অ্যাপোলো ৮ মিশনের বিখ্যাত নভোচারী ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল উইলিয়াম অ্যান্ডার্স বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। যিনি ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর উদয়ের বিখ্যাত ছবি ‘আর্থরাইজ’ তুলেছিলেন। ৭ জুন এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দুর্ঘটনার সময় উইলিয়াম অ্যান্ডার্স একাই বিমানটি চালাচ্ছিলেন। তাঁর অপ্রত্যাশিত বিদায় সবার মনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের জোন্স আইল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় ৮০ ফুট দূরে। অ্যান্ডার্স যে বিমানটি চালাচ্ছিলেন, তা ছিল তাঁর মালিকানাধীন একটি পুরোনো মার্কিন বিমানবাহিনীর বিচক্রাফট এএ ৪৫। এটি সিঙ্গেল-ইঞ্জিন টি-৩৪ মেন্টর বিমান। বিমানটি ঠিক কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করে জানা যায়নি। মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
১৯৩৩ সালের ১৭ অক্টোবর হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন উইলিয়াম অ্যান্ডার্স। শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটান যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। অ্যানাপোলিসে অবস্থিত মার্কিন নৌবাহিনী একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। যেখানে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
অ্যান্ডার্সের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল গ্রেগ অ্যান্ডার্স বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবার তাঁর শোকে বিধ্বস্ত। তিনি ছিলেন একজন দুর্দান্ত পাইলট, তাঁর বিদায়ে আমরা তাঁকে খুব মিস করব।’ গ্রেগ অ্যান্ডার্স গণমাধ্যমকে তাঁর বাবা উইলিয়াম অ্যান্ডার্সের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
অ্যারিজোনার সিনেটর মার্ক কেলি, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত নাসার মহাকাশচারী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন: ‘বিল অ্যান্ডার্স অ্যাপোলো ৮-এ তোলা তাঁর বিখ্যাত আর্থরাইজ ছবির মাধ্যমে আমাদের গ্রহ ও নিজেদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি চিরতরে বদলে দিয়েছেন। তিনি আমাকে ও নতুন প্রজন্মের মহাকাশচারী এবং অনুসন্ধানকারীদের অনুপ্রাণিত করেছেন।’
১৯৩৩ সালের ১৭ অক্টোবর হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন উইলিয়াম অ্যান্ডার্স। শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটান যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। অ্যানাপোলিসে অবস্থিত মার্কিন নৌবাহিনী একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। যেখানে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসায় যোগ দান করেন। ১৯৬৮ সালের ২১ ডিসেম্বর, অ্যাপোলো ৮ মহাকাশযানে করে ফ্র্যাঙ্ক বোরম্যান ও জিম লোভেল সঙ্গে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এটি ছিল মানুষসহকারে চাঁদের কক্ষপথে যাওয়ার প্রথম ঘটনা।
মহাকাশে অবস্থানকালে নভোচারী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল মহাকাশযান ও চাঁদের বিভিন্ন ছবি তোলা। একদিন মহাকাশে হঠাৎ তিনি পৃথিবীকে খেয়াল করেন। সেই মুহূর্তে তিনি পৃথিবীর একটি অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পেলেন, যা আগে কখনো দেখেননি। নীল গ্রহটি মহাকাশের কালো পটভূমিতে ভাসমান। যেন এক অমূল্য রত্ন। পৃথিবীর এই বিখ্যাত ছবি তোলেন, যা ‘আর্থরাইজ’ নামে পরিচিতি পায়। মিশনটি মানব ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই ছবির মাধ্যমে পৃথিবীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে করতে তিনি সাহায্য করেছেন। দিন-রাতের বিষয়টি এই ছবিতে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।
চাঁদের কক্ষপথে অ্যাপোলো ৮ মিশন সম্পন্ন করার পর নভোচারী উইলিয়াম অ্যান্ডার্স একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: ‘চাঁদের অনুসন্ধানে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম, কিন্তু মহাকাশের অসীমতার মধ্যে আমরা পৃথিবীকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি