সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক কে

সম্প্রতি শনির ৬২টি নতুন চাঁদ আবিষ্কার করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাইওয়ানের অ্যাকাডেমিয়া সিনিকা ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস-এর পোস্টডক্টোরাল ফেলো এডওয়ার্ড অ্যাশটন এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল সন্ধান দেন এসব চাঁদের। এ গবেষণায় আরও সহযোগিতা করে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। ফলে সৌরজগতে সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক এখন শনি গ্রহ। আগে শনির চাঁদ ছিল ৮৩টি। নতুন ৬২টি চাঁদ খুঁজে পাওয়ায় এখন এই গ্রহের মোট চাঁদের সংখ্যা ১৪৫। শনি এখন সৌরজগের প্রথম ও একমাত্র গ্রহ, যার ১০০টির বেশি চাঁদ আছে।

আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল আবিষ্কার করেছে শনির নতুন চাঁদগুলো। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে হাওয়াইয়ের মাউনা কেয়ার শীর্ষে থাকা কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে নতুন ৬২টি চাঁদ শনাক্ত করা হয়েছে। চাঁদগুলোর দৈর্ঘ্য খুব বেশি নয়। এদের মধ্যে কয়েকটি চাঁদের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের চেয়ে কম।

নতুন আবিষ্কৃত ৬২টি চাঁদের সব কটিই অনিয়মিত। অর্থাৎ, শনি গ্রহের চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘোরে। এ ছাড়া এ ধরনের উপগ্রহগুলো ঘোরে শনি গ্রহের বিপরীত দিকে। নতুন চাঁদগুলোর মধ্যে কিছু চাঁদ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে দেখা গিয়েছিল। তবে সে সময় মনে করা হয়েছিল, এগুলো হয়তো গ্রহাণু।

সূর্যের চারপাশে ঘোরে এমন বস্তুকে বলা হয় গ্রহ। অবশ্য কোনো বস্তুকে গ্রহ হওয়ার জন্য সূর্যের চারপাশে ঘোরার পাশাপাশি আরও কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন ওই বস্তুর নির্দিষ্ট ভর থাকতে হবে, যেন মাধ্যাকর্ষণের টানে সেটি গোলাকার হয়। অন্য গ্রহের কক্ষপথ থেকে ওই বস্তুর কক্ষপথ হতে হবে আলাদা। এসব শর্ত মেনে কোনো বস্তু সূর্যের চারপাশে ঘুরলে তাকে গ্রহ বলা যাবে। আর উপগ্রহ বলতে সেসব বস্তুকে বোঝায়, যারা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘোরে। তাই চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।

মাত্র চার মাস আগেও সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক ছিল শনিই। কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বৃহস্পতি গ্রহের নতুন ১২টি চাঁদ আবিষ্কার করায় শনি পেছনে পড়ে যায়। ৯২টি চাঁদ নিয়ে সৌরজগতের শীর্ষ চাঁদের মালিক ছিল এত দিন গ্রহরাজ বৃহস্পতি। চার মাসের ব্যবধানে শনি তার শীর্ষত্ব ফিরে পেয়েছে।

আমাদের সৌরজগতে এ রকম চাঁদ আছে ২০০টির বেশি। বর্তমানে শনির চাঁদের সংখ্যা ১৪৫, বৃহস্পতির ৯২, ইউরেনাসের ২৭, নেপচুনের ১৪, মঙ্গলের ২ এবং পৃথিবীর রয়েছে একটি চাঁদ। আর বুধ ও শুক্র গ্রহের কোনো চাঁদ নেই।

অবশ্য বৃহস্পতি ও শনির চারপাশে এমন আরও অনেক উপগ্রহ আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ’-এর মতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি গ্রহের তিন কিলোমিটারের মধ্যে এমন আরও কয়েক টন পাথুরে বস্তুর খোঁজ পেয়েছেন। তবে এখনো তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করা যায়নি সেগুলো সম্পর্কে। আসলে এগুলো শনাক্ত করা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিংও বটে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত টেলিস্কোপের সাহায্যে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালে জুসি ও ক্লিপার নামে দুটি মহাকাশ অভিযান পরিচালনার কথা আছে। এই অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হলে ওই পাথুরে বস্তু সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও আইএফএলসায়েন্স