সদ্য জন্মানো সাপ

এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।

এখন মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে শস্যাগারটি আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে না। কারণ, শিশু ড্রাগনটাকে নিরাপদ জায়গায় রেখেছি। ওকে এখন সাহায্য করা দরকার আমার। ওর ছোট্ট শরীরটা একটা ছোট্ট পিণ্ডের মতো পড়ে আছে। বেচারা!

ওর পাশে কয়েকবার বসলাম আমি। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো ঠান্ডা লেগেছে। কিন্তু পরে আর ড্রাগনটা কাশি দেয়নি। তারপর উপায় খুঁজে না পেয়ে মায়ের সায়েন্স জার্নালটা নিয়ে বসলাম। ড্রাগনের ব্যাপারে জার্নালে কিছু লেখা ছিল না। হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। জার্নালটা টেবিলে রাখলাম। সঙ্গে সঙ্গে জার্নালের খোঁচায় আমার গগলসটা মাটিতে পড়ে গেল। চট করে ওটা উঠিয়ে ধুলা ঝেড়ে মাথায় পরে নিলাম।

মাথায় গগলস পরে চিন্তা করছে জোয়ি

আমি অনুভব করতে পারছিলাম, একটা বুদ্ধি আমার মস্তিষ্কে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। গতবার গ্রীষ্মে কী ঘটেছিল? জঙ্গলের কি কিছু হয়েছিল? আচ্ছা, মনে পড়েছে!

আরও পড়ুন

গত গ্রীষ্মে মা আর আমি হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ সাসাফ্রাস কয়েকটা পাথরের স্তুপের কাছে থেমে গেল। ও আবার কোনো ভ্রমণ মিস করে না। যা-ই হোক, ওকে থামতে দেখে মা এগিয়ে গেলেন। হাঁটু গেড়ে বসলেন মাটিতে। তারপর মুগ্ধ হয়ে কিছু একটা দেখতে লাগলেন।

‘জোয়ি! সেই ডিম থেকে উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট মাথাটা? সাপের ডিম ফুটছে। দেখা যাক!’

ডিম ফুটে একটা বাচ্চা সাপ বেরিয়েছে

‘জোয়ি! দেখো, ডিম ফুটে একটা ছোট্ট বাচ্চা সাপের মাথা বেরিয়েছে! সাপের ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বের হবে। অপেক্ষা করে দেখা যাক!’

ডিমের ভেতর ছোট্ট সাপগুলো যেন মাথা দিয়ে ওপরের দিকে ঠেলছে। যতক্ষণ না ডিম ফেটে ওরা বেরিয়ে আসছে, ততক্ষণ ঠেলতে লাগল। তারপর একসময় বুম করে ডিমটা ফেটে বেরিয়ে এল বাচ্চা সাপ। ডিম থেকে বেরিয়েই জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছিল সাপগুলো।

আরও পড়ুন

শুধু একটা ডিম ফুটে বাচ্চা বের হচ্ছে না। আমরা ডিমটার দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর অনেক চেষ্টায় ডিমের ভেতরের সাপটা বেরিয়ে এল। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে বেচারাকে। বের হয়ে অন্যগুলোর মতো জঙ্গলে ঢুকে গেল না। শুয়ে রইল সেখানেই। ভাইবোনদের চেয়ে অনেক ছোট ছিল সাপটা।

‘কী হয়েছে ওর?’ চারদিকে তাকালাম আমি। ‘তোমার মা কোথায়? তোমাকে কেন সাহায্য করছে না?’

‘সাপ আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী নয়। এরা সরীসৃপ। ওদের আঁশ আছে এবং মা সাপ ডিম পাড়ে। তোমার মনে নেই, সরীসৃপরা বাচ্চাদের খুব কম যত্ন নেয়।’

এটা আমি পড়েছি বলে মনে পড়ছে। কিন্তু বাস্তবে যখন চোখের সামনে দেখছি, তখন ব্যাপারটা নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে। ‘কিন্তু ওরা তো অনেক ছোট! নিজেদের যত্ন নিতে পারে না। ওরা কীভাবে নিজেদের যত্ন নেবে?’

‘হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ওরা অনেক ছোট। কিন্তু নিজেদের যত্ন নেওয়ার মতো প্রস্তুত হয়েই ওরা জন্মগ্রহণ করে। কীভাবে শিকার করতে হয়, নিজেদের খাবার জোগাতে হয় এবং কীভাবে নিজেদের নিরাপদে লুকিয়ে রাখতে হয়, তা ওরা জানে।’

ছোট্ট দুর্বল সাপটার দিকে তাকালাম আমি। এটার কী হবে? এটা তো অনেক ছোট। ভুরু কুঁচকে বললাম, ওকে অসুস্থ মনে হচ্ছে।

‘একসঙ্গে প্রাণীদের অনেক বাচ্চা হলে মাঝেমধ্যে সব কটা সমান শক্তিশালী হয় না। কোনোটা ছোট হয়, শক্তি কম থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এরা সাধারণত বাঁচে না।’

একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল আমার গাল বেয়ে। ছোট্ট সাপটির দিকে তাকিয়ে ওর মৃত্যুর কথা ভেবে খুব দুঃখ হয়েছিল।

আরও পড়ুন

আমার কাঁধে একটা চাপ দিলেন মা। বললেন, ‘সাপটাকে সাহায্য করতে পারি না আমরা? ওর জীবনের প্রথম খাবার আমরা খাওয়াতে পারি। এতে ওর বেঁচে থাকা একটু সহজ হবে। অনেক বাচ্চা সাপ পোকা খেতে পছন্দ করে।’

মা কথা শেষ করার আগেই আমি দ্রুত মাটি খুঁড়তে লাগলাম। পোকা খোঁজায় আমি ওস্তাদ। মিনিটখানেকের মধ্যেই একটা ভালো বড় পোকা পেয়ে গেলাম। কিন্তু ওটাকে পেয়েও মনটা খারাপ হলো আমার। কারণ, আমি পোকাপ্রেমীও। এই মুহূর্তে একটা ছোট্ট পোকা ছোট্ট সাপটাকে খেতে দেব। মা ছোট্ট সাপটার সামনে ধীরে ধীরে পোকাটা নাড়াতে লাগলেন। খাবার দেখে সাপটা নড়েচড়ে উঠল। তারপর একঢোকে পোকাটাকে গিলে ফেলল। ছোট্ট সাপটা প্রাণ ফিরে পেয়ে ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়তেই সাসাফ্রাস চিৎকার করে উঠল।

খাবার খেয়ে জঙ্গলে চলে যাচ্ছে ছোট্ট সাপটা

কল্পনা থেকে ফিরে এলাম। থিঙ্কিং গগলসে আচমকা একটা থাপ্পড় মারলাম। এইতো, পেয়ে গেছি! হয়তো এই বাচ্চা ড্রাগনটা ওর ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও দুর্বল ছিল। এখন সে ক্ষুধার্ত। সমাধান পেয়ে গেছি আমি। ওর জন্য এখন কিছু খাবার জোগাড় করতে হবে…

দাঁড়াও। ড্রাগন কী খায়?

চলবে…

আরও পড়ুন

মূল: এশিয়া সিট্রো

রূপান্তর: কাজী আকাশ

ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে

*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন একজন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্ট বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন