চকলেট খেলে কি আসলেই দাঁতে পোকা হয়
চকলেট খেতে দেখলেই মুরব্বিরা বলেন, ‘উহু, চকলেট খেয়ো না, চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হবে।’ কিন্তু চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হবে কেন? কোত্থেকে আসবে এই পোকার? দাঁতের পোকা আসলে কী? আর কেনই বা এটা হয়? ডেন্টিস্ট বা দাঁতের ডাক্তার ভাষায় ক্যাভিটি হলো দাঁতের ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ। দাঁতে ক্যাভিটি হয় মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে। মূলত মুখের মধ্যে থাকে ব্যাকটেরিয়া। আমরা যখন খাবার খাই, তখন এর কিছু অংশ দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে। খাবারের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট ব্যাকটেরিয়ার পছন্দের খাবার। মিষ্টিজাতীয় খাবার বা স্টার্চযুক্ত খাবার হজম করতে মুখের মধ্যে অ্যাসিড তৈরি হয়, এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে।
অতিরিক্ত হোয়াইট চকলেট বা মিল্ক চকলেট দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হলেও চকলেটপ্রেমীদের জন্য কিছু ভালো খবরও আছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক, কাঁচা ও অপরিশোধিত কোকো বিনের চকলেটে থাকা পলিফেনল মুখে যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত খাবারের পর দাঁত না মাজলে এই অ্যাসিড দাঁতের বাইরের প্রতিরক্ষা স্তর এনামেলকে প্রথমে আক্রমণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া এনামেলকে দুর্বল করে ভেঙে ফেলে, যার ফলে দাঁতে গর্ত বা ক্যাভিটি তৈরি হয়। তখন দাঁতের মধ্যে কালো কালো গর্ত তৈরি হয়। এটাকেই অনেকে বলে দাঁতের পোকা। এই ব্যাকটেরিয়াকেই মুখের মধ্যে ছোট-বড় পোকা হিসেবে চিহ্নিত করে অনেকেই। এটা আসলে ঠিক নয়। দাঁতে কোনো পোকা থাকে না।
ওয়াশিংটনের সেন্ট্রাল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েটস ডেন্টিস্ট নরউড-এর তথ্য অনুসারে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মুখের ভেতরে কতগুলো ব্যাকটেরিয়া থাকে, তা সঠিকভাবে বলা প্রায় অসম্ভব। তবে অনুমান করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ২০ বিলিয়ন বা ২০০ কোটির মতো। এখানে প্রায় ৫০০ থেকে ৬৫০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে।
এখন জানা যাক, চকলেট খাওয়ার ফলাফল নিয়ে। সারা বিশ্বেই চকলেট তুমুল জনপ্রিয়। এটি এমন একটি খাবার, যা খেলে মন ভালো হয়ে যায়। গবেষণায়ও দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে চকলেট খেলে মেজাজ ভালো থাকে। ভালো লাগার অনুভূতি বেড়ে যায়। তবে, খেতে ভালো লাগলেও চকলেট দাঁতের জন্য খুব একটা ভালো নয়। নিয়মিত অল্প পরিমাণে চকলেট (বিশেষ করে ডার্ক চকলেট) খেলে স্বাস্থ্যের কিছু উপকারিতা থাকলেও, অন্যান্য চিনিযুক্ত খাবারের মতো চকলেটও দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। মিল্কচকলেট খেলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ এতে ডার্ক চকলেটের তুলনায় চিনির পরিমাণ অনেক বেশি।
তা তো আগেই জেনেছি, চিনি বা চকলেট সরাসরি দাঁতের ক্ষতি করে না। দাঁতের ক্ষয় মুখের অ্যাসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কার্বোহাইড্রেট খেয়ে বেঁচে থাকে, সেটা মিষ্টি হোক বা ভাত, রুটির মতো স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসা স্টার্চ থেকেও আসতে পারে। তাই খেয়াল রাখা উচিত, যেন চকলেট দাঁতের ফাঁকে জমে না থাকে। ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়লে বাড়বে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকিও। তবে, চকলেট খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করলে এই ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। শিশুদের অপছন্দের কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো দাঁত ব্রাশ করা। দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে, নতুন দাঁত ওঠার আগে পর্যন্ত ক্যাভিটি হলে সেটি পুরনো দাঁতের সঙ্গে চলে যায়, তাই চকলেট খাওয়ায় কিছুটা ছাড় দেওয়া যায়।
অতিরিক্ত হোয়াইট চকলেট বা মিল্ক চকলেট দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হলেও চকলেটপ্রেমীদের জন্য কিছু ভালো খবরও আছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক, কাঁচা ও অপরিশোধিত কোকো বিনের চকলেটে থাকা পলিফেনল মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। পলিফেনল (Polyphenols) কিছু শর্করাকে অ্যাসিডে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করে। সুরক্ষা দেয় দাঁতের এনামেলকে। এছাড়াও, ডার্ক চকলেটের ফ্ল্যাভোনয়েড (flavenoids) দাঁতের ক্ষয় কমাতে সাহাস্য করে। ডার্ক চকলেটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এগুলো মাড়ির রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতেও সাহায্য করে। তাই চকলেট খাওয়া মানেই ক্যাভিটির সম্ভাবনা নয়। তবে দাঁতে পোকা হলে কিআ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
সূত্র: অ্যাডভান্সড সলিউশনস ফ্যামিলি ডেন্টাল, লাইভ সায়েন্স, মায়ার্স স্ট্রিট ডেন্টাল ক্লিনিক