আমরা সবাই কখনো না কখনো চুল টানার ব্যথা অনুভব করেছি। বিশেষ করে ছোটবেলায় ভাইবোন বা বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটির সময় কিংবা মাথায় চিরুনি দেওয়ার সময় চুলে টান লেগে ব্যথা পেয়েছি। যেভাবেই চুলে টান লাগে না কেন, ব্যথা সবাই অনুভব করে। খেয়াল করলে দেখবে, চুল টানার ব্যথা মুহূর্তের মধ্যেই টের পাওয়া যায়। অন্য যেকোনো ব্যথার তুলনায় এই ব্যথা দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। কখনো মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন চুল টানার ব্যথা দ্রুত অনুভব করতে পারি?
বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, চুল টানার ব্যথা অন্য ব্যথার চেয়ে দ্রুতগতিতে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। কারণ, এই ব্যথা আমাদের শরীরের এক বিশেষ ধরনের স্নায়ু তন্তুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
চুল টানার ব্যথা সাধারণ ব্যথার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি তীব্র! কারণ, এই বিশেষ স্নায়ুতন্ত্র (নার্ভ) খুব দ্রুত সংকেত পাঠায়—ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতেস্নায়ুবিদ এমা কিন্ডসট্র ও তাঁর দল
আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু আছে। এসব স্নায়ু মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। আমাদের হাত-পা কেটে গেলে বা কোথায় ধাক্কা লাগলে ব্যথা পাই। সেই ব্যথার সংকেত একটা নির্দিষ্ট পথে আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়। ব্যথার জন্য সাধারণত C ফাইবার এবং Aδ (এ ডেলটা) ফাইবার কাজ করে, যা তুলনামূলকভাবে ধীরগতির। কিন্তু চুল টানার সময় Aβ (এ বিটা) ফাইবার দ্রুত সংকেত পাঠিয়ে দেয়, যা সাধারণ ব্যথার তুলনায় আলাদা অনুভূতি তৈরি করে।
স্নায়ুবিদ এমা কিন্ডসট্র ও তাঁর দল গবেষণা করে দেখেছেন, চুল টানার ব্যথা সাধারণ ব্যথার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি তীব্র! কারণ, এই বিশেষ স্নায়ুতন্ত্র (নার্ভ) খুব দ্রুত সংকেত পাঠায়—ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে! তাই চুল টানলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা লাগে, কিন্তু কেটে গেলে বা আঘাত পেলে তা বুঝতে খানিকটা সময় লাগে।
এখন তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারো, চুলের সঙ্গে ব্যথার সম্পর্ক কী? আসলে আমাদের শরীরে পাইজো২ (PIEZO2) নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে। এই প্রোটিন আমাদের স্পর্শ বা চাপ অনুভব করতে সাহায্য করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই প্রোটিন চুল টানার ব্যথার সঙ্গে জড়িত। তবে কিছু মানুষ আছে যাদের শরীরে এই প্রোটিন কাজ করে না। ফলে তাদের চুল টানলেও ব্যথা লাগে না! আবার এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের চুলে শুধু হাত দিলেই ব্যথা লাগে। এটি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। চুলের গোড়া থেকে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাতে এই প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণাটি করার জন্য বিজ্ঞানীরা কিছু স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের চুল নির্দিষ্ট শক্তিতে টেনে ধরা হয়। তবে তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির এই বিশেষ স্নায়ু সাময়িকভাবে ব্লক করে দেওয়া হয়েছিল। দেখা গেল, যাদের স্নায়ু সচল ছিল, তারা ব্যথা খুব দ্রুত অনুভব করলেন। কিন্তু যাদের স্নায়ু ব্লক করা হয়েছিল, তারা চুল টানার ব্যথা টেরই পেলেন না!
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, চুল টানার ব্যথা সাধারণ ব্যথার তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি তীব্র হয়। কারণ, এটি যে নার্ভের মাধ্যমে ছড়ায়, তা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে সংকেত পাঠায়।
এই গবেষণার একটি মজার দিক হলো, কেউ কেউ চুল টানলে হাঁচি দিয়ে ফেলেন! যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কেন এমন হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি মস্তিষ্কের স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘটে।
কিন্তু চুল টানার ব্যথা সবাই সমানভাবে অনুভব করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া নামে একটি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় নিজেদের চুল টানতে থাকেন। কিন্তু এতে তারা ব্যথা অনুভব করেন না। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, হয়তো তাদের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক নয়, বরং মানসিক কারণে তারা ব্যথা অনুভব করেন না। অন্যদিকে, কিছু মানুষ আছেন যাদের মাথার চুলে সামান্য স্পর্শ লাগলেই ব্যথা হয়। এটি আবার কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
এই গবেষণার একটি মজার দিক হলো, কেউ কেউ চুল টানলে হাঁচি দিয়ে ফেলেন! যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কেন এমন হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি মস্তিষ্কের স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘটে।
গবেষণাটি সোসাইটি ফর নিউরোসায়েন্স-এর বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। এটি আমাদের শরীরে ব্যথার অনুভূতি নিয়ে নতুন ধারণা দিয়েছে।
সূত্র: সায়েন্স এস্কপ্লোর নিউজ, আইএফএল সায়েন্স ও সায়েন্স নিউজ