সুখী হতে সবচেয়ে বেশি কী লাগে? কোটি টাকার প্রশ্ন। অনেকে ভাবতে পারো, টাকা হলেই সুখী হওয়া যায়। কিন্তু শুনে থাকবে নিশ্চয়ই, ‘টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না’। সুখী হওয়ার জন্য টাকা দরকার, কিন্তু শুধু টাকা কাউকে সুখী করতে পারে না। এ জন্য আরও অনেক কিছু দরকার। সেদিকে আজ যাব না। বরং বিশ্বের সবচেয়ে সুখী তিনটি দেশ সম্পর্কে জানব। কীভাবে সুখী দেশ বাছাই করা হয়?
প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ নির্ধারণ করে। এটা পরিচালনা করে জাতিসংঘ। এই প্রতিবেদন তৈরি করতে তারা কিছু বিষয়ের ওপর নজর দেয়। যেমন দেশের জিডিপি হার, মানে একটা দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত। ওই দেশের মানুষ পরস্পরকে কতটা সাহায্য করে, দেশের মানুষের গড় আয়ু কত, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান কেমন—এসব দেখে বিবেচনা করা হয় সুখী দেশ। পাশাপাশি দেশের দুর্নীতির মাত্রা কত, তা-ও রাখা হয় বিবেচনায়। সে বিচারে ২০২৪ সালের সেরা ১০টি সুখী দেশের ব্যাপারে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
টানা সাতবার বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তকমা পেল ফিনল্যান্ড। দেশটির জরিপ স্কোর ৭ দশমিক ৭৪১। সান্তা ক্লজ কিংবা বল্গা হরিণের আবাসস্থল হিসেবেও ফিনল্যান্ড পরিচিত। দেশটির প্রায় ৭৪ শতাংশ জায়গা বনভূমি। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ডে প্রতি বর্গকিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি বন রয়েছে। দেশটির মানুষ প্রকৃতি খুব ভালোবাসে।
বিশ্বের দ্বিতীয় সুখী দেশ ডেনমার্ক। স্কোর ৭ দশমিক ৫৮৩। টানা পঞ্চমবার বিশ্বের দ্বিতীয় সুখী দেশ হলো দেশটি। ডেনমার্ক ন্যাটো, জাতিসংঘ ও নর্ডিক কাউন্সিলের মতো বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ডেনমার্কেও মানুষ উচ্চমানের জীবনযাপন করে। ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান এই দেশেই সবচেয়ে কম।
জনসংখ্যার দিক থেকে এই তালিকার ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ড। এখানে মাত্র ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বাস করে। লিঙ্গসমতা বিবেচনায় বিশ্বের সেরা দেশ আইসল্যান্ড। এই তালিকায় টানা ১০ বছর শীর্ষ দশে রয়েছে দেশটি। বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। শিক্ষাও সম্পূর্ণ অবৈতনিক। দেশের প্রায় সব মানুষই বই পড়তে ভালোবাসে। আইসল্যান্ডের স্কোর ৭ দশমিক ৫২৫।
হ্রদের জন্য বিখ্যাত সুইডেন। দেশটিতে প্রায় ১ লাখ হ্রদ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। সুইডেনের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা গাছ ও বন দিয়ে ঢাকা। ৭ দশমিক ৩৯৫ স্কোর নিয়ে সুইডেন রয়েছে ৪ নম্বরে। দেশটিতে মানুষের বেতন খুব ভালো, সঙ্গে অন্যান্য দেশের তুলনায় ছুটিও বেশি। কোনো দম্পতির সন্তান হলে মা–বাবা প্রায় ৪৮০ দিন সবেতন ছুটি কাটাতে পারে। এ সময় বেতনের ৮০ শতাংশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায় বিনা মূল্যে।
এই তালিকার সবচেয়ে অবাক করা নাম হয়তো ইসরায়েল। সারা বছর গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে দেশটি। কিন্তু সুখী দেশের তালিয়ার ঠিকই রয়েছে পাঁচ নম্বরে। দেশটি কূটনৈতিকভাবে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হলেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ধনী ও শক্তিশালী। মূলত এ কারণেই ইসরায়েল রয়েছে সুখী দেশের তালিকায়। ইসরায়েলের স্কোর ৭ দশমিক ৩৪৪।
নেদারল্যান্ডসের স্কোর ৭ দশমিক ৩১৯। দেশটি উইন্ডমিলের জন্য বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত—উভয়ই নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত। এ দেশের মানুষের জীবনযানযাত্রার মান নিয়ে নেই কোনো অভিযোগ।
নরওয়ে একসময় বিশ্বের সুখী দেশ ছিল। দেশটির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বমানের। নরওয়েতে সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থা সমান। অর্থনৈতিকভাবেও দেশটি সমৃদ্ধ। দুর্নীতি নেই বললেই চলে। নরওয়ের স্কোর ৭ দশমিক ৩০২।
লুক্সেমবার্গেরও আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। ২০২২ সালে দেশটি ৬ নম্বরে ছিল। এবার ৭ দশমিক ১২২ স্কোর করে রয়েছে ৮ নম্বরে। এটি জার্মান, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী দেশ। ছোট্ট এই দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৬ লাখ ৫৫ হাজার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ছোট দেশের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে। এর আয়তন মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার। তবে দেশের মানুষ ঠিকই সুখে রয়েছে। এই দেশে বাসে চড়তে কোনো টাকা লাগে না। বিস্তারিত জানতে পড়ুন: যে দেশে বাসে চড়তে টাকা লাগে না।
সুইজারল্যান্ডের নম্বর ৭ দশমিক শূন্য ৬০। দেশটি ধীরে ধীরে সুখী দেশের তালিকার নিচের দিকে নামছে। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ছিল সুইজারল্যান্ড। ২০২২ সালেও ছিল ৪ নম্বরে। এবার নেমেছে ৯ নম্বরে। তবে এখনো দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও উন্নত। দুর্নীতি কম এবং মানুষ আইনশৃঙ্খলা মেনে চলে।
১০ নম্বরের মধ্যে ৭ দশমিক শূন্য ৫৭ পেয়ে বিশ্বের ১০ নম্বর সুখী দেশ অস্ট্রেলিয়া। ২০২৩ সালে এই অবস্থানে ছিল নিউজিল্যান্ড। এবার দেশটি এক ধাপ পিছিয়ে ১১তম স্থানে রয়েছে। শীর্ষ দশে ইউরোপের বাইরে একমাত্র সুখী দেশ অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে নাগরিকদের কর্মসংস্থান ও বেতন আগের তুলনায় বেড়েছে।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস