আইফেল টাওয়ারসহ বিখ্যাত স্থাপনাগুলোর আলো নিভে যায় যে কারণে
প্রতিবছর মার্চ মাসের শেষ শনিবার রাত ৮:৩০ থেকে ৯:৩০ পর্যন্ত এক ঘণ্টার জন্য বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখে। কেন বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটনস্থল ও ল্যান্ডমার্কগুলো অন্ধকার করে দেওয়া হয়? মূলত, প্রতিবছর ‘আর্থ আওয়ার’ উপলক্ষে বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটনস্থল ও ল্যান্ডমার্কগুলো এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন আর্থ আওয়ার। পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা এই দিনটি পালন করে। তবে যে বছর এই শনিবার ধর্মীয় ছুটির দিনে পড়ে, সেই দিন বদলে অন্য শনিবার দিনটি উদযাপন করা হয়। যেমন এ বছর। ২০২৪ সালের আর্থ আওয়ার অনুষ্ঠিত হলো নির্ধারিত দিনের চেয়ে এক সপ্তাহ আগে।
এ বছর ২৩ মার্চ, শনিবার উদযাপন করা হয় আর্থ আওয়ারের ১৮তম আয়োজন। ১৮০টির বেশি দেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে। এবার প্রায় ১৪ লাখ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাতি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় আর্থ আওয়ার উদযাপন এখনো চলছে। ফলে সময়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
আর্থ আওয়ারের আইকনিক বাতি বন্ধ করার মুহূর্তে অনেকগুলো বিখ্যাত স্থাপনা ও সংস্থা অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে আছে সিডনি অপেরা হাউস, টোকিও টাওয়া, চীনের অর্ডোস সিট, বেইজিং ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, তাইপেই ১০১, হংকং স্কাইলাইন, ভিক্টোরিয়া হারবার, নামসান সিউল টাওয়ার, শাহ ফয়সাল মসজিদ, ইন্ডিয়া গেট, লন্ডন আই, যুক্তরাজ্যে বাকিংহাম প্রাসাদ, কলোসিয়াম, ভ্যাটিকান ব্যাসিলিকা, ব্র্যান্ডেনবার্গ গেট, আইফেল টাওয়ার, নটর ডেম ক্যাথেড্রাল, লুভর যাদুঘর, গোল্ডেন গেট ব্রিজ, মিডল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, নায়াগ্রা জলপ্রপাত, জাতিসংঘের সদর দপ্তর প্রভৃতি। এ ছাড়া আর্থ আওয়ারে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানি। যারা তাদের কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে।
এ ছাড়া কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিও আর্থ আওয়ারে অংশগ্রহণ করেন। যেমন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কেনিয়ার অলিম্পিক ম্যারাথন চ্যাম্পিয়ন এলিউড কিপচোগে, কে-পপ সুপার জুনিয়র চোই সিওন, হলিউড অভিনেত্রী কেট ওয়ালশ, বলিউড অভিনেত্রী অনন্যা পান্ডে, চীনা অভিনেতা ঝু ইলং, সাবেক ক্যামেরুনিয়ান পেশাদার ফুটবলার রজার মিলা, বিশ্বখ্যাত টেবিল টেনিস অলিম্পিয়ান ডেং ইয়াপিং। তাঁরা মূলত আর্থ আওয়ার আন্দোলনের বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত বছর ছিল রেকর্ড উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে। আর্থ আওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী সংহতি প্রদর্শন করে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে পারি।জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
আর্থ আওয়ার প্রথম শুরু হয় ২০০৭ সালে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউসের আলো নিভিয়ে সর্বপ্রথম এই আর্থ আওয়ার পালন করা শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই পালিত হয়ে আসছে এই দিবস। বর্তমানে এটি বিশ্ব আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এই ৬০ মিনিটের কর্মসূচি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রকৃতি রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের তথ্য–উপাত্তে দেখা গেছে, আর্থ আওয়ার পরিবেশের নিশাচর প্রাণীদের বাস্তুসংস্থান স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া রাতের আলোর দূষণ কমাতেও ভবিষ্যতে এটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করে তারা।
আর্থ আওয়ার উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত বছর ছিল রেকর্ড উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে। আর্থ আওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী সংহতি প্রদর্শন করে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে পারি।’