বর্ণিল স্কুলজীবন ছিল আইনস্টাইনের। কখনো তিনি ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র, আবার কখনো খারাপ। তবে ভালো-খারাপের বিষয়টা নির্ভর করছে বিষয়ের ওপর। কোন বিষয়ের ক্লাস হচ্ছে, সেটির ওপর নির্ভর করত তাঁর মনোযোগ। গণিত বা বিজ্ঞান ক্লাস হলে আইনস্টাইনের চেয়ে ভালো ছাত্র খুঁজে পাওয়া যেত না; কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো ক্লাস হলে আইনস্টাইনের মনোযোগে ঘাটতি দেখা যেত। দুষ্টুমি মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। শিক্ষকদের একেবারে পাগল করে ছাড়তেন। আইনস্টাইনের সেই শৈশবের গল্পগুলোই আজ তোমাদের বলব। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন। মানুষ বিখ্যাত হলে তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত হয়। তাঁর সবটা সত্যি হয় না। আইনস্টাইনের বেলায় তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল; কিন্তু কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা এখন যাচাই করা বেশ কঠিন।
১৮৮৫ সালে আইনস্টাইনের প্রথম স্কুলে যাওয়া শুরু। বয়স তখন ছয় বছর। জার্মানির মিউনিখ শহরে এই বয়সী সব শিশুর স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। আইনস্টাইনও স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন। ভর্তি হলেন পিটারশুল নামে একটি ক্যাথলিক স্কুলে। বাসা থেকে স্কুলটি কাছেই।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই আইনস্টাইন বাসায় মা ও চাচার কাছে কিছুটা পড়ালেখা শিখেছিলেন। তাই তাঁকে শুরুতেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানো হলো; কিন্তু আইনস্টাইনের তা পছন্দ হলো না। তিনি গিয়ে বসলেন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সেখান ৭০ জন শিক্ষার্থী। আইনস্টাইন তাঁদের মধ্যে একমাত্র ইহুদি।
আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের মিলত না। এর দুটি কারণ ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প না করে সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে ভাবতেন তিনি; কিন্তু তাঁর চেয়ে বড় অপরাধ তিনি ইহুদি। জার্মানিতে তখন চলছিল প্রবল ইহুদিবিদ্বেষ। সহপাঠীরা তাঁকে একঘরে করে রাখত। কেউ তাঁকে খেলতে নিত না। প্রায়ই ধমক দিত। তাই ক্লাসে তিনি একা একা চুপ করে থাকতেন।
তবে এসব জেনেও আইনস্টাইনের মা–বাবা তাঁর স্কুল পরিবর্তন করেননি। কারণ, ওই স্কুলের পড়াশোনার মান ভালো। ছেলের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন মা পলিন ও বাবা হারম্যান। আইনস্টাইনও ভালো ফল করেছিলেন; কিন্তু শুধু তাঁর পছন্দের সাবজেক্টে। মানে বিজ্ঞান ও গণিতে। বাকিগুলো পড়ার তেমন চেষ্টাও করতেন না। এর পেছনেও একটি কারণ ছিল।
