প্লেনের টয়লেট ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় কীভাবে কাজ করে

আধুনিক প্লেন ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে আকাশে কমবেশি ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ে। এই উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের চাপ খুবই কম। তাই, সাধারণ টয়লেট সিস্টেম এখানে কাজ করে না। তাহলে, কীভাবে প্লেনের টয়লেটগুলো এই উচ্চতায় কাজ করে? প্রশ্নটির উত্তর জানতে হলে প্লেনে চড়ে দেখা যেতে পারে। অথবা ঘরে বসেই এর পেছনের বিজ্ঞান জেনে নেওয়া যায়। এর জন্য পড়তে হবে এই লেখা।

মাথার ওপর দিয়ে প্লেন উড়ে গেলে প্রায়ই মনে প্রশ্ন জাগে, কীভাবে এত উঁচুতে এটি চলাচল করে? প্লেনের যাত্রীরা সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নিচ্ছেন, গরম খাবার খাচ্ছেন, পানি পান করছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, এমনকি সাধারণ টয়লেটের মতো ফ্লাশও করছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে এসব কাজ এখন সাধারণ হয়ে উঠেছে।

প্লেনের টয়লেটগুলো সাধারণ টয়লেটের মতো নয়। এর পেছনে জটিল প্রকৌশল কাজ করে, যা যাত্রীদের নিরাপদে টয়লেট ব্যবহার করতে সাহায্য করে। প্লেনের ওজন ঠিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ওজনের বেশি কিছু সঙ্গে নিতে পারেন না। প্লেনের ওজন যাতে কম রাখা যায়, সে জন্য প্লেনের টয়লেট ফ্ল্যাশ করার জন্য পানি ব্যবহার করা হয় না। পানির পরিবর্তে প্লেনে ফ্ল্যাশ করার জন্য বাতাস ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ বাতাস ব্যবহার করে বর্জ্য অপসারণ করা হয়।

প্লেনের এই টয়লেট সিস্টেমকে বলা হয় স্ট্যান্ডার্ড ইভাক (ইভাক্যুয়েশন) সিস্টেম। কমোড থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয় ডিফারেনশিয়াল এয়ার প্রেশার (ডিএপি) ব্যবহারের মাধ্যমে। ডিএপি হলো দুটি বিন্দুর মধ্যে বাতাসের চাপের পার্থক্য। এই সিস্টেম বাতাসের চাপের পার্থক্য কাজে লাগিয়ে কাজ করে। বর্জ্য পদার্থগুলো প্লেনের ট্যাঙ্কে জমা হয়, যা পরে পরিষ্কার করা হয়। ট্যাঙ্কগুলো প্লেনের টয়লেটের নিচে জমা হয়, এ জন্য সাধারণত প্লেনের পেছনে এবং সামনের দিকে টয়লেট থাকে। এই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছিলেন জেমস কেম্পার নামের এক বিজ্ঞানী। ১৯৭৫ সালে তিনি এই উদ্ভাবনের পেটেন্ট পান।

প্লেনের সামনে বা পেছনে টয়লেটের অবস্থান থাকে

প্লেনে যখন ফ্ল্যাশের বোতাম চাপা হয়, তখন টয়লেট কমোডের নিচে একটি ভালভ খোলে যা একটি পাইপের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সেই পাইপ ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করে। ফ্ল্যাশের বোতাম চাপা হলে সঙ্গে সঙ্গে ভালভ খুলে গিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে, যা কমোডের সবকিছু ফ্ল্যাশ করে দেয়।

আরও পড়ুন

যেহেতু ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিই সব কাজ করে, তাই পরবর্তী ব্যবহারকারীর জন্য কমোড পরিষ্কার করতে খুব অল্প পানি বা বিমানে ব্যবহৃত নীল জীবাণুনাশক তরল ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ভ্যাকুয়াম সিস্টেমে মাত্র আধা গ্যালন বা ২ লিটার বা তারও কম তরল ব্যবহার করে ফ্ল্যাশ করা হয়, যেখানে পানিসাশ্রয়ী সাধারণ টয়লেটের জন্য ১ দশমিক ৬ গ্যালন বা ৬ লিটার।

লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটির বিমান প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটির সদস্য নাইজেল জোন্স বলেছেন, এটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো কাজ করে। টয়লেটের বাটন টিপলে, ভালভটি খোলে এবং ভালভটি খোলার সঙ্গে সঙ্গে সাকশন এটিকে টেনে নেয়। তারপর ভালভটি বন্ধ হয়ে যায়। প্লেন যতক্ষণ আকাশে থাকে, ততক্ষণ এই ভ্যাকুয়াম প্রভাব ক্রমাগত চলতে থাকে। প্লেন যখন এয়ারপোর্টে থাকে, তখন ডিফারেনশিয়াল প্রেশার বা চাপ থাকে না। তখন টয়লেট ফ্ল্যাশ একটি পাম্প দ্বারা পরিচালিত হয়, যা ট্যাঙ্কে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে। প্লেনটি আকাশে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাঙ্কে ডিফারেনশিয়াল চাপ তৈরি হয়। তখন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় ভ্যাকুয়াম। এ ছাড়া প্লেনের কমোডে টেফলন নামের রাসায়নিক যৌগের প্রলেপ দেওয়া থাকে। টেফলন মূলত একধরনের প্লাস্টিক। এ জন্য কমোডে কিছুই আটকে থাকে না। বাতাসের চাপই দ্রুত সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়।

এয়ারলাইনগুলো একটি প্লেনে কতগুলো টয়লেট রাখতে চায় এবং কোথায় রাখতে চায়, তা তারা নিজেরাই ঠিক করে। প্লেনের আকারের ওপর নির্ভর করে টয়লেটের একটি সর্বনিম্ন সংখ্যা থাকে। তবে এয়ারলাইনগুলো চাইলে এর চেয়ে বেশি টয়লেট রাখতে পারে। ট্যাঙ্কে জমা হওয়া বর্জ্য খালি করার জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের গাড়ি। এগুলো বিমানবন্দরের বিশেষ গাড়ি, যা বর্জ্য ট্যাংক খালি করে এবং বর্জ্য পদার্থ বিমানবন্দরে প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিয়ে যায়।

সূত্র: সিএনএন, হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, নিউইয়র্ক পোস্ট

আরও পড়ুন