আমাদের অনেকেরই শৈশবে চিকেন পক্স বা জলবসন্তের মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে চুলকানি, ফুসকুড়ি, সঙ্গে জ্বর—এসব উপসর্গ নিয়ে কয়েক দিন খুব ভোগান্তি যায়। কষ্টদায়ক অনুভূতির মধ্য দিয়ে এই সময়টা পার করতে হয়। জলবসন্ত হলে লোকে প্রায়ই বলে, জলবসন্ত একবার হলে আর কখনো হবে না, তাই একটু ধৈর্য ধরে কষ্ট সহ্য করো। কিন্তু এই ধারণাটা কি সত্যি?
জলবসন্ত হয় ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। একজনের সংস্পর্শে আরেকজনের হয়। তবে এই ভাইরাস অন্যান্য সাধারণ ভাইরাসের মতো নয়। কারণ, জলবসন্তের ভাইরাসের অনেক ধরন রয়েছে। এ কারণে জলবসন্তের টিকা তৈরি করা অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো সহজ নয়। একটি টিকা সব ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর না–ও হতে পারে। ফলে জলবসন্তের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নিখুঁত টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। যেখানে অন্যান্য সংক্রামক রোগ যেমন হামের জন্য নির্দিষ্ট টিকা রয়েছে। যা একবার প্রয়োগ করলে শরীরে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে আর আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না।
সাধারণত একবার জলবসন্ত হয়ে গেলে একই ব্যক্তি আবার এই রোগে আক্রান্ত হন না। কারণ, শরীর এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই পরে আবার জলবসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যদিও জলবসন্ত সাধারণত জীবনকালে একবার হয়, তবে খুব কম ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি দুবার এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব ছোট বয়সে জলবসন্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি না হওয়ায় দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ যদি প্রথমবার ভাইরাসের আক্রমণ খুব কম হয় তাহলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না। ফলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কখনো কখনো জলবসন্তের মতো লক্ষণ দেখা দিলেও তা অন্য কোনো ত্বকের রোগ হতে পারে। এমনটা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
শিশুদের জলবসন্ত থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, শিশুদের দুটি ডোজ জলবসন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ শিশুর ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বুস্টার প্রথম ডোজের ৪ থেকে ৬ বছর পর। তবু যেকোনো বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
জলবসন্তে সাধারণত হালকা জ্বর হয়। অবশ্য দু-এক দিনের মধ্যেই জ্বর সেরে যায়। ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এরপর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা ওঠে, যার ভেতরে তরল পদার্থ থাকে। এই ফোসকাগুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যায়। অর্থাৎ ৭-১০ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যান। ভ্যারিসেলা জিস্টার ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দেন, তখন এই ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য সুস্থ ব্যক্তি সেই বাতাস শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারেন।
এ ছাড়া ভ্যারিসেলা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে যে ফোসকা হয়, সেই ফোসকায় থাকা তরলের সংস্পর্শে এলেও এই ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। যখন এই ফোসকা ফেটে যায়, তখন ভাইরাসটি বের হয়ে আশপাশের বস্তুতে লেগে থাকতে পারে। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে, খেলনা বা অন্য কোনো বস্তুতে। এই বস্তুগুলোর সঙ্গে যখন কোনো সুস্থ ব্যক্তি সরাসরি স্পর্শ করেন, তাহলে তিনিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ রোগটি থেকে বাঁচতে হলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুদের জলবসন্ত থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, শিশুদের দুটি ডোজ জলবসন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ শিশুর ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বুস্টার প্রথম ডোজের ৪ থেকে ৬ বছর পর। তবু যেকোনো বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারেন।’
সূত্র: হপকিনস মেডিসিন, হেলথ লাইন, প্রথম আলো