আগেই বলেছি, আইনস্টাইন তাঁর চাচা জ্যাকবের কাছে বাড়িতে কিছু পড়ালেখা শিখেছেন। জ্যাকব তাঁকে যেভাবে পড়ালেখা শেখাতেন, স্কুল তেমন শেখাত না। স্কুলের পড়ার ধরন তাঁর ভালো লাগেনি। আসলে জ্যাকব কোনো অঙ্ক কষতে দিয়ে আইনস্টাইনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন। হয়তো বলতেন, ‘এটা সমাধান করা তোমার কাজ নয়’ কিংবা ‘এটা তুমি করতে পারবে না।’ আর এই চ্যালেঞ্জই আইনস্টাইন গ্রহণ করতেন এবং সমাধান না করা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। তারপর সফল হলে খুশিতে লাফিয়ে উঠতেন; কিন্তু স্কুলে এমন কোনো ব্যাপার ছিল না। তাই স্কুল ছিল আইনস্টাইন অপছন্দ।
দেখতে দেখতে বাড়ির পাশের স্কুলে তিন বছর শেষ। এবার হাইস্কুলে যাওয়ার পালা। ১৮৮৮ সালে মিউনিখের আরেকটি স্কুলে ভর্তি হন আইনস্টাইন। নাম লুইটপোল্ড জিমনেসিয়াম। বডি বিল্ডিং করার স্কুল নয় এটি। নামটাই শুধু এমন। আমাদের দেশের সাধারণ মাধ্যমিক স্কুলের মতো একটি স্কুল। শুরুতে স্কুলটি ভালোই লেগেছিল আইনস্টাইনের; কিন্তু অল্প দিনেই হতাশ হয়ে পড়লেন। চাচার কাছে যেভাবে বীজগণিত শেখেন, এখানে তেমন নয়। সবকিছু মুখস্থ করে শিক্ষার্থীরা। ভালো লাগে না তাঁর। তা ছাড়া বিজ্ঞান বা গণিতের মতো বিষয় এখানে সাধারণ সাবজেক্ট। মূল সাবজেক্ট লাতিন ও গ্রিক। এর কোনোটায় আইনস্টাইনের বিশেষ আকর্ষণ নেই। তবুও পাস করতে হলে পড়তে হবে। পড়তেন তেমনি গা ছাড়াভাবে।
এসব স্কুলে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক। আইনস্টাইন যেহেতু ইহুদি, তাই তিনি নিজ ধর্ম বিষয়ে পড়ালেখা করেন। পাশাপাশি বাইবেলও পড়তে শুরু করেছিলেন। একসময় ইহুদি ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ দেখা যায় আইনস্টাইনের মধ্যে। তিনি ধর্ম পালন করতে শুরু করেন। পাশাপাশি বোন মায়াকে কঠোরভাবে ধর্মপালনে অভ্যস্ত করে তোলেন।
আইনস্টাইনের মা–বাবা কঠোরভাবে ধর্ম পালন না করলেও তাঁকে বাধা দিতেন না। এমনকি সপ্তাহে এক দিন একজন ইহুদি ছাত্র এসে তাঁদের বাড়িতে খেতেন। তেমন একজনের নাম ম্যাক্স ট্যালমুড। বয়স ২১ বছর। মেডিকেলের ছাত্র। তাঁর সঙ্গে আইনস্টাইনের বেশ খাতির। কারণ, ট্যালমুড তাঁকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে জানান।
ট্যালমুডের সাহায্যে আইনস্টাইন গণিতে এতটা দক্ষ হয়ে ওঠেন যে সহপাঠীদের চেয়ে তিনি এগিয়ে তো ছিলেনই, কিছু কিছু বিষয়ে শিক্ষকদের চেয়েও ভালো বুঝতেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইনস্টাইন ক্যালকুলাস শিখেছিলেন। ক্যালকুলাস হলো গণিতের এমন একটি শাখা। অনেকে বড় হয়ে ক্যালকুলাস শেখে। আমাদের দেশে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ক্যালকুলাসের ধারণা দেওয়া শুরু হয়। আইনস্টাইন তা কৈশোরেই শিখে ফেলেন।
