ছোটকাকুর একগুচ্ছ নতুন বই

ছোটদের জন্য লেখালেখি করে শিশু-সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর পরিচিতি পেয়েছেন ‘ছোটকাকু’ নামে। লেখক হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছেন। বিচিত্র বিষয়ে লেখালেখি করেন—  অভিযান, রহস্য, কল্প-বিজ্ঞান, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণ, জনপ্রিয় বিজ্ঞান, নাটক, নিজের ছেলেবেলার গল্প সহ নানান কিছু।

ফরিদুর রেজা সাগরের মা বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। বাবা ফজলুল হক ছিলেন দেশের প্রথম সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রেসিডেন্ট এর নির্মাতা। ছোটবেলা থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, চাঁদের হাট এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই শিশুকিশোর উপযোগী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। নতুন কুঁড়ি, বিদ্যালয় বিচিত্রা, প্রাণ তরঙ্গের মতো জনপ্রয় অনুষ্ঠান করেছেন। প্রায় শতাধিক বই লিখেছেন ছোটদের জন্য। চ্যানেল আইয়ের তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক।  

ছোটকাকু সিরিজ ছাড়াও প্রায় সবধরনের লেখাই শিশু-কিশোর পাঠকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ছেলেবেলার গল্প যেমন ছোটকাকুর লেখায় বারবার এসেছে, তেমনি কল্পনার দুয়ার খুলে দিয়ে শিশুদের জন্য লিখছেন। প্রায় দুই যুগ ধরে লিখে লিখে বহু লেখা জমে গেছে। লেখাগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ খণ্ড কিশোরসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ২০০৬-এর ফেব্রুয়ারি বইমেলায় সময় প্রকাশন থেকে। প্রায় প্রতিবছর ১টি করে খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এবার ফেব্রুয়ারি বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে 'কিশোরসমগ্র ১৫' ও 'কিশোরসমগ্র ১৬'।  ছোটকাকুর এমন কয়েকটি বইয়ের সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেব, যেগুলো এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

কিশোরসমগ্র ১৫

এই সংকলনের পাতা ওল্টালে পাবে—

‘মানিক সাহেবের অদ্ভুত অদ্ভুত সখ ছিল। পুরোনো বই ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তিনি সংগ্রহ করতেন। সপ্তদশ শতকের পর্তুগিজ এক নাবিকের লেখা ডায়েরি আছে তার কাছে। প্রাচীন পর্তুগিজ ভাষায় লেখা। আল বেরুনীর লেখা একটা বইয়ের প্রাচীন সংস্করণ তার কাছে আছে। কিছুটা খেয়ালি মনের মানুষ। একবার তিনি সদলবলে মধুপুর গড়ে যান শিকার করতে। শুনেছিলেন সেখানে হাতি আসে। এই শিকার করতে যাওয়ার সময় ঘটল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হাতির হাওদা ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান। দুর্ভাগ্য হাতির পায়ের তলায় পড়ে যান তিনি। কোমর ভেঙে যায় তার। দেশে বিদেশে বহু অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু কোনো উন্নতি হয় না। মানিক চৌধুরী চিরদিনের জন্য শয্যাশায়ী হয়ে যান। জমিদার বাড়ির আলাদা কক্ষে তার অবস্থান। তার সেবাযত্ন করার জন্য দুজন নার্স আছে সার্বক্ষণিক। একজন সুলতানা আরেকজন পারভীন। তারাই মানিক সাহেবকে খাবার দেয়। ওষুধ খাইয়ে দেয়। গা মুছে দেয়। কখনো হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাগানে নিয়ে যায়। কিন্তু মানিক সাহেব বেশিক্ষণ হুইল চেয়ারে বসে থাকতে পারেন না। কোমরে ব্যথা শুরু হয়। তাড়াতাড়ি ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েন। বাড়ির আরেক প্রকোষ্ঠে থাকেন খালামণি। মায়ের মতোই প্রিয় তিনি। খালা অসম্ভব ভালোবাসেন মানিককে। খালাও এক জমিদারের কন্যা। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যান। বাবার কাছ থেকে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে…।'

একনজরে

কিশোরসমগ্র ১৫

লেখক: ফরিদুর রেজা সাগর

প্রকাশক: সময়

মূল্য: ৪০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৭২

আরও পড়ুন

এমন চমৎকার লেখা পাবে কিশোরসমগ্র ১৫-এর প্রথম উপন্যাস সাতদিন সেন্টমার্টিন-এ। কিশোরসমগ্র ১৫-তে আছে তিনটি উপন্যাস। সাতদিন সেন্টমার্টিন, মানিকগঞ্জের মানিক প্যালেস ও রহস্যে ছোটকাকু নেই। আর আছে একটি গল্প-বসন্তের বাতাসে শেখ রাসেল। আর আছে স্মৃতিগদ্য-অনেক ছবি অনেক মুখ।

কিশোরসমগ্র ১৬

এ খণ্ডে উপন্যাস আছে তিনটি। একটি টকশো ও কতিপয় অপরাধী, কথা শিকারি, মাওয়া থেকে হাওয়া। কিশোর উপযোগী এই তিন উপন্যাসের বাইরে এই বইয়ে আছে তিনটি স্মৃতিগদ্য। ছবির মুখ, প্রিয়জনের প্রিয় স্মৃতি, প্রিয় মানুষ।

