খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিল মেয়েটি। তার নাকি একদম ভালো লাগেনি সেখানে। এত মানুষ, এত হইইচই, কী ভয়ানক ব্যাপার! ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে একদিন রং-তুলি হাতে নিল মেয়েটি। আজ তার বাড়িভর্তি বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পাওয়া অর্ধশতাধিক পুরস্কার।
বলছিলাম ফারহানার কথা। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, শিশু একাডেমী, কচিকাঁচার মেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ আরও অনেক প্রতিযোগিতায় ছবি এঁকে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে সে। এসব আয়োজনের রচনা প্রতিযোগিতায়ও তার রয়েছে ডজনখানেক পুরস্কার। পিছিয়ে নেই আবৃত্তি, হাতের লেখা, দেয়াল পত্রিকা আর উপস্থিত বক্তৃতায়ও।
এ তো গেল সৃজনশীলতায় অর্জনের কথা। মেধার জোরেও কিন্তু টেকা মুশকিল তার সঙ্গে। ছোটবেলা থেকে প্রায় প্রতিবছর বিভিন্ন সংস্থা থেকে পেয়ে আসছে মেধাবৃত্তি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে সে। গ্রামীণফোন-প্রথম আলো আই-জেন ২০১৫-তে স্কুল পর্যায়ে দ্বিতীয় হওয়ার পর টিম লিডার হিসেবে অংশ নিয়েছে রিজিওনাল ক্যাম্পে। জাতীয় সৃজনশীল মেধা অন্বেষণে পরপর দুবছর নির্বাচিত হয়েছে সিলেট মহানগর অঞ্চলের সেরা মেধাবী হিসেবে। গত বছর বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হয়েছে ই-অলিম্পিয়াডে। জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াড ২০১৬, জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ২০১৭ ও জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের তিনটি আসরে পেয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরস্কার। বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একাধিক গ্রুপে। জাতীয় আর্থ অলিম্পিয়াড ২০১৭-তে বিজয়ী হয়ে পেয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থ অলিম্পিয়াডের ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ। একই বছর জাতীয় ইংলিশ অলিম্পিয়াডে কাজ করেছে ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর হিসেবে। সেই সঙ্গে লিডিং ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ছায়া জাতিসংঘে পেয়েছে ভার্বাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড।
একসময় মানুষ দেখে ভয় পাওয়া মেয়েটি কিন্তু এখন প্রচণ্ড মিশুক। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তার অর্জন কেবল পুরস্কার নয়, নতুন নতুন বন্ধুও! ভীষণ পড়ুয়া মেয়েটি রাস্তায় ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলতে নেমে পড়ত মাঝেমধ্যেই। পারদর্শী সাইকেল চালাতে আর সাঁতার কাটতে। এসএসসি পরীক্ষার পর সাইকেল স্ট্যান্ট শিখতে ইচ্ছুক সে। বড় হয়ে এখন আদর্শ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে তার।
ফারহানারসাক্ষাৎকার
প্রশ্ন :
অবসরের সঙ্গী...
বই। আসলে সব সময়েরই সঙ্গী বই, খেতে বসলেও!
প্রশ্ন :
প্রিয় লেখক...
হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রশ্ন :
প্রিয় কবিতা...
কবিগুরুর ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’
প্রশ্ন :
কেউ বই ধার চাইলে...
আমি দিতে চাই না, যদি ফেরত না দেয়! মা লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়ে দেয় তবু।
প্রশ্ন :
তোমার শক্তি আর দুর্বলতা...
শক্তি হলো সহজে সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারার ক্ষমতা। আর দুর্বলতা হলো আমি খুব আবেগপ্রবণ, সহজে কেঁদে ফেলি!
প্রশ্ন :
যখন কেউ সমালোচনা করে...
আগে খুব রাগ লাগত। এখন ইতিবাচকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন :
যদি লটারি জিতি...
বাড়িভর্তি বই কিনব!
প্রশ্ন :
স্কুলের ভালো লাগা খারাপ লাগা...
ভালো লাগে সকালে সমাবেশে একসঙ্গে হাত-পা নেড়ে স্কুলের থিম সং গাওয়া। আর খারাপ লাগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষকদের তেমন সাহায্য না পাওয়া।
প্রশ্ন :
গোপন ইচ্ছা...
আমার গান শেখার খুব শখ। কিন্তু গানের গলা এতই বাজে যে গাইতে চেষ্টা করলেই বন্ধুরা কানে আঙুল দেয়!
প্রশ্ন :
যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বিরক্ত লাগে...
‘তুমি এত ভালো রেজাল্ট কীভাবে করো?’