১৮৯০ সাল। গ্রীষ্মকাল। স্কুল ছুটি। আইনস্টাইনের হাতে একটি জ্যামিতির বই আসে। জ্যামিতির সমস্যা নিয়ে তিনি ভাবতে থাকেন। কয়েকটার সমাধান করেন নিজেই। আবার শৈশবের সেই চ্যালেঞ্জ অনুভব করতে শুরু করেন। যেন চাচা জ্যাকব তাঁকে একেকটা জ্যামিতিক চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। সেগুলো সমাধান করে নিজেই যেন নিজের পিঠ চাপড়ে দেন। বইটা তাঁর কাছে এত ভালো লাগে যে নাম দেন ‘হোলি জিওম্যাট্রিক বুক’, মানে ‘পবিত্র জ্যামিতি বই’।
ম্যাক্স ট্যালমুড একের পর এক গণিত ও বিজ্ঞানের বই এনে দেন আর তা গ্রোগাসে গিলতে থাকেন আইনস্টাইন। একই সঙ্গে চলে মা পলিনের গানের ক্লাস। মা তাঁকে গান শেখান। আগেই বলেছি, আইনস্টাইনের মা শৈশব থেকে গান পছন্দ করতেন। তিনি নিজে দারুণ পিয়ানো বাজাতেন। বোন মায়াকেও পিয়ানো বাজানো শেখাচ্ছেন তাঁর মা; কিন্তু আইনস্টাইন পিয়ানো পছন্দ করলেন না। তাঁর পছন্দ বেহালা। সেটিই একটু আধটু করে শিখছেন।
ইতিমধ্যে বিজ্ঞান ও গণিতের যথেষ্ট বই পড়েছেন আইনস্টাইন। এবার ট্যালমুড তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন দার্শনিক কান্টের দর্শনের সঙ্গে। কান্টের দর্শন পড়ে মুগ্ধ আইনস্টাইন। বিজ্ঞানের সঙ্গে দর্শনের একটা সম্পর্ক খুঁজে পেলেন। মুগ্ধতা এতটা ছড়াল যে সিদ্ধান্ত নিলেন, বড় হয়ে আইনস্টাইন দর্শনের শিক্ষক হবেন।
আইনস্টাইনকে রেখে পরিবারের ইতালি চলে যাওয়ার ঘটনা প্রথম পর্বে বলেছি। অনেকটা দেউলিয়া হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল আইনস্টাইন পরিবার; কিন্তু ভালো পড়ালেখার আশায় আইনস্টাইনকে রেখে গেছেন জার্মানিতে। কষ্টে যেন তাঁর বুক ফেটে যায়; কিন্তু বলবেন কাকে? ট্যালমুডও এখন আসেন না। আইনস্টাইন একা একা থাকেন। মা আর বোনকে শত্রু ভাবতে শুরু করেছেন। ভাবছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আইনস্টাইনকে রেখে ইতালিতে বেশ সুখে আছেন। এসব চিন্তা করে করে আইনস্টাইন পড়ালেখায় মন দিতে পারছিলেন না। তখনো প্রায় তিন বছর পড়ালেখা বাকি। কীভাবে মা ও বোনকে ছাড়া এত দিন থাকবেন জার্মানিতে? তা ছাড়া তিন বছরের পড়ালেখা শেষ করেই আবার সৈন্য হিসেবে দেশকে সেবা দিতে হবে আরও তিন বছর। মোট ছয় বছরের ধাক্কা; কিন্তু আইনস্টাইন যদি স্কুল ছেড়ে চলে যান? তাহলে আর সৈন্য হতে হবে না। সঙ্গে থাকতে পারবেন মা–বাবা আর বোনের সঙ্গে ইতালিতে; কিন্তু পড়ালেখা শেষ না করে যাবেন কীভাবে?
