মহাবিশ্বের শীতলতম স্থান কোনটি
অ্যান্টার্কটিকার নাম শুনেছ! চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ। যতদূর চোখ যায় বরফের সাদা পাহাড়। তোমাদের মনে হতে পারে, যেখানকার সবকিছু বরফে ঢাকা, সেই জায়গা নিশ্চয়ই পৃথিবীর শীতলতম স্থান। তবে এই ভাবনাটা সঠিক নয়। কেন সঠিক নয়, সে কথায় একটু পরে আসছি। এর আগে জেনে নিই, সবচেয়ে শীতল স্থান মানে কি।
শীতল স্থান মানে যে ঠান্ডা জায়গা, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটা জায়গা কতটা ঠান্ডা হতে পারে? বিষয়টা বুঝতে হলে শুরুতে অ্যাবসুলেট জিরো বা পরম বিন্দু সম্পর্কে একটু বুঝে নেওয়া দরকার।
২০০৯ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার লুনার রিকনাইসেন্স অরবিটার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটা গর্ত খুঁজে পেয়েছিল। এই গর্তের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গর্ত পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতেন, ইউরেনাসের তাপমাত্রা সবচেয়ে কম।
পরম শূন্য মানে মহাবিশ্বের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। পরম শূন্যের কম আর কোনো তাপমাত্রা হতে পারবে না। আলোর গতি তো জানো। সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলে গেছেন, কোনো বস্তু এই গতির চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারবে না। আসলে চলা সম্ভব নয়। পরম বিন্দুও এমন একটা ব্যাপার। কোনো কিছু বা জায়গার তাপমাত্রা মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০ কেলভিনের কম হতে পারবে না। কারণ, এই তাপমাত্রায় বস্তুর অণু-পরমাণুর গতি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একেই বলে পরমশূন্য তাপমাত্রা।
এখন, কোনো জায়গার তাপমাত্রা যত মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিকে যাবে, সেই বস্তুর তাপমাত্রা তত কমবে। যদি কোনো জায়গার তাপমাত্রা মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার আশপাশে হয়, তাহলে সেই জায়গা হবে সবচেয়ে শীতল।
পৃথিবীর শীতলতম স্থান
শুরুতেই পৃথিবী দিয়েই শুরু করা যাক। আগেই বলেছি, অ্যান্টার্কটিকা বা উত্তর মেরু পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল জায়গা নয়। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে রেকর্ড করা শীতলতম জায়গা হলো ইতালির একটা ল্যাব। সেখানকার বিজ্ঞানীরা ক্রায়োস্ট্যাট নামে একটা ডিভাইস তৈরি করেছিল, যা ঠান্ডা তাপমাত্রা তৈরি করতে পারে। গ্রিক শব্দ ক্রায়ো মানে ঠান্ডা, আর স্ট্যাট মানে স্থিতি। তরল হিলিয়াম বা তরল নাইট্টোজেন ব্যবহার করে নিম্ন তাপমাত্রা তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। তরল হিলিয়াম ব্যবহার করে মাইনাস ২৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামানো যায় তাপমাত্রা। আর তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে তাপমাত্রা নামানো সম্ভব মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রিতে।
তবে হ্যাঁ, প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর শীতল জায়গার কথা বললে অ্যান্টার্কটিকার নাম বলতে পারো। ২০১০ সালে অ্যান্টার্কটিকার ডোম ফুজিতে মাইনাস ১৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
সৌরজগতের শীতলতম স্থান
২০০৯ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার লুনার রিকনাইসেন্স অরবিটার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটা গর্ত খুঁজে পেয়েছিল। এই গর্তের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গর্ত পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতেন, ইউরেনাসের তাপমাত্রা সবচেয়ে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেল, এই গর্তের তাপমাত্রা তারচেয়েও কম। এরকম বেশ কয়েকটি গর্ত পাওয়া গিয়েছিল চাঁদে। ইউরেনাসের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ২২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রায়। তাই চাঁদই সৌরজগতের সবচেয়ে শীতল স্থান।
মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতল স্থান
পৃথিবী থেকে প্রায় ৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বুমেরাং নীহারিকা। এই নীহারিকা হলো মহাকাশে থাকা বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ। এখান থেকেই তৈরি হয় সূর্যের মতো নক্ষত্র। আর আলোকবর্ষ মানে আলো এক বছরে যতটা পথ অতিক্রম করতে পারে, তাই। সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার গেলে, মিনিটে কত…দিনে কত…মাসে কত…বছরে কত দূর যেতে পারে, হিসাব করে বের করতে পারো। মোদ্দাকথা, আলো ৫ হাজার বছরে যে দূরত্ব পাড়ি দিতে পারবে, বুমেরাং নীহারিকার অবস্থান সেখানে। এই নীহারিকার তাপমাত্রা মাইনাস ২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ পরম শূন্য তাপমাত্রার মাত্র এক ডিগ্রি বেশি। তবে সেখানকার তাপমাত্রা কেন এত কম, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরাও তেমন কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। অনেক বিজ্ঞানীর কিছু ধারণা বা হাইপোথিসিস রয়েছে। তবে সে ব্যাপারে আজ আর বলব না। অন্য কোনোদিন আবার বুমেরাং নীহারিকা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, স্পেস ডট কম ও পপুলার মেকানিকস ডট কম