এআই রোবটের আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে ১ মিলিয়ন ডলারে
আই-ডা নামের একটি এআই রোবটের বানানো চিত্রকর্ম ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এক নিলামে ১০ লাখ ৮০ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে। মানুষের মতো দেখতে এই রোবটের তৈরি চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে এটিই এখন পর্যন্ত বিক্রিত সবচেয়ে দামি শিল্পকর্ম।
চিত্রকর্মটির নাম ‘এআই গড: পোর্ট্রেইট অব অ্যালান টুরিং’। অ্যালান টুরিং ছিলেন একজন ইংরেজ গণিত প্রডিজি। যিনি আধুনিক কম্পিউটারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়েছিলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রাথমিক ধারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি।
টুরিংয়ের প্রতিকৃতি নিউইয়র্কের একটি নিলামে বিপুল দামে বিক্রি হয়েছে। এটি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলারে বিক্রি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক মানুষের এতে আগ্রহ ছিল। ফলে এটি অবিশ্বাস্য দামে বিক্রি হয়েছে।
ছবিটি তৈরি করেছে আই-ডা নামের একটি হিউম্যানয়েড এআই রোবট। রোবটটি নিজের আঁকা অ্যালান টুরিংয়ের প্রতিকৃতির সামনে পোজ দিয়েছে। আই-ডা নামের রোবটের আকৃতি মানুষের মতো। এই রোবট আঁকতে পারে এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। আই-ডা রোবটের ধারণা এসেছে আইডান মেলার নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে, যিনি একটি আর্ট গ্যালারি চালাতেন। তিনি আই-ডাকে তৈরি করতে এবং এই প্রোগ্রাম চালাতে প্রায় ৩০ জনের একটি দলের সঙ্গে কাজ করেন।
আই-ডার নামের প্রথম অংশ এসেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই থেকে। এই নামের দ্বিতীয় অংশ এসেছে ১৮০০ শতকের বিখ্যাত নারী গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেসের নামে। অ্যাডা লাভলেস হলেন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার।
আই-ডা দেখতে কালো চুলের নারীর মতো। রোবটটি দেখে ক্যামেরা দিয়ে। এর একটি রোবটিক বাহু আছে, যা দিয়ে সে ছবি আঁকে। এই বাহু দিয়ে একটি কলম বা পেইন্ট ব্রাশ ধরে রাখতে পারে। চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করে আই-ডা কথাও বলতে পারে। তাই তুমি চাইলে রোবটটির সাক্ষাত্কার নিতে পারবে আবার ওর আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে প্রশ্নও করতে পারবে।
আই-ডার প্রোগ্রামার মেলার বলেন, আই-ডাকে কিছু একটা আঁকতে বলে দিলেই সে এঁকে ফেলে না। রোবটটি ছবি আঁকা শুরু করার আগে মানব সহকারীদের সঙ্গে বিষয়টি কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে কথা বলে।
টুরিংকে আঁকার আগে মেলার রোবটটিকে বলেছিলেন, ‘আমরা “ভালোর জন্য এআই” ধারণা নিয়ে ছবি আঁকতে চাই।’ আই-ডার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তাঁরা। এই নির্দেশনা থেকে আই-ডা টুরিংকে সাবজেক্ট হিসেবে বেছে নিয়েছিল। কারণ, টুরিং কম্পিউটার ও এআইয়ের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আই-ডা নিজের ক্যামেরা দিয়ে দেখেছে, টুরিং দেখতে কেমন ছিলেন। টুরিংয়ের একটি ছবি দেখে প্রতিকৃতিটি এঁকেছে আই-ডা।
আই-ডা ছবি আঁকার জন্য কৃত্রিম হাত ব্যবহার করে। টুরিংয়ের মুখের বিভিন্ন অংশের ১৫টি আলাদা চিত্রকর্ম তৈরি করেছে এটি। প্রতিটি চিত্রকর্ম শেষ করতে এটি সময় নিয়েছে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। এসব চিত্রকর্মের আকার ছোট। পাশাপাশি রাখা দুটি নোটবুক কাগজের সমান। এটুকু দূরত্বে আইডা নিজের রোবটিক বাহু সরাতে পারে।
আই-ডা প্রতিকৃতিটি তৈরি করতে ১৫টি থেকে ৩টি চিত্রকর্ম বেছে নিয়েছে। আঁকা শেষ হলে আই-ডার ছোট শিল্পকর্মটি একটি পূর্ণ আকারের চিত্রকর্মে রূপান্তর করার জন্য একটি বিশেষ থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়েছে।
সবাই অবশ্য আই-ডাকে সত্যিকারের শিল্পী মনে করেন না। তবে মেলার বলেন, ছবি আঁকাই রোবটটির কাজ। আই-ডাকে তিনি ভবিষ্যৎকে কল্পনা করার ‘একধরনের আয়না’ হিসেবেও দাবি করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আই-ডার তৈরি শিল্প মানুষকে ভাবতে সাহায্য করতে পারে। এআই কীভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করছে, তা ভাবতে পারবে মানুষ আই-ডার শিল্প দেখে।
এই শিল্পকর্ম বিক্রির টাকার কী হবে? মেলার বলেছেন, তাঁর দল এই টাকা দিয়ে আই-ডাকে আরও ভালো রোবট শিল্পীতে পরিণত করতে ব্যবহার করবে। আই-ডাকে ক্রমাগত উন্নত করা হচ্ছে। আর এরই মধ্যে আই-ডার তৃতীয়বারের মতো হাত পরিবর্তন করা হয়েছে।
সূত্র: নিউজ ফর কিডস