পরিবার ইতালিতে চলে যাওয়ার অল্প দিনের মধ্যে আইনস্টাইন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে বেশি মানসিক। সম্ভবত মা–বাবার শোকে এমনটা হয়েছে। আইনস্টাইন ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার ম্যাক্স ট্যালমুডের বড় ভাই। আইনস্টাইনের পরিচয় পেয়ে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করলেন ডাক্তার। তা ছাড়া তিনিও জানতেন, জার্মানিতে আইনস্টাইন মা–বাবা ছাড়া একা রয়েছেন। তাই প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি প্রশ্রয় দিলেন। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলেন আইনস্টাইন। বিদ্যুৎবেগে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। স্কুল ছেড়ে এমনকি জার্মানি ছেড়ে চিরতরে ইতালি যাওয়ার বুদ্ধি।
ডাক্তারকে এমন একখানা প্রেসক্রিপশন লিখে দিতে বললেন, যাতে মাসখানেকের ছুটি পাওয়া যায়। ডাক্তার ভাবলেন, পরিবার ছেড়ে জার্মানিতে থাকার কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে আইনস্টাইন। সুস্থ হতে হলে বিশ্রাম দরকার। তাই আইনস্টাইনের কথামতো প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। গণিত শিক্ষকের সঙ্গেও ছিল আইনস্টাইনের সখ্য। আইনস্টাইনই যে গণিত ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র! গণিতের কিছু বিষয়ে আইনস্টাইন শিক্ষকের চেয়ে ভালো বোঝেন। শিক্ষককে গিয়ে আইনস্টাইন বললেন, ‘এই স্কুলে আমার আর গণিতে কিছু শেখার নেই। অন্য কোনো স্কুলে যেতে চাই আমি।’ শিক্ষক তাঁর সঙ্গে একমত প্রকাশ করলেন। আইনস্টাইন তখন বললেন, কথাটা লিখিতভাবে দিতে। শিক্ষক তা–ই দিলেন। ব্যস, আইনস্টাইনকে আর পায় কে। মনে মনে ভাবছেন, আগামীকালই স্কুল ছেড়ে চলে যাবেন। ডাক্তারের বিশ্রামের কথা আর সঙ্গে গণিত শিক্ষকের প্রশংসা দেখলে প্রিন্সিপাল নিশ্চয়ই না করবেন না।
গ্রিক ভাষার শিক্ষককে পছন্দ করতেন না আইনস্টাইন। কারণ, ওই বিষয়টিই তাঁর পছন্দ না। ফলে শেষ ক্লাস ভেবে শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন আইনস্টাইন। ভাবটা এমন, যেন মনে মনে ভাবছেন, ‘কাল তো চলেই যাচ্ছি। আর কীভাবে শেখাবেন আমাকে গ্রিক ভাষা!’ বিষয়টি শিক্ষকের চোখ এড়াল না। ক্লাসের শেষে আইনস্টাইনকে ডেকে বকাঝকা করলেন শিক্ষক। আর বলে দিলেন, ‘তুমি এই স্কুল থেকে চলে যাও। তোমার মতো স্টুপিডকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ আইনস্টাইনের মন খারাপ হলেও বিষয়টি তিনি অন্যভাবে দেখলেন। নিজে স্কুল ছেড়ে চলে যেতে চান, এটা না বলে প্রিন্সিপালকে বললেন, ‘গ্রিক ভাষার শিক্ষক আমাকে স্কুল ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। সঙ্গে দেখালেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও গণিত শিক্ষকের প্রশংসাপত্র। সব দেখে প্রিন্সিপাল তাঁকে ট্রান্সফার লেটার দিলেন।
আইনস্টাইন ইতালি এলেন। তাঁকে দেখে মা–বাবা খুশি না হয়ে বরং রেগে গেলেন; কিন্তু খুশি হলেন বোন মায়া। বেশ ভালোই দিন কাটতে লাগল দুই ভাই-বোনের; কিন্তু আইনস্টাইনকে তো পরের ক্লাসে ভর্তি হতে হবে। তিনি পলিটেকনিকে পড়তে চান। মানে বাংলাদেশের হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় আরকি; কিন্তু তিনি তখনো মাধ্যমিক পাস করেননি।
