই গল্প বা সিনেমায় জলদস্যুদের চরিত্রে দুটি বিষয় সব সময়ই দেখা যেত। প্রথমত, তারা সব সময় গুপ্তধনের সন্ধানে থাকে। দ্বিতীয়ত, তাদের এক চোখে কালো কাপড় বাঁধা থাকে। যেহেতু জলদস্যুরা যুদ্ধাভিযানের জন্য কুখ্যাত। তাই অনেকেই অনুমান করেন, আঘাত পেয়ে বা হারানো চোখ ঢেকে রাখার জন্য চোখে কালো কাপড় বাঁধত তারা; কিন্তু আসলেই কি তাই? জলদস্যুরা কেন এই অদ্ভুত সাজে সজ্জিত হতো? এর পেছনে কি কোনো কারণ ছিল, নাকি শুধু সাজসজ্জার জন্যই তারা এক চোখে কালো কাপড় বাঁধত?
সিনেমা আর গল্পের পাতায় জলদস্যুরা যেমন চিত্রিত হয়েছে, তেমনি আসলে তারা ছিল না। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, কালো কাপড় বাঁধার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সব থেকে প্রচলিত কারণটা হলো, অন্ধকারে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে একটি চোখ ঢেকে রাখত তারা। সমুদ্রে জলদস্যুদের জীবন ছিল অন্ধকার, বিপজ্জনক ও চ্যালেঞ্জিং। তাদের জাহাজের প্রতিটি অংশ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হতো।
আধুনিক আলোর ব্যবস্থার আগে জাহাজের ভেতরে আলোর প্রধান উৎস ছিল মোমবাতি বা তেলের বাতি। এই আলো খুবই ম্লান এবং সীমিত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। জাহাজের নিচের ডেকগুলোতে তো আরও কম আলো পৌঁছাত। কল্পনা করো, একটি জাহাজে কতগুলো মানুষ একসঙ্গে থাকত, আর আলোর ব্যবস্থা আবার এত খারাপ! অন্ধকারে জাহাজের ভেতরে এবং জাহাজ থেকে জাহাজে চলাফেরা করতে যাতে অসুবিধা না হয় এটি ছিল তার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অন্ধকারে প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করাও আরেক কারণ।
মূলত চোখ শরীরের খুবই জটিল এক অঙ্গ। যখন হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকারে যাওয়া হয়, তখন চোখ অন্ধকারে ভালোভাবে দেখার জন্য প্রায় ১০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নেয়। এটি চোখের ভেতরে থাকা একধরনের রঞ্জক পদার্থের কারণে হয়। এই রঞ্জককে বলে রডপসিন। চোখের রড কোষে এই রঞ্জক পাওয়া যায়। হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকারে গেলে অন্ধকারে চোখ মানিয়ে নিতে এই রঞ্জক সাহায্য করে। এই পদার্থ আলোর ওপর খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থাৎ জলদস্যুরা দিনের আলো ও অন্ধকার দুই পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার জন্য এক চোখ ঢাকার পদ্ধতি ব্যবহার করত। এতে অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যেত।
এ ছাড়া জাহাজের ডেকের কাজে জড়িত লোকেরাও এক চোখে কালো কাপড় বাঁধত। কারণ, জাহাজের অন্ধকার অংশে দ্রুত দেখার জন্য তাদের একটা চোখকে অন্ধকারে মানিয়ে নিতে হতো। অন্য এক মতে, সেই সময়ে জলদস্যুদের একধরনের ভয়ংকর চরিত্র হিসেবে মানুষ দেখত। এক চোখ ঢাকা রাখার মাধ্যমে তারা নিজেদের আরও ভয়ংকর ও রহস্যময় করে তুলতে চাইত। এটি তাদের শত্রুদের মনে ভয় সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। এটি তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলত। এভাবে লোকে তাকে মনে রাখত। তবে এই রহস্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এর পেছনে কোনো একটি নির্দিষ্ট সত্য নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণা জলদস্যুদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র: ক্লিয়ারআই ডটকম