একনজরে

কিশোরসমগ্র ১৬

লেখক: ফরিদুর রেজা সাগর

প্রকাশক: সময়

মূল্য: ৬০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২৫৬

আরও পড়ুন

উপন্যাসে আছে ‘ওসি আব্দুর রহমান উভয় সংকটে পড়ে গেছেন। তার একবার মনে হচ্ছে ঘটনা তদন্ত করতে এসেছেন কাজেই যতটুকু তদন্ত করা যায় ততটুকু তদন্ত করেই চলে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হচ্ছে ঘটনাটা বড়ই রহস্যজনক। তদন্ত কাজ জিইয়ে রাখলে ঘটনার আসল রহস্য হয়তো উদঘাটন করা যাবে না। যা করার আজই, এই মুহূর্তে করতে হবে। কারণ ঘটনার এখন যা আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা এখান থেকে সরে গেলে হয়তো আর টিকে থাকবে না। যে বা যারা ঘটনাটা ঘটিয়েছে তারাই আলামত নষ্ট করে ফেলবে।’ উপন্যাসগুলো পড়লে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পাবে।

রহিম সাহেবের হাত ও আরেক পৃথিবী

এই বইয়ে আছে দুইটি উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস রহিম সাহেবের হাত রহিম উদ্দিন নামে রংপুরের এক লোককে নিয়ে। তাঁর চেহারার সঙ্গে নায়করাজ রাজ্জাকের সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করার স্বপ্নকেই বুকে পুষে। অথচ চোদ্দো-পনেরো বছর কেটে গেল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তাঁর স্বপ্নপূরণ হলো না। একদিন কার্জন হলের সামনে ভিড় দেখে রহিম উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে দেখেন, শুটিং হচ্ছে। ঘটনাচক্রে সেই সিনেমার একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সুযোগ পেলেন। রহিম উদ্দিনের স্বপ্ন কি অবশেষে পূরণ হলো?

একনজরে

রহিম সাহেবের হাত ও আরেক পৃথিবী

লেখক: ফরিদুর রেজা সাগর

প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ

মূল্য: ২৮০ টাকা

পৃষ্ঠা: ৬২

আরেক পৃথিবী উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শিল্পপতি তাপস খান। অসচ্ছল পরিবারের সন্তান তিনি আজ বিরাট ব্যবসায়ী। প্রিন্টিং ব্যবসার মাধ্যমে যাত্রা শুরু। তারপর কোচিং ব্যবসা, আবাসিক খাত। ইদানীং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবসায়ের দিকেও ঝুঁকেছেন। এই ব্যবসায় এক সিন্ডিকেটের তিনি চেয়ারম্যান। বলা যায়, টাকার পাহাড়ে বসে আছেন। তবু তাপস খান সুখে নেই। এক অদ্ভুত অসুখে আক্রান্ত তিনি। আজব এক মাথাব্যথায় ভুগছেন। এই মাথাব্যথার উৎস কী ? সিটিস্ক্যানেও সন্ধান মেলে নি।

আরও পড়ুন

এক সুঁতোয় বাঁধা

এই বইটি দেখতে খুব সুন্দর। লেখকের স্মৃতিগদ্য সুতোয় বাঁধা পুতুল এবং অর্ধেক পুতুল। ছোতকাকুর জীবনের নানান পর্বের ঘটনা জানা যাবে এই বই থেকে। বইয়ের ব্লার্বে লেখা আছে, ছেলেবেলা কখনো ফুরিয়ে যায় না। ছেলেবেলা নিয়ে তাই লেখালেখি কখনো ফুরিয়ে যায় না। লেখালেখিতে বারবার ছেলেবেলা ফিরে আসে। এই দুটো বই একত্রে প্রকাশ পেলো। সেসবই ছেলেবেলার গল্প। ছেলেবেলার আনন্দ ফুরিয়ে যায় না। ছেলেবেলা চিরন্তন।’ ছেলেবেলার গল্প যেমন জানা যাবে, তেমনি বড়বেলায় ঘটা দারুণ সব ঘটনা জানতে পারবে।

একনজরে

এক সুঁতোয় বাঁধা

লেখক: ফরিদুর রেজা সাগর

প্রকাশক: অনন্যা

মূল্য: ১০০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১২৭

আরও পড়ুন

তাঁর ছেলেবেলার ঘটনা কেমন, নিচের লেখা থেকে আন্দাজ করতে পারবে। 

‘আমাদের পাড়ায় অনেকগুলো বাড়ি থাকলেও কোনো বাড়িতে ফ্রিজ ছিল না। কুরবানির সময় যে মাংস আমরা পেতাম, সে মাংসের অনেক টুকরো তার বা শিকের মধ্যে ঢুকিয়ে আমার বাবা ছাদের ওপর ঝুলিয়ে রাখতেন। রোদের মধ্যে এই মাংস শুকাতে থাকত। কোরবানির মাংস এখনও মানুষ ফ্রিজে রেখে মহররমের দিন রান্না করে খায়। সে সময় আমার বাবা ছাদের ওপর থেকে শুকানো এই মাংস মহররমের দিন রান্না করতেন।’

এখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ। এখন কারো পক্ষে এই অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব না। এই অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে চাইলে তোমাকে পড়তে হবে এক সুঁতোয় বাঁধা। পড়তে হবে ছোটকাকু ফরিদুর রেজা সাগরের বই।