এ ব্যাপারে অবশ্য তাঁর মা সাহায্য করলেন। পলিনের পরিচিত মানুষ ও কিছুটা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনস্টাইনকে সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা করলেন। এটি জুরিখ পলিটেকনিক নামেও পরিচিত। ইউরোপের সেরা পলিটেকনিক স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইনস্টাইনের মায়ের চেষ্টা পলিটেকনিক স্কুলে খুব একটা কাজে এল না। তবে একেবারে যে লাগেনি তা বললে ভুল হবে। সাধারণত পলিটেকনিকে ভর্তি হতে হলে ১৮ বছর বয়স হতে হয়। আইনস্টাইনের বয়স তখন মাত্র ১৬। মায়ের ওই ক্ষমতা বলে স্কুল থেকে জানানো হলো, আইনস্টাইন পাস করলে তাঁকে দুই বছর আগেই ভর্তি নেওয়া হবে।
এখানে জানিয়ে রাখি, জার্মানিতে আইনস্টাইন যতটা পড়ালেখা করেছেন তা আমাদের দেশের প্রায় দশম শ্রেণির সমান। এখনো তাঁর কলেজ পড়া বাকি; কিন্তু আইনস্টাইন কলেজে না পড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছেন। বাংলাদেশের হিসেবে বললে ভালো বুঝবে। ধরো, তুমি দশম শ্রেণিতে পড়ো; কিন্তু কোনো কারণে দশম শ্রেণি পাস না করে অন্য শহর বা দেশে চলে গেলে। সেখানে গিয়ে তো তোমাকে আগে দশম শ্রেণি পাস করে কলেজ পাস করতে হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে; কিন্তু আইনস্টাইন তা না করে তিন ক্লাস বাদ দিয়ে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিলেন।
গণিত ও বিজ্ঞানে আইনস্টাইন এত ভালো করলেন যে শিক্ষকেরা পর্যন্ত অবাক হলেন। পদার্থবিজ্ঞানে তিনি যত স্কোর করেছেন, তা আগে কেউ করতে পারেনি; কিন্তু তবুও আইনস্টাইন ফেল করলেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আর শুধু বিজ্ঞান আর গণিত থাকে না। আরও কিছু বিষয় থাকে। আইনস্টাইন সেগুলোতে পাস করতে পারলেন না। ফলে পলিটেকনিক থেকে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হলো কলেজে পড়তে।
আইনস্টাইন তা–ই করলেন। পলিটেকনিকের পাশে আরাউ কলেজে ভর্তি হলেন। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার তাঁকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হলো। এখানেও দুই বছর প্রমোশন নিলেন আইনস্টাইন। এক বছর পর আবার পলিটেকনিকে পরীক্ষা দিতে পারবেন তিনি। এবার শুধু পাস করলেই হলো।
আরাউ স্কুলের ভাষাতত্ত্বের শিক্ষক ছিলেন ইয়োস্ট উইন্টটেলার। তিনি আইনস্টাইনের মায়ের পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাড়িতেই আইনস্টাইনের থাকার ব্যবস্থা হলো। এখানে এক বছর পড়াশোনা করে নিজ বাড়িতে ফিরে এলেন। ১৮৯৬ সালে আবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সব বিষয়ে পাস করে ভর্তি হলেন জুরিখ পলিটেকনিকে। তখনো আইনস্টাইনের বয়স ১৭; কিন্তু গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে অত্যন্ত ভালো করায় তাঁকে বয়সের বাধা থেকে মুক্তি দেওয়া হলো।
হয়তো তোমরা কখনো শুনেছ যে আইনস্টাইনও পরীক্ষায় ফেল করতেন! ভালো ছাত্র ছিলেন না…অনেক কিছু। আসলে যারা আইনস্টাইনের ফেলের কথা বলেন, তাঁরা মূলত এই পরীক্ষার কথা বলতে চান; কিন্তু তুমিই চিন্তা করে দেখো, স্কুলে পড়া অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে পাস করা সম্ভব? আইনস্টাইন কিন্তু তা–ও গণিত ও বিজ্ঞানে দুর্দান্ত ভালো ফল করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানে পেয়েছিলেন সবার চেয়ে বেশি নম্বর। এখন নিজেই বুঝে নাও, ছাত্র হিসেবে আইনস্টাইন কেমন ছিলেন—ভালো নাকি মন্দ!
আজ এখানেই শেষ করি আমাদের গল্প। পরের পর্বে আইনস্টাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন নিয়ে আলোচনা করব।
সূত্র : ডি কে প্রকাশনীর লাইফ স্টোরিস সিরিজের ‘আলবার্ট আইনস্টাইন’ বই ও প্রদীপ দেবের আইনস্টাইনের কাল বই অবলম্বনে