সূর্যের আলো না পড়লে যেকোনো জায়গা হয়ে যায় অন্ধকার। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকে। কৃত্রিমভাবে আলোর ব্যবস্থা না করলে সেখানে বসবাস করা সম্ভব হয় না। তবে সূর্যের আলো পড়ে না, এমন এক গ্রাম ছিল ইতালিতে। ইতালির ভিগানেল্লা নামে একটি ছোট গ্রামের বাসিন্দারা সূর্যের আলো ছাড়াই জীবন কাটাতেন। বিশেষ করে শীতকালে। পাহাড়ের গভীরে উপত্যকার তলদেশে গ্রামের অবস্থান হওয়ায় শীতকালে পুরো তিন মাস সূর্য আলো সেখানে পড়ত না। ভিগানেল্লার আশপাশের পাহাড়গুলো গ্রামের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলত। তখন গ্রামবাসীর কাছে নিজের বাড়িকে মনে হতো সাইবেরিয়ার শীতলতম কোনো স্থান।
বছরের পর বছর ভিগানেল্লার লোকেরা এটিকে তাঁদের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। শীতকালে সূর্যের দেখা ছাড়াই জীবন যাপন করতেন। একসময় স্থানীয় একজন স্থপতি একটি আইডিয়া নিয়ে এলেন এ অবস্থার পরিবর্তন করতে। আইডিয়াটা খুব সহজ কিন্তু কাজের। কোনোভাবে আয়না লাগিয়ে গ্রামে সূর্যের আলো ফেলা গেলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়!
যেই ভাবা, সেই কাজ। মেয়র পিয়েরফ্রাঙ্কো মিদালির সহায়তায় গ্রামবাসী এই আইডিয়াকে বাস্তবায়ন করতে টাকা তোলা শুরু করেন। সবাই মিলে জোগাড় করেন এক লাখ ইউরো। এই টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে ৪০ বর্গমিটারের ১ দশমিক ১ টন ওজনের একটি বিশাল আয়না স্থাপন করা হয়। গ্রাম থেকে পাহাড়ের বিপরীত ঢালে ১ হাজার ১০০ মিটার ওপরে আয়নাটি স্থাপন করা হয়। আয়না দিয়ে পুরো গ্রামকে আলোকিত করা সম্ভব নয়। গ্রামের তুলনায় আয়না খুব ছোট। তাই সব বিবেচনা করে ভিগানেল্লার প্রধান চত্বর বা গির্জার সামনে ফোকাস করা হয়।
আয়নাটি কম্পিউটার দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এটি সারা দিন সরে সরে সূর্যের পথ অনুসরণ করে। পুরো গ্রামে আলো ফেলে সূর্য। দিনে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ৩০০ বর্গগজ এলাকা আলোকিত করে। এর কারণে গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা আর আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
আয়না বসানোর আগে শীতকালে প্রতি রোববার প্রার্থনার পর লোকজন দ্রুত বাড়িতে চলে যেতেন। কিন্তু এখন আয়নার জন্য গির্জার চত্বর আলোকিত থাকে। গ্রামের বাসিন্দারা প্রার্থনা শেষে কুশল বিনিময় করেন। সূর্যের আলো উপভোগ করেন।
২০০৬ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে ভিগানেল্লার আয়না সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।